অনলাইন প্রতারণা : পার্সেলে ছেঁড়া কাপড় পাঠিয়ে মাসে আয় ৩৫ লাখ টাকা

আগের সংবাদ

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৭ জনের প্রাণহানি : স্পিডবোট ডুবিতে নিখোঁজ তিন, বাড়িঘর-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

পরের সংবাদ

কার্টুনের বোকা কুকুর

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিনহাজ কার্টুন দেখতে ভালোবাসে। সে সারাদিন মোবাইলে কার্টুন দেখে। এজন্য মা তাকে অনেক বকাঝকা করেন। কিন্তু মিনহাজ কার্টুনের নেশা ছাড়তে পারে না। সে সুযোগ পেলেই কার্টুন দেখতে বসে যায়। যখন যার মোবাইল পায় সেই মোবাইল দিয়েই সে কার্টুন দেখে। সে এমবি টেমবি বোঝে না। মোবাইল পেলেই সে কার্টুন দেখে। ফলে দেখা যায়, জরুরি কোনো কাজে মোবাইলে এমবি কিনে কিছুক্ষণ পরই মা এসে দেখেন এমবি শেষ। তখন মিনহাজের ওপর খুব বিরক্ত হন মা। বকাঝকা করেন।
মিনহাজ প্রায়ই কার্টুন দেখতে দেখতে মোবাইলের টাকা শেষ করে ফেলে। বাবা তবুও তাকে কিছুই বলেন না। না বলার একটাই কারণ। কারণটা হচ্ছে, মিনহাজ যতই কার্টুন দেখুক না কেন, সে বরাবরই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে। এই রেজাল্ট ভালো করার জন্যই মিনহাজ বাবার কাছ থেকে ছাড় পায়।
মা বকতে আসলে মিনহাজের বাবা বলেন, ওকে বকাঝকা করো না। ও রেজাল্ট ভালো করে। পড়াশোনা করে। বাচ্চা বয়সে একটু আধটু কার্টুন দেখবেই।
মিনহাজ বাবার কথায় সুযোগ পায়। সময় পেলেই সে কার্টুন দেখতে বসে যায়। নতুন নতুন কার্টুন মিনহাজের দেখতে অনেক ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে কুকুরের মতো দেখতে একটা কার্টুন। কুকুরটা বোকা। সে শুধু ভুল করে। কোনো কাজই সে ঠিক মতো করতে পারে না। তাকে যেই কাজই দেয়া হোক না কেন, সে কোনো কাজই ঠিক মতো করতে পারে না।
মিনহাজের মাঝে মাঝে মনে হয় মোবাইলের ভিতর গিয়ে যদি সে কুকুরটাকে বুঝাতে পারত। এত বোকা কেন কুকুরটা? এত বোকা হলে চলে! মিনহাজ প্রায়ই চিন্তা করে সে মোবাইলে ঢুকে যাবে। কুকুরটাকে বুঝিয়ে আসবে যে, সে যা করছে তা বোকামি।
মিনহাজ মোবাইলে ঢুকতে পারে না। কুকুরটার বোকামিতে শুধু বিরক্ত হয়। এত বোকা কুকুর সে জীবনে কোনোদিন দেখেনি। আজ সকালেও সে কার্টুনে কুকুরটার বোকামি দেখছে। মনে মনে ভাবছে কুকুরটাকে যে করেই হোক বের করতে হবে। ওকে ওর বোকামি ধরিয়ে দিতে হবে। যতক্ষণ সে কুকুরটার বোকামি ধরিয়ে দিতে না পারবে ততক্ষণ তার শান্তি নেই। কুকুরটাকে যে করেই হোক কার্টুন থেকে বের করতে হবে।
হঠাৎ করে সে অনুভব করে কুকুরটা মোবাইলের কার্টুন থেকে বের হয়ে গেছে। কুকুরটা তার সামনেই হাঁটছে। ঘেউ ঘেউ শব্দ করছে। মিনহাজ কুকুরকে চরম ভয় পায়। বাস্তবের কুকুরের সামনেই সে কখনো যায়নি। মিনহাজ ভয়াবহ ভয় পেয়ে যায়। কার্টুন থেকে যে বোকা কুকুর বের হয়ে এসেছে সে বোকামি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। সে এমন বোকা বোকা আচরণ করতে থাকলে মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাবে। মা তখন উঠতে-বসতে বকা দেবেন।
মিনহাজ তাই বোকা কুকুরটাকে বাসার একটা ড্রয়ারে রেখে দেয়। মাকে কিছুই জানায় না। মিনহাজের এখন একটাই চিন্তা- এই কার্টুন কুকুরকে যে করেই হোক মোবাইলের ভিতরে ঢুকাতে হবে। কারণ বাসার কেউ তাকে পছন্দ করবে না। বাসার সবাই কুকুর ঘৃণা করে। কোনো কুকুর বাসার সামনে আসলেই তাড়িয়ে দেয়। এলাকার যে কুকুরগুলোকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় তারা অনেক চালাক। মিনহাজ দেখেছে, সত্যিকারের কুকুরগুলোকে দৌড়ানি দিলে তারা দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে পালিয়ে যায়। কিন্তু কার্টুন কুকুর দৌড়াতে পারে না। সে শুধু মোবাইলের কার্টুনেই দৌড়াতে পারে। বাস্তবে বের হয়ে সে দৌড়াতে পারে না।
মিনহাজ কার্টুন কুকুরটাকে রেখেছে একটা ড্রয়ারে। সে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ড্রয়ারটা দেখে যায়। আবার স্কুল থেকে ফিরে ড্রয়ারটা দেখে। হঠাৎ করেই মিনহাজের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সে আর মোবাইলে কার্টুন দেখে না। সারাদিন ড্রয়ার খুলে বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলে না। ড্রয়ার খুলে বোকা কুকুরটার সঙ্গে সারাদিন খেলাধুলা করে। মিনহাজই শুধু বুঝতে পারে যে, এই বাসায় কার্টুনের একটা বোকা কুকুর আছে। যে মোবাইল থেকে বের হয়ে গেছে।
মিনহাজের মা একদিন ড্রয়ারটা পরিষ্কার করেন। ময়লা-আবর্জনা যা ছিল তা ফেলে দেন। মিনহাজ স্কুল থেকে এসে দেখে ড্রয়ারটা পরিষ্কার করা। তাই কাঁদতে থাকে। চিৎকার করে বলতে থাকে- আমার বোকা কুকুর… আমার বোকা কুকুরটা কই…।
মিনহাজের মা অবাক হন। তিনি বলেন, বাবা তোমার বোকা কুকুর মানে?
মিনহাজ কেঁদে কেঁদে বলে, মা তুমি আমার বোকা কুকুরটাকে মেরে ফেলছ। বোকা কুকুরটা মারা গেছে। সে আমার সঙ্গে খেলত। গল্প করত। তুমি তাকে মারলে কেন?
মা মিনহাজের কোনো কথাই বুঝতে পারেন না। বাবা বাসায় ফিরলে মিনহাজ কাঁদতে কাঁদতে তার কোলে উঠে। অভিযোগের সুরে বলে, জানো বাবা? মা আমার বোকা কুকুরটা মেরে ফেলেছে।
বাবা সান্ত¡না দিয়ে বলেন, তাই বুঝি? যদি তোমার বোকা কুকুরটাকে মেরে ফেলে তাহলে খুব খারাপ কাজ করেছে। কোনো প্রাণীকেই মারা উচিত নয়। শুধু শুধু একটা প্রাণীকে মারবে কেন? তোমার মাকে বকে দেব।
এবার একটু শান্ত হয় মিনহাজ। এবার বাবা বলেন, তোমার বোকা কুকুরটা দেখতে কেমন? আমাকে দেখাবা?
মিনহাজ হাসি মুখে বলে, দেখাব। তোমার মোবাইলটা দাও।
বাবা মিনহাজকে মোবাইল দেয়। মিনহাজ কার্টুনটা দেখে। চিৎকার করে বলে, বাবা বোকা কুকুরটা মরেনি। সে আবার মোবাইলে ঢুকে গেছে। এরপর সে মোবাইলের মরিটরে তাকিয়ে বলতে থাকে, এই বোকা কুকুর, তুমি আমাকে কেন কাঁদিয়েছ? আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম। তুমি মোবাইলে ঢুকে গেছ আমাকে বললেই পারতা। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। তোমার সঙ্গে আড়ি। আমি আর তোমার সঙ্গে খেলব না। তোমাকে যতটা বোকা মনে করেছিলাম তুমি ততটা বোকা নও। আমাকে না বলেই তুমি আমার মোবাইলে ঢুকে গেছ। তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করি না।
ছেলের এমন কাণ্ড দেখে মিনহাজের বাবা হাসতে থাকেন। তারপর বলেন, শোন আব্বু, তুমি ওই কুকুরকে বেশি পাত্তা দিও না। যদি তুমি বেশি পাত্তা দাও তাহলে কুকুরটা তোমাকে কষ্ট দিবে। সে হারিয়ে যাবে। তাই ওই মোবাইলের বোকা কুকুরটাকে মাঝে মাঝে দেখবে। সব সময় দেখবে না।
মিনহাজ হেসে বলে, বাবা ঠিক আছে। আমি মোবাইলের কার্টুন কুকুরটাকে সব সময় দেখব না। মাঝে মাঝে দেখব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়