প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
‘আমার শুধু কান্না আসছে। আমার স্ট্রাগল তো কারো অজানা নয়। জীবনের সব সুখ আনন্দ বাদ দিয়ে থিয়েটার করেছি, নাটক করেছি। অভিনয়ে বিরতি দেইনি। এই প্রাপ্তি বোধহয় তারই ফল।’ -একুশে পদক পাওয়ার খবর জানার পর এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অভিনেতা মাসুম আজিজ। নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, প্রয়াত গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু, অভিনেতা আফজাল হোসেনসহ এবার ২৪ জন একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২২ সালের জন্য মনোনীতদের নাম জানানো হয়েছে; যার মধ্যে সর্বোচ্চ সাতজন মনোনীত হয়েছেন শিল্পকলা থেকে। এ বছর নৃত্যের জন্য মনোনীত হয়েছেন জিনাত বরকতউল্লাহ; স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্য চর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। নৃত্যের পাশাপাশি আশির দশকের শুরু থেকে অভিনয় করেছেন জিনাত। জিনাত ও তার স্বামী বাংলাদেশের টেলিভিশনের প্রযোজক প্রয়াত মোহাম্মদ বরকতউল্লাহর সংসারে দুই মেয়ে বিজরী বরকতুল্লাহ ও কাজরী বরকতুল্লাহ। সংগীতের জন্য মনোনীত হয়েছেন গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর); ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’সহ কয়েকটি দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা তিনি। সংগীতে বাবুর সঙ্গে মনোনীত হয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও গণসংগীতশিল্পী ইকবাল আহমেদ। যিনি স্বাধীনতার জন্য গান গেয়ে পাকিস্তানিদের রোষানলে পড়েছিলেন; পাকিস্তানিদের অমানবিক নির্যাতনের মুখেও পড়তে হয়েছিল তাকে। ১৯৭০ সালে এইচএমভির ব্যানারে প্রকাশিত ইকবাল আহমেদের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ‘জানি জানি গো’ টপচার্টে উঠে এসেছিল। তাদের সঙ্গে এবার পদক পাচ্ছেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু; যিনি বেনু ভাই নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, মুক্তাঞ্চল ও শরণার্থী শিবিরে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণায় ভূমিকা রেখেছেন ও শরণার্থী শিবিরের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য একুশে পদকে মনোনীত তিনজনের মধ্যে একজন খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর); আশির দশকে মঞ্চনাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে যাত্রা করেন তিনি। নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে দেওয়ান গাজীর কিসসা, নূরুল দীনের সারাজীবন, দর্পণসহ ৩০টির বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন পুতুল খেলা, ক্ষুধিত পাষাণসহ ১০টির বেশি নাটক। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক তার স্ত্রী। কণ্ঠশিল্পী ফারহিন খান জয়িতা তাদের সন্তান। টেলিভিশনে হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ ও ইমদাদুল হক মিলনের ‘রূপনগর’- এ অভিনয় করে সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পান তিনি। রূপনগর নাটকে ‘ছি, ছি, তুমি এত খারাপ’ সংলাপটি সেই সময় দর্শকদের মুখে মুখে ফিরত। ২০১৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খালেদ খান মারা যান। অভিনয়ের জন্য মনোনীত হয়েছেন আফজাল হোসেন; সত্তরের দশকের মাঝামাঝির দিকে থিয়েটারে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তার। পরবর্তীতে বিটিভিতে নাটকে অভিনয় করে দর্শকমহলে পরিচিতি পান। মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা মাসুম আজিজকে একুশের পদদের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। মাসুম আজিজ বলেন, ‘আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আমি এই আনন্দ ভাষায় বোঝাতে পারব না। সরকারকে ধন্যবাদ। অভিনয়ের জন্য আমি অনেক সংগ্রাম করেছি। জীবনের সব বাদ দিয়ে থিয়েটার করেছি। সেই স্বীকৃতি পেলাম।’
:: হেমন্ত প্রাচ্য
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।