কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

খননকাজ শুরু : এলাকায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে লস্যিধারা খাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খাঞ্জার হাওরের লস্যিধারা খালটি ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় ছয়শ মিটার দীর্ঘ এই খালটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। খাল দখল হয়ে যাওয়ায় কোদালিছড়া সঙ্গে সংযোগ বন্ধ হয়ে খালটি অস্তিত্ব হারায়। একসময় এই খালে নৌকা চলত। খালের পানি মানুষ নানা কাজে ব্যবহার করত। স্থানীয় কৃষকদের অনুরোধে জেলা প্রশাসন দখল ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া খালের সীমানা চিহ্নিত করে দিলে খননকাজ শুরু হয়। প্রথম দিনেই গুঁড়িয়ে দেয়া হয় অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা। এস্কেভেটর দিয়ে প্রতিদিনই খননকাজ চলছে। ইতোমধ্যে ভরাট হওয়া খালটি পুরোনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে।
গতকাল খাল খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা রহমান বাঁধন, মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ, গিয়াসনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোশারফ টিটু, কৃষি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সাংবাদিকদের বলেন, দখলের কারণে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। ফলে বোরো ফসল চাষাবাদ ব্যাহত হয়। তাই এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি পূরণে খালটি পুনরুদ্বার করে খনন শুরু হয়েছে। এতে এই এলাকায় কৃষিতে বিল্পব ঘটবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, কৃষকদের দাবি ছিল আমাদের পানি দিন, আমরা ফসল দেব। তাই কৃষকদের সেচ সহায়তার জন্য পুরনো খালটি পুনরুদ্ধার করে এই এলাকার অনাবাদি জমি বোরো চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। খালটি খনন করা গেলে পুরো এলাকায় সেচের আওতায় আসবে এবং এক ফসলি জমিতে তিনটি ফসল চাষ হবে। যেটা এলাকাবাসীর জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনা। এতে শত শত কৃষক পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় কোদালিছড়ার সঙ্গে সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে পানি নিষ্কাশন ও বোরো মৌসুমে সেচকার্যে ব্যবহৃত হয়। দখলদারদের কবলে থাকা প্রায় ৫শ মিটার খালটি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধারের উদ্যোগ নেন স্থানীয় জনগণ। খাল পুনরুদ্বারে এটা একটি মাইল ফলক হবে।
মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ ও গিয়াসনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোশারফ টিটু বলেন, এলাকাটি ধান এবং মাছের প্রাকৃতিক উৎসস্থল। কিন্তু হাওরের পানি প্রবাহের খালসহ জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে জমি চাষ করা যাচ্ছিল না। মাছের প্রাকৃতিক উৎসস্থলগুলোও বিলীন হতে থাকে। এই খাল খনননে দুই ইউনিয়নের প্রায় ৭শ থেকে ৮শ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ সহজ হবে। আবার মাছের প্রাকৃতিক উৎসস্থল সৃষ্টি হবে । এতে দুই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পরিবার উপকৃত হবে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লস্যিধারা খাল মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ও গিয়াসনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে সীমানা এলাকা থেকে কোদালীছড়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রায় দুই হাজার ফুট দীর্ঘ এই খাল কোথাও প্রায় ৩৫ ফুট আবার কোথাও ৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল। একসময় নৌকা চলাচল করত এই খালে। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় লোকজন খাল দখল করতে শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ভরাট হয়ে যায়। আজমেরু গ্রামের একলিম মিয়া বলেন, আমরা নানা গৃহস্থালি কাজে এর পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন সেই খাল দেখে বোঝা মুশকিল, এটা খাল না জমি। যার কারণে আমরা এলাকার ২০ থেকে ২৫ পরিবার চাষাবাদ করা ছেড়েই দিয়েছি। খালটি আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে গেলে বোরো চাষ করতে পারব।
ভুজবল গ্রামের সুনীল কুমার দাশ বলেন, দখলমুক্ত করে খাল খননের জন্য আমরা অনেক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আগে কোনো উদ্যোগ নেননি কেউ। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। মাত্র চার পরিবারের দখলমুক্ত হলে শতাধিক কৃষক পরিবার উপকৃত হবে। এতে আমরা শুধু উপকৃত হব না দেশ ও উপকৃত হবে।
লস্যিধারা খাল খননে বদলে যাবে খাঞ্জার হাওরের অনেকাংশের চিত্র। এক ফসলের মাঠ তিন বা চার ফসলে রূপ নেবে। উচ্চফলনশীল জাতের ধানের পাশাপাশি স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বিরইন, ময়নাশাইল, নাজিরশাইল, বালামসহ নানা জাতের ধান উৎপাদন হবে। রবিশস্য, শাকসবজি, গম-ভুট্টা ফলবে। তৈরি হবে কই-শিং-মাগুর-শোল-পুঁটি-টেংরা-বোয়াল মাছের প্রাকৃতিক উৎস। পশুপাখি আর উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের মেলা বসবে। এই কৃষি মাঠের টানে হাওরে আসবে শিক্ষিত-তরুণ কৃষক ও কৃষি উৎপাদক। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক আর স্থানীয় মানুষের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়