লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার : নাম ও পেশা বদলে ২০ বছর আত্মগোপনে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ২০ বছর ধরে নানা ছদ্মবেশে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কখনো হয়ে যান উদ্বাস্তু, কখনো নিরাপত্তাকর্মী আবার কখনো বাবুর্চির বেশ ধারণ করেন। কিন্তু তার আসল পরিচয়, তিনি সৈয়দ আহমেদ- একজন সিরিয়াল কিলার। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আলোচিত ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। কোনো ধরনের মোবাইল ব্যবহার করতেন না, এমনকি পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগও করতেন না তিনি। নিজের নাম পরিবর্তন করে দুইটি আইডি কার্ডও তৈরি করেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ২০ বছর পর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন সৈয়দ আহমেদ (৬০)।
গতকাল শুক্রবার সকালে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে র‌্যাব জানায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ সকালে জানে আলমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় ছেলে তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই বিচারিক আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সৈয়দ আহমেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ৮ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেন। আপিলে সৈয়দ আহমেদসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২ জনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের খালাস দেয়া হয়। এর আগে ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর নিহত জানে আলমের আপন ছোট ভাইকেও একইভাবে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠিসোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছিল। ওই মামলাতেও সৈয়দ আহম্মেদ ২ নম্বর আসামি ছিলেন। এ মামলার রায় হবে আগামী মাসে।
র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের পর সৈয়দ আহমেদকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার পলাতক জীবন সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, জানে আলম হত্যাকাণ্ডের পরপরই তিনি বাঁশখালীর ডাকাত দলের সঙ্গে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আত্মগোপন করেন। প্রথম চার থেকে পাঁচ বছর তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন ছেড়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার সাগর কূলবর্তী এলাকায় থাকতে শুরু করেন। পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় উদ্বাস্তু হিসেবে অবস্থান করেন। একপর্যায়ে তিনি জঙ্গল ছলিমপুরে মশিউর বাহিনীর প্রধান মশিউরের ছত্রচ্ছায়া ও সহযোগিতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে ওই এলাকায় থাকা নিজের জন্য নিরাপদ মনে করছিলেন না সৈয়দ আহমেদ। এবার তিনি চট্টগ্রামে বিভিন্ন মাজার এলাকায় বাবুর্চির কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে সৈয়দ আহমেদ নগরের আকবর শাহ থানা এলাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে কাজ নেন। তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। র‌্যাব-৭’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, পলাতক থাকাকালে সৈয়দ আহমেদ দুটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানান। তিনি তার পরিবার-পরিজন-আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। ফলে তাকে কোনোভাবেই শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। ২৭ জানুয়ারি রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সৈয়দ আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সৈয়দ আহমেদ লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ এলাকার মৃত ইয়াকুব মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার সৈয়দ আহমেদকে লোহাগাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়