লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

বিশিষ্টজনদের অভিমত : চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের। এই দাবিতে তরুণরা আন্দোলন করছে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন। করোনার সংকট এই দাবিকে আরো জোরদার করেছে। শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে যৌক্তিক মনে করেন বিজ্ঞজনরা। তারা মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট যুগে অবস্থান করছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ৬৬ দশমিক শূন্য ৩ ভাগ জনসংখ্যা ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি এবং কর্মক্ষম। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ এখন প্রায় ৬৭ ভাগ মানুষ কর্মক্ষম। এটা আমাদের জন্য সুবিধা। এই সুবিধার ব্যবহার করতে হবে। এই সময়টি থাকবে না। ২০৩৫ সালের পর বৃদ্ধের হার বাড়তে থাকবে। কাজ করতে অক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়বে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। এই আয়ু এখন প্রায় ৭৩ বছর। গড় আয়ু বাড়ার ফলে বয়স্ক কর্মক্ষমও বাড়ছে। আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী এখন প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ বছর পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকছে। এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো দরকার। অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। তাই এই দুই শ্রেণিকে কাজে লাগাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স যেমন বাড়ানো দরকার। তেমনি অবসরের বয়সও বাড়ানো দরকার।
করোনায় বাংলাদেশের চাকরিপ্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ নিয়োগ পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা বয়স হারাচ্ছেন। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। এই করোনার সময় কমপক্ষে দুই লাখ চাকরিপ্রার্থী তাদের চাকরির বয়স হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো যেতে পারে। করোনা বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নেয়া জরুরি। তবে বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঠিক সময়ে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করাও জরুরি।
সাধারণভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে কর্মসংস্থান হয় সর্বোচ্চ ১৬ লাখ মানুষের। যারা বেকার থাকেন তাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। তারা মনে করেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ালে তাদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর গড় আয়ু যেহেতু বাড়বে, তাই প্রবেশের সময়সীমাও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে এই করোনাকালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো খুব জরুরি।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো যৌক্তিক মনে করলেও অবসরের বয়সসীমা না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ঝুলন ধর। তিনি বলেন, যদি স্বাভাবিক নিয়মে সরকারি চাকরিতে নিয়মিত নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। করোনার কারণে সরকারি, বেসরকারি প্রায় সার্কুলার বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতেই ২৫-২৬ বছর হয়ে যায়। ফলে পড়াশোনা শেষে চাকরি শুরু করতেই বয়স শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া অনেক কর্মক্ষম তরুণ রয়েছে। তাই সব ধরণের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে অবসরের বয়স যুক্তিসঙ্গত হবে না। এই বয়স বাড়ালে পদ শূন্য হতে দেরি হবে।
স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করা হয় ২৭ বছর। ১৯৯১ সালে ৩০ বছর পর্যন্ত করা হয়। দুই বছর আগে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ থেকে ৩৫ এবং অবসরের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করার। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়নি। করোনা বিবেচনায় সাময়িক দুই দফা বয়স ছাড় দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে জাতীয় সংসদের সেই সময়ের স্পিকার এডভোকেট আব্দুল হামিদ নিজেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার প্রস্তাব করেছিলেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ সাধারণ বয়সসীমা ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক আর বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর। ২০১১ সালে চাকরি থেকে অবসরের সাধারণ বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে তা ৬০ বছর করা হয়। একই বয়সসীমা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও অনুসরণ করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়