চট্টগ্রামে রিকশা-বাসের সংঘর্ষে যাত্রী নিহত

আগের সংবাদ

ইসি গঠন বিল ‘তড়িঘড়ি’ পাস : বিএনপি ও জাপার তীব্র বিরোধিতা > সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী সদস্য

পরের সংবাদ

বিশেষজ্ঞদের অভিমত : ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু অসংক্রামক রোগে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে অপরিণত মৃত্যু বাড়ছে। যত মৃত্যু হয় তার ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই অসংক্রামক ব্যাধিতে (এনসিডি) মারা যাচ্ছেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারসহ আরো কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ মারা যায়। এসব রোগে ৩০-৭০ বছর বয়সিদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এ মৃত্যু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ১ম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলন-২০২২ এর উদ্বোধনী দিনে বিভিন্ন সেশনে বক্তরা এসব তথ্য জানান। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের পর দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনসিডিসি) প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সেশনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মোস্তফা জামান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক ডা. শামস এল আরেফিন, ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অরুন জোস, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব ও ডা. আলিয়া নাহিদ প্রমুখ। সকালে উদ্বোধন অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব হুমায়ুন কবির, পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রিজিওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপারসন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) অধ্যাপক ডা. আখতার হোসাইন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. শাহাদাত হোসেন মাহমুদ প্রমুখ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অসংক্রামক রোগ বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী। বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, ১০ শতাংশ ডায়াবেটিস ও ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে ভোগে। প্রতি বছর এ তালিকায় ৫০ হাজার যোগ হয়। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, ওজনাধিক্য, তামাকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম, ওষুধের অপব্যবহারের কারণে এনসিডি বাড়ছে। এনসিডি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অসংক্রামক রোগের বোঝা কমাতে সরকার সেক্টরভিত্তিক কার্যক্রম নিয়েছে। জাহিদ মালেক আরো বলেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগী দিয়ে ভর্তি হওয়ায় এনসিডি রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়েছে। দেরিতে সেবা নেয়ায় মৃত্যু বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তার বার্তায় বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির কারণে বাংলাদেশসহ মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এই রোগগুলোর চিকিৎসা নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে এমন ৩ জনের ১ জন কিডনি রোগে ভুগছেন। তা তারা জানে না। দেশে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জনই জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অর্ধেকের বেশি জানেন না উচ্চ রক্তচাপ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ১০০ জনের মধ্যে ৭৭ জন ওষুধ খাচ্ছে কিন্তু তাদের উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। একই অবস্থা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও। ৩৫ বছরের উপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে।
তারা আরো বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া, হার্টের নানা রকম অসুখ, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন। গবেষণায় দেখা দেখে এসব রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ না করলে চিকিৎসকের কাছে যায় না। এ কারণেই অসংক্রামক ব্যাধি মানুষের ওপর ভর করছে। সাধারণ মানুষের উচিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। যেমন- লবণ, চিনি, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বেশি না খাওয়া। তামাক পণ্য পরিহার করা।
এনসিডিসি, বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরম (বিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম এবং বাংলাদেশ হেলথ্ রিপোর্টার্স ফোরম, আইসিডিডিআরবি, ব্র্যাক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পপুলার মেডিকেল কলেজসহ ৩০টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনটিতে সহযোগিতা করছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপি, ওরবিজ ইন্টারন্যাশনাল, ট্রমা সেন্টার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল, রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যাল, নোভিস্থা ফার্মাসিউটিক্যালসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়