মোটরসাইকেল ধাক্কায় রমনায় নারী নিহত

আগের সংবাদ

উল্লাপাড়ার শুঁটকি মাছে সমৃদ্ধ হবে রাজস্ব খাত

পরের সংবাদ

‘আমি কখনো অর্থের পেছনে ছুটিনি’

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্যারিয়ারের ২৫ বছর পার করলেন অভিনেত্রী ফারজানা ছবি। দীর্ঘ এ চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন। সেসব বাধা অতিক্রম করে শোবিজে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন এই গুণী অভিনয়শিল্পী। বর্তমানে বেশকিছু সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। দীর্ঘ এ ক্যারিয়ারের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার : রেজা শাহীন
ক্যারিয়ারের ২৫ বছর পার করলেন। দীর্ঘ এ যাত্রা কেমন ছিল?
আমার জার্নিটা ভালো-মন্দ মিলেই ছিল। সুখের স্মৃতি যেমন ছিল তেমনি প্রতিবন্ধকতাও ছিল। তবে যখনই আমার ক্যারিয়ারে কোনো প্রতিবন্ধকতা এসেছে আমি চেষ্টা করেছি সেটিকে নিজের আয়ত্তে এনে পরিচালনা করতে। প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেনি, মনে করেছি এটা জার্নির একটা অংশ। আমি কখনো থেমে যাইনি। অনেকেই বলে, অভিনয়শিল্পীরা মা হওয়ার পর হারিয়ে যায়, কাজ থেকে পিছিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে সে রকমটি ঘটেনি। আমি বরং সেটি আনন্দের সঙ্গে নিয়েছি। আমার দুই সন্তান। সন্তানকে নিয়ে আমার ক্যারিয়ারের সেকেন্ড ইনিংস শুরু হয়েছে। আমার সন্তানের যখন তিন মাস বয়স আমি তখন থেকেই আবার কাজ শুরু করেছি। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত আমার বাচ্চারা আমার সঙ্গে শুটিংয়ে গিয়েছে। তবে মা হওয়ায় পর প্রথমদিকে কাজের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল, কারণ তখন আমি আমার বাচ্চাদের পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি। এখন আবার নিয়মিত কাজ করছি।

দুই যুগের ক্যারিয়ারে কোনো
অপূর্ণতা আছে কি?
আমার পেশাটা শুধু অর্থ উপার্জন সংশ্লিষ্ট পেশা নয়, আমার পেশাটার সঙ্গে আত্মতৃপ্তি খুব অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অপূর্ণতা শব্দটা একজন শিল্পীর জীবনের একটা অনুষঙ্গ। একটি ছবিতে অভিনয় করার পর মনে হচ্ছে আমি যেভাবে অভিনয় করেছি সেভাবে না করে অন্যভাবে করা যেত। যখন কাজটা প্রচার হচ্ছে তখন আমার অনেক ভুল-ত্রæটি চোখে পড়েছে, এটা একটা অপূর্ণতা। অনেক চরিত্রে অভিনয় করতে চাই যে চরিত্র এখনো আমি পাইনি, এটা আরেকটা অপূর্ণতা বলা যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে, আমি কোনো একটা চরিত্রকে নিয়ে খুব ভেবেছি। চরিত্রটি সুন্দর করে নিজের মতো করে সাজিয়েছি কিন্তু শুটিংয়ে গিয়ে দেখলাম পরিচালক কিংবা আমার টিম অতটা সিরিয়াসলি কাজটাকে নিচ্ছে না কিংবা অতটা যতœ করে করছে না। তখন অপূর্ণতা তৈরি হয়। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি যেভাবে নিজেকে ভেবেছি, আমার মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে যেভাবে আমার অভিনয়কে দেখেছি আমি কর্মক্ষেত্রে সব সময় নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। তবে এতসব অপূর্ণতার মধ্যেও পূর্ণতার গল্প আছে। আমি এত অজস্র বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছি, সুযোগ পেয়েছি যা হয়তো অনেক অভিনয়শিল্পী পাননি।

‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ সিনেমায় আপনার চরিত্রটি
সম্পর্কে জানতে চাই
‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ সিনেমায় আমার চরিত্রটির নাম হচ্ছে পম্পা দাস। পম্পা দাস চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের আর্ট কলেজ শিশুস্বর্গের একজন শিক্ষিকা। এস এম সুলতানের বিভিন্ন চিত্রকর্মের সঙ্গে দর্শকের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে এবং দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা পম্পা দাস তুলে ধরে। আমার কাছে এ রকম একটি চরিত্র অর্থবহ মনে হয়েছে।

১৯৯৮ সালে শোবিজে আপনার পথচলা শুরু। তখনকার কাজ আর এখনকার কাজের মধ্যে কী পার্থক্য দেখছেন?
পার্থক্যটা আসলে মোটা দাগেই দেখা যায়। তখন টিভি চ্যানেল অনেক কম ছিল। যেহেতু চ্যানেল কম ছিল সে কারণে কাজের সংখ্যা অনুযায়ী প্রত্যেকটা কাজ তখন খুব চমৎকার করে প্রচার হতো। তখনকার দর্শকরা খুব মনোযোগ দিয়ে নাটক এবং সিনেমা দেখতেন। দর্শকের অনুভূতি জানতে পারতাম আমরা। কিন্তু এখন চ্যানেল বেশি হওয়ার কারণে কাজগুলো ডিসেন্ট্রালাইজড হয়ে গেছে। অনেক ভালো মানের কাজ প্রচার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দর্শক হয়তো দেখছে না কিংবা দর্শকের নজরে পড়ছে না, এটা একটা ব্যাপার। আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েছে অনেক। সুস্থ প্রতিযোগিতার সঙ্গে কিছু অসুস্থ প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। এখন সমসাময়িক যে বিষয়টা আমার চোখে লাগে সেটি হলো, ভিউ বাড়ানোর জন্য কী কী করা যায়। আমরা যখন শুরু করেছি তখন এই বিষয়টি ছিল না। আমাদের প্র্যাকটিসটা শুরু হয়েছে অন্যভাবে। একটি কাজের পেছনে দীর্ঘ সময় দেয়া, কাজটিকে গুরুত্ব দেয়া, অনেক বেশি রিহার্সেল করা। তারপর কস্টিউম নিয়ে চিন্তা করা, ক্যারেক্টারাইজেশন নিয়ে চিন্তা করা, সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা- এই বিষয়গুলো তখনকার সময় প্রাধান্য পেত। খ্যাতির নেশাটা তখন ছিল না। এখন কোন নাটকের কত ভিউ, কোন আর্টিস্টের কত ফলোয়ার- এই বিষয়গুলো বড় করে দেখা হয়। ভিউর চক্করে পড়ে যাওয়ার কারণে আমরা অনেক অশালীন কাজকে, অশালীন সংলাপকে এবং অশালীন এক্টিভিটিজকে প্রশয় দিচ্ছি। আমরা গল্পের গঠনের দিকটি প্রাধান্য না দিয়ে সস্তা একটা আনন্দ দেয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। সুখবর হচ্ছে, ওটিটি ফ্ল্যাটফর্মগুলোতে কিছুটা ক্রিয়েটিভ কাজ হচ্ছে।

‘কানামাছি’ সিনেমায় কাজের
অভিজ্ঞতা কেমন?
‘কানামাছি’ সিনেমায় আমি ‘শিউলী’ চরিত্রে অভিনয় করেছি। শিউলী হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িত একটি মেয়ে। সে বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে, নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই সিনেমায় আমাকে ভিন্ন এক চরিত্রে দেখতে পাবে দর্শকরা। এটি গতানুগতিক কাজের চেয়ে আলাদা। এই গল্পে আমার গেটআপটা ছিল ভিন্ন।

শোবিজে টিকে থাকার জন্য কতখানি
সংগ্রাম করতে হয়েছে?
সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছি সেটিকে অন্তর থেকে ভালোবাসা। কাজের সঙ্গে প্রেম, সততা, অধ্যাবসায় এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি- এ চারটি গুণ থাকতে হবে। আপনার লক্ষ্য কী সেটি স্থির করতে হবে। আমার লক্ষ্য ছিল অভিনয়শিল্পী হওয়া। আমি পুরোদমে শিল্পী হওয়ার জার্নির মধ্যে ছিলাম, এখনো আছি। আমি কখনো অর্থ উপার্জনের নেশায় অর্থের পেছনে ছুটিনি। এসব কিছুই আমার কাজের একটা দীর্ঘ স্থায়িত্ব এনে দিয়েছে। কেউ যদি তার কাজকে ভালোবাসে এবং সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে তবে সে অবশ্যই একদিন সফল হতে পারবে। আমার জীবনে তাই ঘটেছে। আমি এখনো সমান তালে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র কাজ করে যাচ্ছি। এখনো পরিচালকরা আমার জন্য চরিত্র নির্মাণ করে। যখন পরিচালকরা ফোন করে বলে, এই চরিত্রটায় তোমাকে সময় দিতেই হবে কারণ এই চরিত্রে তোমার বিকল্প কেউ নেই তখন সত্যিই আমার গর্বে বুক ভরে ওঠে। আমি যে জায়গাটি তৈরি করতে চেয়েছি সেটি পেরেছি। এজন্য আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ প্রকৃতি যদি কাউকে সাপোর্ট না করে তাহলে একজন মানুষের পক্ষে তার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু করা কঠিন।

ওটিটিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
রিসেন্টলি আমি সিনেমার কাজে বেশি সময় দিয়েছি। আমি নাটকে কমই সময় দিয়েছি। ধারাবাহিকে কিছু কাজ করছি। ওটিটির বেশ কয়েকটি কাজ নিয়ে কথা হচ্ছে। সামনে ওটিটিতে দেখা যাবে আমাকে।

বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
এই মুহূর্তে ‘মা’ সিনেমার কাজ করছি। তাছাড়া ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ এবং ‘কানামাছি’ সিনেমার শুটিং চলছে। কায়সার আহমেদ পরিচালিত ধারবাহিক নাটক ‘বকুল ফুল’-এর কাজ করোনার কারণে বন্ধ ছিল, এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। এছাড়া ‘বউ বিরোধ’ নামে আরেকটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ করছি। সম্প্রতি হাতিম ফার্নিচারের একটি টিভিসি করেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়