এবার রাজধানীতে গাড়িচাপায় সাইকেল আরোহী নিহত

আগের সংবাদ

প্রতিকারহীন মৃত্যুর মিছিল!

পরের সংবাদ

উল্লাপাড়ার শুঁটকি মাছে সমৃদ্ধ হবে রাজস্ব খাত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মমতাজ হাসান রিটু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : চলতি বছর বন্যার পানি দেরিতে এলেও তা স্বল্প সময়ের মধ্যে নেমে যায়। ফলে বাদাই, চায়না দুয়ারী, তরি, খড়াজালসহ বিভিন্নভাবে জেলে থেকে শুরু করে সাধারণ কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে দেশীয় ছোট ছোট পুঁটি, টাকি, খলসিয়া, চাঁদা, বাইম, মৌচি, টেংরা ইত্যাদি জাতের মাছ ধরছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে সাধারণ ক্রেতার চাহিদা পূরণ শেষে চাতাল মালিকরা শুঁটকির জন্য মাছ কিনে এনে চাতালে শুঁটকি করছেন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ও বড়পাঙ্গাসী কলেজ এলাকায় ও বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এবং মোহনপুর উধুনিয়া সড়কের দুই ধারে প্রায় আড়াই যুগ পূর্ব থেকেই মাছ শুঁটকি করার চাতাল গড়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই এখানে মাছ শুকানো শুরু হয়। যা চলে ৪-৫ মাস পর্যন্ত। গত কয়েক বছরে বহুসংখ্যক চাতাল গড়ে ওঠে এই এলাকায়। চলে জমজমাট শুঁটকির ব্যবসা। এবারো চাতাল বসানো হয়েছে, প্রচুর পরিমাণে মাছও শুকানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শুঁটকি চাতাল মালিকরা জানান, প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় লাহিড়ী মোহনপুর পাইকারি মাছ বাজারের আড়ত থেকে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা শুঁটকি করার জন্য দেশীয় নানা জাতের মাছ পাইকারি দরে কিনে আনেন। পরে তা চাতালের ওপর ছড়িয়ে শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করেন। পরবর্তীতে বস্তা ও প্যাকেটজাত করে বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে জেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। উল্লাপাড়ার এই এলাকায় প্রায় ২০ জন শুঁটকির চাতাল মালিক ও ব্যবসায়ী আছেন। শুঁটকির চাতালগুলোতে সহস্রাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন, এর মধ্যে নারী শ্রমিক বেশি। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়ায় চাতালগুলোতে শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তবে শুঁটকি সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় স্বল্প লাভে শুঁটকি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে উৎপাদনকারীদের। অনেক সময় শুঁটকি নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
দেড় থেকে দুই যুগ ধরে শুঁটকি মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নজরুল ইসলাম, শাহ আলম, রফিকুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, ইউসুফ ফকির, সাচ্চু মণ্ডল, আউয়াল প্রামাণিকসহ আরো অনেকেই জানান- চাতালগুলোতে মাছ শুকানো থেকে শুরু করে বাছাইয়ের যাবতীয় কাজে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি। এরা সবাই ২০০ টাকা দিন হাজিরায় শুঁটকির চাতালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। দিন হাজিরায় কাজ করা মহিরুন নেসা, আছিয়া খাতুন জানান- তাদের সংসারে অভাব-অনটন থাকায় তা দূর করার লক্ষ্যে বাড়তি আয়ের জন্য এই মৌসুমে এখানকার শুঁটকির চাতালগুলোতে কাজ করেন। তারা পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে হেঁটে, ভ্যানে চড়ে শুঁটকি চাতালে যাতায়াত করেন।
শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী কবির শেখ ও সাচ্চু মণ্ডল বলেন, এ অঞ্চলের চাতাল থেকে প্রতি বছর ৫ থেকে সাড়ে ৫শ মণ শুঁটকি মাছ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এবার আরো বেশি শুঁটকি মাছ উৎপাদন ও বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিদ্দিক হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো উল্লাপাড়ার পশ্চিমাঞ্চলে শুঁটকি মাছের কার্যক্রম যথা নিয়মে চলছে। আমরা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক শুঁটকি উৎপাদনের কার্যক্রমের খোঁজ-খবর রাখছি। তবে এ অঞ্চলের শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের জন্য ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে উল্লাপাড়ায় শুঁটকি ব্যবসা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে। এতে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়