আছাদুজ্জামান : হাসান মোহাম্মদ নামের একজন পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন এমআরপি রি-ইস্যু করাতে। পুরনো পাসপোর্ট নম্বরসহ আবেদনপত্র যখন তিনি জমা দিলেন, তখন কম্পিউটারের তথ্যভাণ্ডারে উঠে এলো তার পূর্বের দেয়া তথ্যাবলি। সেখানে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) নাম দেখা গেল রোমান মিয়া। ফলে নতুন পাসপোর্ট পেতে দেখা দিল অনিশ্চয়তা। ঘোর বিপদে পড়ে গেলেন হাসান মোহাম্মদ ওরফে রোমান মিয়া। আবার একজন আবেদনকারী কেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন পাসপোর্ট করতে এলেন, তার কোনো কূলকিনারা না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে গেলেন পাসপোর্ট কর্মকর্তারাও। আর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এই চিত্র এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যদিনের সঙ্গী।
অনুসন্ধানে জানা গেল, এ ধরনের শত শত আবেদনের ফয়সালা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) রি-ইস্যুর কার্যক্রম ঘিরে অভিনব এ কৌশল নিয়েছেন দালালরা। যারা এ ধরনের আবেদন করছেন, তাদের অনেকেই এর আগে পুরনো পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যান। এরপর সেখানে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন; এবং পরবর্তীতে সেখানে কোনো সুবিধা করতে না পেরে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এরপর নতুন পাসপোর্ট করাতে গিয়ে তারা দালালের খপ্পরে পড়েন। দালালরা তাদের পরামর্শ দেয় ‘পাসপোর্ট হারানো গিয়েছে’ এই মর্মে থানায় জিডি করার জন্য। কথামতো পুরনো পাসপোর্ট হারানোর জিডি করে পাসপোর্ট অফিসে হাজির হচ্ছেন তারা। নিজের পুরনো পাসপোর্টের আংশিক বা সম্পূর্ণ তথ্য গোপন করে নতুন এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন।
কিন্তু আবেদন করলে হবে কি? পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারে পুরনো পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্যের অমিল দেখে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কারণ হারানো পাসপোর্টে বাহকের নাম অনুযায়ী যে ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ দেয়া হয়, সেখানে কোনো তথ্য সংশোধন করা হলে সেটি ইমিগ্রেশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ধরা পড়ে। যদিও পাসপোর্ট পেতে ব্যাকুল গ্রাহকরা সব সময় এ বিষয়ে অবগত থাকেন না। আর তাদের এই অজ্ঞতার সুযোগেই ‘নতুন পাসপোর্ট করে দেয়া ও বিড়ম্বনার সমাধান করিয়ে দেয়ার’ ফাঁদে ফেলে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। অবৈধ এ কার্যক্রমের এক পর্যায়ে দালাল লাপাত্তা হয়ে গেলে আর সমাধানের পথ খুঁজে পান না আবেদনকারীরা। দালালদের এ অপকর্মের কারণে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অহেতুক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ ফেরতরাই এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলছেন, দিন দিন এ সমস্যা বাড়ছে। এমআরপির কার্যক্রম সম্পর্কে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেই বিস্তারিত দেয়া আছে। এরপরও যদি কারো কোনো বিষয়ে জানার থাকে, তাহলে হেল্প ডেস্ক আছে। অযথা দালালের খপ্পরে পড়ে কিংবা নিজেরা অতি চালাকি করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হবেন না বলে সতর্কবাণীও দেয়া রয়েছে এ ধরনের নির্দেশনায়। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পাশাপাশি জনস্বার্থে এমআরপি রি-ইস্যুর বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগেই অসাধু একটি চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় মেতে উঠেছে। সরজমিনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে গিয়ে এমন চিত্রই দেখেছেন এ প্রতিবেদক।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস ঢাকার পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাছে অসংখ্য জিডি করা আবেদন আসছে। সেগুলো মিলিয়ে দেখার সময় দেখছি বর্তমান ও পূর্বের তথ্যে কোনো মিল নেই। এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ তথ্যের মিল রেখে আবেদন জমা দেয়া। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা আরো বলেন, আবেদনকারীর বয়স, বাবা ও মায়ের নাম পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে অবশ্যই হলফনামা দিতে হবে। আগের তথ্য বাদ দিয়ে নতুন তথ্যে পাসপোর্ট পেতে চাইলে তাকে অবশ্যই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। কিন্তু বর্তমানে হলফনামা ছাড়াই অনেক আবেদন আসছে। ফলে একদিকে যেমন তারা বিব্রত হচ্ছেন, একই সঙ্গে বিব্রত করছেন আমাদেরও।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।