ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

সূচক কমেছে ৭৮ পয়েন্ট

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যথাক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যকার মতদ্বৈততা নিয়ে বৈঠক ডাকার খবরেও পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না পুঁজিবাজার। টানা ষষ্ঠ দিনের দরপতনে সূচক নেমেছে সোয়া তিন মাসের আগের অবস্থানে, আর লেনদেন নেমেছে ৭ মাসের আগের অবস্থানে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে মতভিন্নতা, সেই সঙ্গে পৃথিবীতে করোনার নতুন ধরনজনিত কারণে নানা দেশে বিধি-নিষেধ দেয়া হচ্ছে। দুইয়ে মিলে পুঁজিবাজারে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগকারীরা বের হতে পারছে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অর্থাৎ গতকাল রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। দিন শেষে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৭৩ পয়েন্ট, যা গত ১৮ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৭৭১ পয়েন্ট। গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সূচকের টানা পতন। এ নিয়ে ছয় দিনেই সূচক পড়ল ৩১৮ পয়েন্ট। গত দুই বছরে এর চেয়ে বেশি পতন চলতি বছরের ১০ থেকে ১৯ অক্টোবর দেখা দিয়েছিল। সে সময় টানা সাত কর্মদিবস সূচক পড়ে ৩৪৭ পয়েন্ট। এর আগে গত ১৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ছয় দিন পতন হয় ৬ কর্মদিবস। দরপতনের দিন লেনদেন কমে সাড়ে আটশ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। এর চেয়ে কম লেনদেন ছিল গত ২৭ এপ্রিল। সেদিন হাতবদল হয় ৮২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
সপ্তাহের শুরুর এই পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চিড় ধরা আস্থায় আরো একটু পতন ঘটাবে সন্দেহ নেই। এর কারণ, পুরো সপ্তাহ পতন শেষে বৃহস্পতিবার খবর আসে পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি। সেই খবরে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে কিছুটা হলেও ধারণা জন্মে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি আর পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে বহুজন জানাচ্ছেন, তারা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু পদক্ষেপ বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোতে তাদের বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন জানানোর নির্দেশ দেয়া ছাড়াও শেয়ারমূল্য বেড়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগসীমা একদিনের জন্য অতিক্রম করে যাওয়ার পর বেশ কিছু ব্যাংককে জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক বন্ডে যে বিনিয়োগ করবে, তা তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে হবে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লেনদেনের তথ্যও প্রতিদিন জানানোর আদেশ এসেছে, যে আদেশ আসার পর বিএসইসি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বলেছে, এটা তারা পারে না।
ওয়ান ব্যাংকের লভ্যাংশ ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে মতভিন্নতা ছিল আগে থেকেই। সেই সঙ্গে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্য নাকি বাজার মূল্যে হবে- এ নিয়ে মতপার্থক্য প্রায় এক দশক ধরেই। বাজার মূল্য বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করায় পুঁজিবাজারে অযাচিত ক্রয়চাপ তৈরি হয় আর গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে দুই পক্ষের বৈঠক শেষে বিএসইসি জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণে রাজি হয়েছে। কিন্তু আট মাসেও সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এটা হতাশাজনক। যে পতন হয়েছে সেটা প্রত্যাশিত ছিল না। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। আমরা যে ফান্ডমেন্টাল শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের বলে থাকি, সেসব শেয়ারের দরও কমেছে। এছাড়া যেসব কোম্পানির শেয়ার বর্তমান দরে কিনলে ৬ থেকে ৭ পয়েন্ট ইল্ড পাওয়া যেত সেগুলোতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লোকসান করছে। আবু আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হলে হয়তো বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। শেয়ারের চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে একটি পর্যায়ে যাবে। এখন সে পর্যায়টি কত নিচে নামবে দেখার বিষয়। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই বিশ্লেষক বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে নতুন বিনিয়োগ করে এই বাজারে উঠানো সম্ভব না। গত এক সপ্তাহে যারাই যে শেয়ারে বিনিয়োগ করে, সেখানেই লোকসান করেছে। এজন্য এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হতে হবে। দিন শেষে দর হারিয়েছে ২৯১টি কোম্পানি। এর মধ্যে কেবল ১০টি কোম্পানি দর হারানোর কারণে সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ৩৯.৪৫ পয়েন্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়