ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে উচ্চ ফলনশীল ‘সাউ পেরিলা’

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুরের মাটিতে এবার চাষ হচ্ছে ‘সাউ পেরিলা’। এই ‘পেরিলা’ উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি-সমৃদ্ধ নতুন এক তৈলজাত ফসলের নাম। এই ফসল থেকে লিনোলিনিক অ্যাসিড সসৃদ্ধ তেল আহরণ ছাড়াও প্রাপ্ত খইল গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার ও জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এজন্য পেরিলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেহেরপুরের গাংনীতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেরিলা চাষ।
বীজে ২৫ শতাংশের ওপরে আমিষ থাকায় তেল আহরণের পরে তা থেকে প্রাপ্ত খৈল গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারসহ জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ৭০-৭৫ দিনের এই ফসল থেকে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ টন পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করা যাবে বলে দাবি জেলা কৃষি বিভাগের। কৃষি বিভাগের আশা বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হলে ভোজ্যতেলের আমদানি কমে যাবে। পাশাপাশি সাউ পেরিলা-১ দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ১২ জানুয়ারি ফসলটি পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অবমুক্ত করে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. বকুল হোসেন উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে নিজ ব্লকে সাউ গেরিলা চাষ শুরু করেন। ব্লকের প্রথম চাষি নজরুল ইসলাম প্রথম এই চাষ করতে পেরে গর্বিত বলে মত প্রকাশ করেন। নজরুল ইসলামের দেখাদেখি বেশ কয়েকজন চাষি পেরিলা চাষের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. বকুল হোসেন জানিয়েছেন, পেরিলা-১ বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমাণ কমে যাবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করেন এই জাত। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় বীজ বোর্ড সাউথ কোরিয়ান ভ্যারাইটির পেরিলা-১ নামে জাতটির নিবন্ধন দেয়। জাতটি দেশের আবহাওয়ার উপযোগী করে সাধারণভাবে সরিষা ভাঙানোর মতো করেই এই তেল পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের পেরিলা চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এ ফসলটির আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস স্থানীয় কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ও বীজ সরবরাহ করে। প্রতি বিঘা জমিতে জমি প্রস্তুত থেকে ফসল মাড়াই পর্যন্ত খরচ হবে মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর এ থেকে পাওয়া সম্ভব ২০-২৫ হাজার টাকা। তাছাড়া ৭৫ দিনে এ ফসল কাটা-মাড়াই সম্ভব।
উদ্যোগী চাষি উজ্জল হোসেন জানান, পেরিলার গুণগত মান ও পতিত জমিতে চাষ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে দো ফসলি ও তিন ফসলি ছাড়াও সাথি ফসল হিসেবে এর চাষ সম্ভব। তাই অনেকেই আসছেন পেরিলার চাষের পরামর্শ নিতে।
উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, সাথি ফসল হিসেবে চাষ করতে পারায় ৭০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা। গাছ, পাতা, সব কিছুই কাজে লাগবে মানুষের। আশা করছি, ভবিষ্যতে ব্যাপক আকারে চাষ হবে এ অঞ্চলে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. বকুল হোসেন পেরিলা-১ চাষ সম্পর্কে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কোরিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি লিটার ‘পেরিলা তেল’ বাংলাদেশের বাজারে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি পুষ্টিগুণের কারণে ধনী শ্রেণির মধ্যে এই তেলের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন ভোরের কাগজকে বলেন, পেরিলা চাষাবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক কম মূল্যে পেরিলা তেল বাজারজাত করা সম্ভব হবে। মাটির গুণগত মান, আবহাওয়াও অনুকূলে আছে। আশা করি, পেরিলা মেহেরপুরের কৃষিকে সমৃদ্ধ করবে এবং কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে থেকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহকৃত জাতটি নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু করেন। খরিপ-২ মৌসুমে অভিযোজিত এই ফসল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফসলটি থেকে আমরা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ করতে পারব, যা সাধারণ তেলের চেয়ে বেশি উপকারী এবং বাজার মূল্যও বেশি। কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করে সংরক্ষণ ও পরবর্তী সময় চাষ করতে পারবেন। এছাড়া তেল আহরণও করতে পারবেন স্বাভাবিকভাবে। এতে কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়