পুলিশের স্থাপনায় হামলার ঘটনায় মামলা : আসামি অজ্ঞাত কয়েক হাজার

আগের সংবাদ

‘ওমিক্রন’ নিয়ে সতর্ক সরকার

পরের সংবাদ

ঢাকার সিনেমায় বিকল্প ধারার রাজত্ব

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনা লকডাউনের পর বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পেলেও সিনেমা হল চালু হয়েছে বিকল্প ধারার সিনেমায়। নাচে-গানে ভরপুর, অ্যাকশন ধামাকা টাইপ সিনেমা এখন নেই প্রেক্ষাগৃহে। তবে কি ঢাকার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখন শাসন করছে বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র? লিখেছেন : হেমন্ত প্রাচ্য
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছে নাচ-গানে ভরপুর বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে কেউ কেউ দুই ভাগে বিভক্ত করতেন। একদিকে যেমন ছিল বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। এর বাইরে স্বাধীন ধারা চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের কর্মীরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক ধরনের সিনেমা শিল্পকে। কেউ কেউ তার নামকরণ করেছে ‘বিকল্প ধারা’ বা ‘আর্ট ফিল্ম’ কিংবা ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’। সেই বিকল্প ধারার সিনেমায় বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও প্রশংসিত হয় দর্শকের কাছে। তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেলসহ এ প্রজন্মের প্রসূন রহমান, কামার আহমাদ সাইমন, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদসহ অনেকের হাতে নতুন মাত্রা পায় বিকল্প ধারার সিনেমা। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা অনেকটাই সুপারস্টারনির্ভর। কাজী হায়াৎ, নায়ক মান্না, শাকিব খানেরা দীর্ঘদিন শাসন করেছেন বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। বিগত প্রায় অর্ধযুগ ধরে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বিকল্প ধারার সিনেমা। সবশেষ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটি বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হওয়ার পর বাণিজ্যিক ধারার অনেক সিনেমা প্রযোজকও এখন বিকল্প ধারার সিনেমাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
করোনা লকডাউনের পর মুমূর্ষু প্রায় সিনেমা হলে প্রাণসঞ্চার করেছে বিকল্প ধারার সিনেমা। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ‘ঢাকা ড্রিম’, ‘পদ্মা পুরান’, নীল মুকুট, ‘অলাতচক্র’, ‘হাসিনা : আ ডটার্স টেল’, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’সহ যে সিনেমাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পেয়েছে, তার প্রায় সবগুলো বিকল্প ধারার সিনেমা এবং সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহেও প্রশংসিত হয়েছে। এর কোনো কোনোটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃতও হয়েছে। বিকল্প ধারার সিনেমাগুলো শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র বিশ্ববাজারে সম্মান পেয়েছে।
এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে দেশেও এগিয়ে আছে বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র। গেল কয়েক বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকায়ও দেখা যায়, বিকল্প ধারার সিনেমার জয়জয়কার। যেমন ২০১০ সালে সেরা চলচ্চিত্র হয় খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে শব্দ’, ২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’, ২০১২ সালে শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ‘উত্তরের সুর’, ২০১৩ সালে গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘মৃত্তিকা মায়া’, ২০১৪ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ২০১৫ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ও রিয়াজুল রিজু পরিচালিত ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’, ২০১৬ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা, ২০১৭ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’, ২০১৮ সালে সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত ‘পুত্র’ এবং ২০১৯ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’।
এদিকে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার গল্পেও এসেছে পরিবর্তন। নাচে-গানে ভরপুর সিনেমার জায়গা দখল করেছে অ্যাকশন টাইপ সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহে বিগত কয়েক বছর দর্শকের মাঝে সাড়া জাগানো সিনেমাগুলোর বেশিরভাগই অ্যাকশন ঘরানার। এর মধ্যে আলোচিত হয়েছে দীপঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এই ছবিটি পুলিশি অ্যাকশন ধাঁচের। আগামী দিনেও যে সিনেমাগুলোকে ঘিরে প্রেক্ষাগৃহ সরগরম হবে বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ অ্যাকশন ধাঁচের। সিনেমায় নাচ, গান এখন আর তেমন দেখা যায় না। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর সিনেমার জন্য ভালো গান তৈরি হচ্ছে না। আগে বাণিজ্যিক ধারার যে সিনেমাগুলো ব্যবসাসফল হয়েছে তার সবগুলোতেই গান হিট করেছে। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ থেকে সবশেষ গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ ছবি ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনের মূল শক্তি ছিল মূলত গান। এখনকার সিনেমায় সুপারহিট গান পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মনে করেন অনেকে। গত দশ বছরে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটা সিনেমার গান দর্শকের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। বেশিরভাগ সিনেমারই গান এবং গল্প দর্শকের মাঝে আলোচিত হতে পারেনি। ফলে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দর্শক। এছাড়া এক যুগ আগে সিনেমায় অশ্লীলতা ঢুকে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার প্রতি রুচিশীল দর্শকের মনে উঠে গেছে। আর তখন থেকেই বিকল্প ধারার সিনেমা জনপ্রিয় হতে শুরু করে। আগামী দিনগুলোতেও বিকল্প ধারার সিনেমায় কি ঢাকার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি রাজত্ব করবে কি-না, সেটা সময়ই ঠিক করবে। তবে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, কামার আহমান সাইমন, প্রসূন রহমানদের মতো বেশ কিছু মেধাবী নির্মাতার হাত ধরে বাংলাদেশের বিকল্প ধারার সিনেমা যে আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করবে সেটা এখন আর স্বপ্ন নয়, অনেক বেশি বাস্তব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়