লজিক প্রকল্প : রৌমারীতে সোলার পাম্প স্থাপন শুরু

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি : বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে > ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

পরের সংবাদ

শামুক চাষে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুুরিয়া খুলনা : পুকুর ডোবা খাল-বিলে অবহেলা, অনাদরে আর অযতেœ পড়ে থাকা দেশীয় ছোট ছোট শামুক এখন আর ফেল না নয়। দেশি জাতের শামুক চাষও খুলে দিতে পারে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুয়ার। শামুকের মাংস থেকে মাছের খাবার আর শামুক খোসা থেকে চুন। তা আবার মাছ চাষেই ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া শামুকের মাংসে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শামুকের মাংস মানুষের খাবার হিসেবেও দারুণ জনপ্রিয় দেশ-বিদেশে। সরকার এ খাতে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
গ্রামে গঞ্জে অজস্র ছোট-বড় পরিত্যক্ত পুকুর ডোবায় দেখা মেলে শামুকের। শামুক চাষের মধ্য দিয়েও সৃষ্টি হতে পারে বহু কর্মসংস্থান, আসতে পারে জল-কৃষিতে সাফল্য। আর সেটি করে দেখিয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিনা পারভীন রুমা। চলতি বছরের মার্চ মাসে তিনি শামুক চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। মৎস্য অফিসার পুকুর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন। নিয়ম মেনে পুকুর প্রস্তুত করে শামুক সংগ্রহ করে পুকুরে মজুদ করেন। প্লাংক্টন তৈরি করা ছাড়া বাড়তি কোনো খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এ ব্যাপারে শামুক চাষি ও নারী উদ্যোক্তা শারমিনা পারভীন বলেন, ৮ কাঠা জমিতে এ বছরই প্রথম শামুক চাষ করেছি। ৫০ দিন আগে মৎস্য দপ্তরের সালাম সাহেবের কাছ থেকে শামুক সংগ্রহ করি ও মৎস্য অফিসারের পরামর্শে পুকুর প্রস্তুত করি। অল্পদিনেই এতটা দ্রুত শামুক চাষে এত সাফল্য পাব ভাবতে পারেনি। শামুক প্রজনন করায় সারা বছর একই একই পুকুর থেকে শামুক পাওয়া যায়, তাই শামুক চাষ খুবই লাভজনক।
জানা গেছে, শামুকের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। শামুকের খোলস থেকে চুন তৈরি এবং এর মাংসল অংশ মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। আর শামুক খোসা বা খোলস থেকে তৈরি চুন আবার মাছ চাষেই ব্যবহার করা হয়। আবার শামুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও বাজারে বিক্রি হয়।
আমরা খাদ্য হিসেবে শামুক গ্রহণে অভ্যস্ত না থাকলেও অপ্রচলিত এই জলজ প্রাণিটি কিছু মানুষের কাছে খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। আজকাল শামুকের মাংস বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাতে এক উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। এমনকি বড় রেস্তোরাঁতেও শামুকের পদ পাওয়া যায়। শামুকের মাংসে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও শামুক মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
মাছ চাষে শামুকের ব্যবহার সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। অনেক ক্ষেত্রেই মাছ চাষের পাশাপাশি শামুক চাষে আলাদা খাবার দেয়ার দরকার হয় না। শামুক পুকুরে বায়োফিল্টার হিসেবে কাজ করে। ফলে জলের গুণাগুণ ভালো থাকে। শামুকের শরীরে রয়েছে প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা (ফিল্টার)। এরা ময়লাযুক্ত জল পান করে। যে জলটা বাইরে ছাড়ে তা বিশুদ্ধ। অন্যদিকে মাছ চাষে শামুকের ব্যাপক ব্যবহার যেমন সাশ্রয়ী তেমনি পরিবেশবান্ধব। শামুক থেকে উৎপাদিত খাদ্য মাছ বেশি খায়। কারণ, এ খাবার অনেকটাই প্রাকৃতিক।
এতে মাছ তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধিও পায় বেশি। এছাড়া শামুকের তৈরি খাবার খাওয়া মাছ স্বাদেও অনেকটা ভালো হয়। এছাড়া হাঁসকে নিয়মিত শামুক খাওয়ালে হাঁসের মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ে। এ কারণে মাছ ও হাঁস চাষ হয় অনেক লাভজনক। শামুকের তৈরি খাদ্য পাঙ্গাশ, চিংড়ি, শিং, মাগুর, কৈ ও তেলাপিয়া মাছের ভীষণ প্রিয়। আর অন্যন্য মাছ ও চিংড়ির চাষে মাছের খাদ্য উপাদানের অন্যতম উপকরণ প্রোটিন। শামুকের মাংসে ৩২ শতাংশ প্রোটিন থাকে। যা এই শামুকের মাংস থেকে পাওয়া যায়। শামুকে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না। আবার শামুক থেকে খাদ্য তৈরি করলে মাছের খাবার বাবদ ব্যয় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, শামুক চাষ অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি। শামুকের প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। প্রতি শতাংশ পুকুরের জন্য ২৫০ গ্রাম গোবর, এক কেজি খৈল (সরিষা), ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি জলে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এ মিশ্রণ সমান চার ভাগে ভাগ করে তিন দিন অন্তর জলে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরের জলের রং যখন গাঢ় সবুজ হবে, তখন বুঝতে হবে পুকুরটি শামুক চাষের উপযোগী হয়েছে। এরপর খাল-বিল বা পুকুর থেকে শামুক সংগ্রহ করে প্রতি শতাংশ হিসেবে ২৫০ গ্রাম শামুক পুকুরের চারদিকে ছিটিয়ে দিতে হবে। পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে শামুক ব্যাপকভাবে বংশ বিস্তার করবে। এরপর ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ শামুক পাওয়া যাবে। চাষ পদ্ধতি শুরুর ৪০-৪৫ দিন পর শামুক সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি বলেন, শামুককে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের জন্য শামুকগুলো ভেঙে রোদে শুকিয়ে পরবর্তীতে মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করতে হবে। এবার অন্যান্য খাবারের উপাদানের সঙ্গে মেশানোর পর পিলেট মেশিন দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করতে হবে। বাজার সৃষ্টি করতে পারলে বাণিজ্যিকভাবে শামুক চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়