বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

কাংশা চেয়ারম্যানের যত অপকর্ম

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়েও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জহুরুল হক। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে, ভিজিডির চাল বিতরণের সময় কার্ডধারীর কাছ থেকে ঘুষ নেয়া, ৩০ কেজির চালের বস্তা থেকে চাল সরিয়ে ফেলা, জন্মনিবন্ধনকারীদের কাছ থেকে নানা অঙ্কের টাকা ঘুষ নেয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জন্মনিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এলজিএসপি বরাদ্দের টাকা নয়ছয়, বিভিন্ন প্রকল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে ১০ শতাংশ ভ্যাট নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
তার এসব অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বাররা। এমনকি এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থাও জানিয়েছে শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা। এরপরও রহস্যজনক কারণে বীরদর্পে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন জহুরুল হক। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার প্রত্যাশা করছেন তিনি। আর এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা। তাদের মতে, গত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে দুর্নীতির পাহাড় গড়েছেন জহুরুল হক। তাকে আবার মনোনয়ন দেয়া হলে, জনগণের হয়রানি ও লুটপাট বহুগুণে বাড়বে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম আবুল হোসাইনের ছেলে জহুরুল হক। তার প্রায় পুরো পরিবারই বিএনপিপন্থি হলেও গত ইউপি নির্বাচনের আগে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। এরপর সেই দলীয় পদ ব্যবহার করে কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান এবং দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। এরপর থেকেই তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে। তার বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে একাধিক অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর জমা হলেও কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। নেয়া হয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত তহবিলের ১০ টাকা কেজি চালের ৫৫টি কার্ড ডিলারের সহায়তায় ৩ বছর আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। এলজিএসপি প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ নিয়ম-বহির্ভূতভাবে করার প্রতিবাদে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় জহুরুল হকের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তৎকালীন ইউপি সচিব সৈয়দ জামান। এছাড়া পরিষদের সব সদস্য একযোগে একাধিকবার চেয়ারম্যানকে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। তার বিরুদ্ধে সাদা মিয়া নামে এক গ্রাম পুলিশকে মারপিট করে পঙ্গু বানানোর অভিযোগ রয়েছে। সাদা মিয়া প্রায় সাড়ে চার বছর আগে সরকারি চুরিকৃত চাল আড়াল করতে সামান্য বিলম্ব হওয়ার অপরাধে চেয়ারম্যান তাকে মারধর করেন। সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করলেও এখনো সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। এ বিষয়েও ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিলে সেটিরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য এখন কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, একজনের বিরুদ্ধে যে কেউ যে কোনো অভিযোগ করতেই পারে। সেই অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, সত্যতা যাচাই করে আমার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। তবে অবশ্যই কাংশা ইউনিয়নে এসে সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ করছি। আমি আমার ইউনিয়নে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, তাই এবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম ভোরের কাগজকে বলেন, দল থেকে যারা মনোনয়ন চাইবে, তাদের প্রত্যেকের নামের তালিকা ঢাকায় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হবে এবং তা হবে স্বচ্ছ। যদি কারোর বিরুদ্ধে কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে আমরা তা মন্তব্যের কলামে লিখব। কোনো প্রার্থীকে বাদ দেয়ার এখতিয়ার স্থানীয়ভাবে কারোরই নেই। মনোনয়নের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়