টাইগ্রেসদের উড়ন্ত সূচনা পাকিস্তানকে হারিয়ে

আগের সংবাদ

খুনোখুনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ : অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার > চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পরের সংবাদ

বেগমগঞ্জে ইউপি নির্বাচন : বিতর্কিত প্রার্থী ও কোন্দলে নৌকার ভরাডুবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গোলাম মহিউদ্দিন নসু, বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) থেকে : তৃণমৃলের মতামত উপেক্ষা, হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের দাপট, ত্যাগী ও অসহায় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, জেল-উপজেলা পর্যায়ে নেতাদের কোন্দল, বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এসব কারণেই নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটেছে। এ ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা সামান্য ভোটের ব্যবধানে ছয়টিতে জয়লাভ করেন। বাকি আটটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন। এ আটটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের একসময়ের ত্যাগী ও আওয়ামী পরিবারের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রহস্যজনক কারণে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। একটিতে জাসদ (রব) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ২নং গোপালপুর ইউনিয়নে মোশারফ হোসেন মিন্টু (চশমা) প্রতীকে জয়লাভ করেন। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী পঞ্চম হয়েছেন। ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচিত মেম্বারদের মধ্যে অধিকাংশ মেম্বার বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত। বিএনপি দলীয়ভাবে ভোট না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আদলে তারা কৌশলে নির্বাচন করছেন।
এদিকে যে তিনটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে তারা হলেন- উপজেলার ১নং আমানুল্যাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. বাহারুল আলম, ৮নং বেগমগঞ্জ (সদর) ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. শাহিদুর রহমান শাহীন ও ১৩নং রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ। নবনির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত এই তিন চেয়ারম্যান সম্প্রতি চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তিন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এর মধ্যে মো. বাহারুল আলম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি কারাগারে থেকেই নির্বাচনে জয়লাভ করেন। বাকি দুজন মো. শাহিদুর রহমান শাহীন ও আব্দুর রশিদ পলাতক থেকে বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছেন। এই তিনজন চৌমুহনীতে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা ও মানুষ হত্যার ঘটনায় ইসকন কর্তৃপক্ষের দায়ের করা হত্যা মামলা ও পুলিশ বাদী হয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
জানা যায়, এ তিনজনের মধ্যে ১নং আমানুল্যাপুর ইউনিয়নে বাহারুল আলম ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা খোকন মোটরসাইকেল প্রতীকে ২ হাজার ৮৯১ ভোট পান। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আরিফুর রহমান চতুর্থ হন। ৮নং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে শাহিদুর রহমান শাহীন চশমা প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ১১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আলম নান্নু আনারস প্রতীকে পান ২ হাজার ৬১৩ ভোট। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোস্তফা কামাল তৃতীয় হয়েছেন। ১৩নং রসুলপুর ইউনিয়নে আব্দুর রশিদ টেলিফোন মার্কা নিয়ে ৫ হাজার ৩৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার প্রার্থী নুরুল হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৬ ভোট।
এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার নির্বাচিত ছয় চেয়ারম্যান হলেন- ৪নং আলাইয়ারপুর ইউনিয়নে গিয়াস উদ্দীন পাটওয়ারী, ৬নং রাজগঞ্জ ইউনিয়নে মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম, ১০নং নরোত্তমপুর ইউনিয়নে মেহেদী হাসান টিপু, ১১নং দুর্গাপুর ইউনিয়নে আবেদ সাইফুল কালাম, ১৪নং হাজীপুরে মো. মীর্জা আজিম, ১৬নং কাদিরপুর ইউনিয়নে মো. সালাউদ্দীন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন- ৫নং ছয়ানী ইউনিয়নে অহিদুজ্জামান অহিদ। ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নে সাহেদুর রহমান দীপু। এ ইউনিয়নে নৌকার বিতর্কিত প্রার্থী আলমগীর কবির আলো তৃতীয় হয়েছেন। ১২নং কুতুবপুর ইউনিয়নে কামাল হোসেন, ১৩নং রসুলপুর ইউনিয়নে আবদুর রশিদ, ১৫নং শরীফপুর ইউনিয়নে নোমান সিদ্দিকী।
ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তৃণমূলের মতামত না নিয়ে এবং ত্যাগী ও যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিতর্কিত ও হাইব্রিড প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীক পাওয়ায় শুরু থেকেই তৃণমূলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া কিছু কিছু এলাকায় ব্যক্তিগত পছন্দ-অপন্দের কারণে দলীয় কোন্দল গড়ে ওঠে। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ওই সব প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা এবং প্রকাশ্য দিবালোকে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও জেলা-উপজেলার নেতাদের কোন্দলের কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে বেগমগঞ্জে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।
সরজমিন জানা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচিত মেম্বারদের মধ্যে অধিকাংশ মেম্বার বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত। বেগমগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল, অনুপ্রবেশকারীদের দাপট, অসহায় ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির কারণে বর্তমানে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়