ডেঙ্গুতে ৯১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

পরের সংবাদ

পোকায় বিনষ্ট রোপা আমন, মাথায় হাত কৃষকের

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ধামইরহাট : ঋণ পরিশোধে চাপ ব্যাংক-এনজিওর ** মো. আবদুল আজিজ মণ্ডল, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে : পোকার কবলে আমন ধান, ফসলের মাঠে এনজিওর ঋণ। শেষ সময়ে রোপা আমন ধান কৃষকের ঘরে তোলার স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে কারেন্ট পোকা। ইতোমধ্যে পোকার আক্রমণে কৃষকের কপালে হাত ওঠার জোগাড়। ২-৩ বার কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
উপজেলার সর্বত্র ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো এলাকায় কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, পচামিনা, ধানের ব্লাস্ট রোগ, পাতা মোড়ানো, বাদামি গাছ ফড়িং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। রাতে শত সহ¯্র পোকার সাইক্লিক বিচরণ চোখে পড়ে। কারেন্ট পোকার উপদ্রবে রাতের বেলায় শহরের দোকানিদের তড়িঘড়ি করে লাইট বন্ধ করে বাসায় ফিরতে হয়। এলাকার একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, এ বছর আবহাওয়া অত্যন্ত ভালো ছিল। আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। তবে আগাম ধানকাটা শুরু না হলেও এ বছর ফলন ভালো হবে না। অনেকেই বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। তবে আগাম ধান কেটে একই জমিতে আলু, সরিষা, গম চাষ করতে চান এসব কৃষক।
বিনা ধান ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে ওঠে। অক্টোবরের শেষের দিকে পাকতে শুরু করেছে। ধান গাছের খড় গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গত বছর বিঘাপ্রতি খড় বিক্রি হয়েছিল ৫-৬ হাজার টাকায়। চাল অনেকটা জিরাশাইলের মতো। সরু ভাত খেতে খুবই সুস্বাদু। এই ধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি উচ্চফলনশীল এবং খরাসহিষ্ণু। এই জাতের ধান বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধান চাষে ২০ ভাগ সার ও ৩০ ভাগ পানি লাগে, খরচও অনেক কম। ধান গাছের গোড়া শক্তিশালী ও মজবুত হওয়ায় হেলে পড়ে না।
এলাকার কৃষকরা এখন ভারতীয় বিভিন্ন জাতের ধান চাষের অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। এসব ধানের মধ্যে- পরশমনি, গুটিস্বর্ণা, স¦র্ণা-৫, চিকন স্বর্ণা, মামুন স্বর্ণা, মোজাম্মেল, জিরাশাইল, ১৭.৭৫, ৮৫, ৮৭ জাতের ধান চাষাবাদ করেন। এখন শেষ সময়ে ধান ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। চককালু গ্রামের চাষি আকতার হোসেন, সফিউল আলম, লুৎফর রহমান, জোতওসমান গ্রামের সফিউদ্দিন, মহব্বত, মাসুদ জানান, পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ২-৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেছি, তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।
বসতাবর গ্রামের আ.লীগের ইউনিয়ন সভাপতি ওছমান গনির ৫০ শতক জমির ধান কারেন্ট পোকার আক্রমণে পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ১ কেজি ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। বিভিন্ন পোকার আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- আলমপুর ইউনিয়ন, উমার ইউনিয়নের বেলঘরিয়া, মালাহার, ওমরপুর, কাদিপুর, চকিলাম, দাদুনপুর, আড়ানগর ইউনিয়নের ফতেপুর সেননগর।
এ ব্যাপারে ধামইরহাট ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, খেলনা ইউপি চেয়ারম্যান ছালাম, জাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যন ওছমান গনি, ইউসবপুর ইউপি চেয়ারম্যন বাদল জানান- সর্বত্র পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানান, করোনার কারণে গত কয়েক মাস ঘর থেকে বের হয়নি। ফসল নষ্ট হওয়ায় খাব কী, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাব?। পাশাপাশি এনজিওর ঋণের টাকার পরিশোধ করার চাপতো আছেই।
এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার পিপি মো. আলেফ উদ্দীন ভোরের কাগজকে জানান, এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছ। কৃষি উপসহকারীরা মাঠে কাজ করছেন। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে পোকার আক্রমণ বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি।
তিনি আরো বলেন, চাষিরা ভীষণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা চাষের খরচ জোগাতে হালের বলদ বিক্রি করেছেন, ব্যাংক-এনজিও থেকে লোন নিয়েছেন। ঘরে ধান ওঠেনি অথচ এরই মধ্যে লোন আদায়ে চাপ সৃষ্টি করছে ব্যাংকগুলো। উপজেলা কৃষি সম্প্রাসরণ কর্মকর্তা শাপলা খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। পোকার আক্রমণ থাকলেও মোটামুটি ভালো ফলন হবে বলেই আশা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়