পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন : মেহেরপুরে কাদাজমিতে পেঁয়াজ চাষে সাফল্য

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : জমিতে সেচ দিয়ে কাদা তৈরি করে ধান লাগানোর মতো করেই মেহেরপুরের কৃষকরা পেঁয়াজের চাষ শুরু করেছে। কৃষকরা যুগ যুগ ধরে পেঁয়াজ চাষ করে আসছে শীত মৌসুমে শুকনো মাটিতে। মেহেরপুরের চাষিরা তাদের চাষের ধরন বদলিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেতে আমন ধান আবাদের মতো কাদা তৈরি করে রোপণ করেছে পেঁয়াজের চারা। গত ৪ বছর ধরে জেলায় কাদা জমিতে পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে। কাদায় লাগানো রোপণ করা পেঁয়াজের ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। শুধু ফলনই নয়, নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘাতে গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন অনেকেই। আগামীতে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেঁয়াজ উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সেলক্ষ্যে মেহেরপুর জেলায় এবার আগাম নতুন পদ্ধতিতে ২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। বারি পেঁয়াজ-৫সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছে চাষিরা।
জেলার মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ মাস্টার বলেন, মুজিবনগরে শীতকালে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সেটি ভারতীয় বীজ থেকে উৎপন্ন ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। আবার সময়মতো চাহিদা ও দাম না পাওয়ায় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
এবার ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজের পরিবর্তে কয়েকজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন ও ভালো দামে বিক্রি করে ওই জমিতেই আবার শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ করছেন। পেঁয়াজ আবাদের এই ধারায় দেশের পেঁয়াজ সংকট দূর হবে বলে আশা করছেন অগ্রগামী এসব কৃষক।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামের কৃষক ওহাব আলী জানান, তিনি ৫ বিঘা বারি পেঁয়াজ-৫ নতুন পেঁয়াজের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এই পেঁয়াজ চাষে ঝুঁঁকি কম। নভেম্বর থেকেই এই পেঁয়াজ উত্তোলন করা যাবে বলে তিনি জানান। ফলে চাষিরা সারা বছর পেঁয়াজ চাষ ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে পেঁয়াজের ঘাটতি যেমন কমবে, তেমনি চাষিরাও সারা বছর ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, ১৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি এ বছর ২০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন। ৯৫-১১০ দিনে এই পেঁয়াজ বিঘায় ১২০-১৫০ মণ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ প্রতি বিঘায় চাষ করতে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, জেলায় বিভিন্ন চাষিদের মাধ্যমে ২৫ হেক্টর জমিতে বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ করা হয়েছে। ভালো ফলন হবে এবং চাষিরা লাভবান হবে।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে মেহেরপুর জেলা কৃষিতে যুগান্তকারী এক পরিবর্তনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। লাভ ও ফলনে কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে এ জেলায় আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়