চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

ঠিকানা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আগে দুই টাকার ঝালমুড়ি পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় না। ঝালমুড়ির জন্য এখন দিতে হয় পাঁচ টাকা। পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি চাইলেও আশপাশের সবাই এমনভাবে তাকায় যেন পাঁচ টাকা ভিক্ষা চাচ্ছি। পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিনতে হলে দেখতে হবে কখন ঝালমুড়িওয়ালার আশপাশে কেউ নেই। তখন চুপি চুপি করে বলতে হবে, মামা পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি দেন।
মামা তখন বেজার মুখ করে বলবে, পাঁচ টেহা ভাংতি আছে তো?
হাসান পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিনল। ঝালমুড়িতে ঝাল হালকা কম হয়েছে। তারপরও পানির জন্য হাসান আশপাশে তাকাল। যেখানে আশপাশে মসজিদ আছে সেখান থেকে ঝালমুড়ি খেলে ভালো হয়। মানুষ এখন বিনা টাকায় পানিও দেয় না। মসজিদ থেকে বিনা টাকায় পানি খাওয়া যায়। পানির কল ছেড়ে দুই হাতে পানি নিয়ে ইচ্ছেমতো তৃপ্তি মতো পানি পান করা যায়। মসজিদের পানিতে কেমন আলাদা একটা স্বাদও আছে।
হাসান চাইলে আরো বেশি টাকার ঝালমুড়ি খেতে পারত। ঝালমুড়ি দোকানটাই সে কিনে ফেলতে পারত। তার কাছে সেই পরিমাণ টাকা আছে। তার পকেটে এখন একটা খামের মাঝে প্রায় অনেকগুলো টাকা। কত টাকা সে গুনেনি। গোনার জন্য একটা জায়গা খুঁজছে। রাস্তার মাঝে টাকার বান্ডিল এভাবে গোনা ঠিক হবে না। সে মসজিদে বসে টাকা গোনা শুরু করল।
মোটামুটি ভালোই টাকা। বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা। বেশিরভাগই এক হাজার টাকার নোট। এক হাজার টাকার নোটগুলো পুরনো। পাঁচশ টাকার নোটগুলো তুলনামূলক নতুন। একশ টাকার নোট দুইটাও চকচকে নতুন।
হাসান খামের উপরে কিছু লেখা আছে কিনা দেখল। নতুন খাম। কিছু লেখা নেই। সম্ভবত শুধু টাকা রাখার জন্যই খাম। খামটা পকেটে নিয়ে সে মসজিদ থেকে বের হলো।
আজকে কয় তারিখ মনে করার চেষ্টা করল হাসান। আজকের এই দিনে হাসান বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা পকেটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন একটা তারিখ মনে রাখা উচিত। তার আশপাশে খুব কম মানুষই আছে যাদের পকেটে এই মুহূর্তে বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা আছে।
হঠাৎ পেছন থেকে একজন হাসানকে ডাক দিল। হাসান পেছনে ফিরবে কিনা ভাবছে। পেছনে তাকানোর পর যদি ওই লোক বলে, ‘এই যে ভাই আপনার পকেটে বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা আছে। এটা আমার। আপনি আমাকে আমার টাকা ফেরত দিন।’
হাসান পেছনে তাকালো। তাকিয়ে দেখল একজন মুরুব্বি টাইপের লোক। বয়স পঞ্চাশের উপরে হওয়ার কথা। মাথার চুল মাত্র পাকা ধরেছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সেভ করে। কিন্তু কোনো কারণে অনেক দিন ধরে সেভ করছেন না। পরনে শার্ট। শার্টের পকেটে কলমের দাগ। বোঝা যাচ্ছে কখনো শার্টের পকেটে কলম রেখেছিলেন। তারপর সেই কলম নষ্ট হয়ে পকেটে কালি লেগে গেছে। মুরুব্বির মুখে হাসিহাসি ভাব। কিন্তু হাসিতে ক্লান্তির ছাপ। এমন একজন মানুষ বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকার মালিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হাসান কিছুটা নিশ্চিন্ত মনেই বলল, হ্যাঁ বলুন।
মুরুব্বি লোকটা হাসানের হাতে একটা ঠিকানা দিয়ে বলল, বাবা তুমি কি এই ঠিকানাটা চিনো?
হাসান ঠিকানাটা হাতে নিল। সে ঠিকানাটা চেনে। না চেনার মতো ঠিকানা না। সহজ ঠিকানা। এই এলাকার ওসির বাসা। মোটামুটি সবাই এই ঠিকানা চেনে। হাসান বলল, হ্যাঁ আমি চিনি।
মুরুব্বি বলল, আমার নাম গফুর। আমি ময়মনসিংহ থেকে আসছি। এখানে তেমন কিছুই চিনি না। আমি খুব বিপদের মাঝে আছি বাবা। একটা কাজে এখানে আসা। কিন্তু বিপদে পড়েছি। থানায় যাওয়ার পর আমাকে বলল ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে। উনি তখন ছিলেন না। আমি অনেক কষ্ট করে উনার বাসায় ঠিকানাটা নিয়ে এসেছি। আমার খুব বিপদ। আমাকে যদি উনার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো।
হাসানের আজ কোনো কাজ নেই। সে ভাবল দিয়ে আসা যায়। সে গফুর সাহেবকে নিয়ে ওসির বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসল।
দুপুর দুইটা বাজে। হাসানের বাসায় ফেরা দরকার। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। পেটে তীব্র ক্ষুধা। কিন্তু খেতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। হোটেলে খাওয়ার মতো টাকা তার কাছে আছে। কিন্তু সে বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকার চিন্তা করছে। টাকাগুলো তার না। সে রাস্তায় পেয়েছে। কী মনে করে খামটা হাতে নিল। তারপর দেখে ভেতরে টাকা। এই টাকা হাসান কী করবে বুঝতে পারছে না। রাস্তা থেকে যদি দুইশ টাকা পেত তাহলে সে এত ভাবত না। এর আগেও রাস্তায় সে ১০-২০ টাকা পেয়েছে। সেগুলো সে হয় মসজিদে দিয়ে দিয়েছে না হয় নিজেই খরচ করেছে। কিন্তু বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা সে এর আগে কখনো পায়নি। এটাই হচ্ছে সমস্যা।
হঠাৎ তার মনে হল- গফুর সাহেব যখন তাকে ডাক দিল তখন মনের মাঝে ভয় তৈরি হলো কেন? কোনো কারণে কি সে এই টাকাগুলো নিজের মনে করছে? আর নিজের মনে করলেও ক্ষতি কী? সে টাকা পেয়েছে রাস্তা থেকে। সে তো চুরি করেনি। টাকা যেখান থেকে পেয়েছে সেখানে যদি আবার গিয়ে রেখে আসে, তাহলে অন্য কেউ নিয়ে যাবে। থানায় যোগাযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু তাতেও লাভ নেই। অনেক ভেজাল। আর সেই টাকা যে থানার পুলিশরা মেরে দেবে না তার গ্যারান্টি কী?
এই টাকা আল্লাহ-ই আমার কাছে নিয়ে এসেছে। নিশ্চিত আল্লাহ চাইছেন এই টাকা আমার কাছে থাকুক। এটা ভেবে হাসান এবার হোটেলের দিকে রওনা হলো। কিছু খাওয়া যেতে পারে।
হোটেলে বসে খাবার মেন্যুর দিকে তাকাল। খাবার মোটামুটি ভালো। গলদা চিংড়ির ভুনা, কাঁচকি মাছের ভাজি। ভর্তা আছে কয়েক প্রকার। টমেটো ভর্তা, মাছের ভর্তা, ডিম ভর্তা। মুরগি, গরু, খাসি আছে। গরুর মাঝে গরুর কালো ভুনা আছে। হাসান টমেটো ভর্তা আর গরুর কালো ভুনাটা নিল। গরু গোস্তটা একদম ভাজাভাজা করে ফেলছে। টুকরোগুলো একদম নরম। মুখে নিলেই খুলে যাচ্ছে।
খাওয়া শেষে হাসানের উঠতে মন চাচ্ছে না। বসেই থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। বিল দিতে হবে। খাবারের বিল কোথা থেকে দেবে? তার কাছে যে টাকা আছে সেখান থেকে? সে চাইলেই বাহাত্তর হাজার দুইশ টাকা থেকে বিল পরিশোধ করতে পারে। দুইশত টাকার খুচরাটা দিয়া দিলে সুন্দর হয়। তখন একদম সহজ হিসাব থাকবে। বাহাত্তর হাজার টাকা।
হাসান নিজের টাকা থেকেই বিল পরিশোধ করল।
সন্ধ্যা নামার আগে আগে হাসান বাসার দিকে রওনা হলো। তার বাসা ওসির বাসা থেকে বেশি দূরে না। ওই রাস্তা দিয়েই যেতে হয়। রাস্তাটা সুন্দর। নতুন করে ফুটপাত করা হয়েছে। রাস্তায় ঢালাইটা ভালো দিছে। সন্ধ্যার পর ফুটপাতে লাইট জ্বলে। দেখতে সুন্দর লাগে। ওসির বাসার সামনের রাস্তা দেখেই হয়তো এত ভালো।
হাসান ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। ওসির বাসার দিকে তাকাতেই দেখে গফুর সাহেব গেটের পাশের চায়ের দোকানে নিথর শরীর নিয়ে বসে আছেন। যেন কোনো মস্ত বিপদে পড়েছেন তিনি। যার কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। নয়তো মূল্যবান কিছু হারিয়েছেন, যার খোঁজ পাচ্ছেন না। এই অচেনা শহরে তাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই।
হাসান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গফুর সাহেবকে দূর থেকে দেখল। তারপর কী মনে করে জানি একপা দুপা করে গফুর সাহেবের দিকে গেল। কে জানে হাসান কী রহস্য নিয়ে তার দিকে যাচ্ছে!
য় ভেলানগর, নরসিংদী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়