নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

হুমকির মুখে একসময়ের ‘সাদা সোনা’ রাবার শিল্প

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনবহুল অধ্যুষিত ও রাবার শিল্পনগরী হিসাবে খ্যাত বাইশারীতে রয়েছে শত শত ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগান। স্থানীয়রা রাবারকে বাংলাদেশের সাদা সোনা হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। বিগত দিনে দেশের মাটিতে সাদা সোনার বিপ্লব ঘটলেও এখন দরপতনে এই শিল্প বর্তমানে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বেপরোয়াভাবে রাবার আমদানির ফলে এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন রাবার বাগান মালিকরা সস্তা দরে শিট বিক্রি করায় দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর এখন কমে গেছে। এর ফলে রাবার চাষিদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ থাকায় যে কোনো সময় উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে তিন দফায় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় প্রায় ১৩ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিকে রাবার চাষ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩০০ উপজাতি জুম্মু পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। উঁচু ভূমি বন্দোবস্তিকরণ প্রকল্পের আওতায় ২য় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে বান্দরবান জেলায় পরিবার পিছু পাঁচ একর ২৫ শতক করে এক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
তাদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১২০ টন প্রক্রিয়াজাত রাবার শিট উৎপাদন করে বছরে ৪০ কোটি টাকার রাবার বিক্রি করা হচ্ছিল। বর্তমানে ১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করে উৎপাদিত একই পরিমাণ রাবার বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১২ কোটি টাকায়।
বান্দরবান জেলার বাইশারীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও টাংগাইলের মধুপুরে রাবার বাগান রয়েছে। তবে দেশের সব চাইতে বেশি রাবার চাষ রয়েছে পার্বত্য জেলার বান্দরবানের বাইশারীতে। এই বাইশারীকে অনেকেই রাবার শিল্পনগরী হিসাবে খ্যাত বলে মনে করেন। বর্তমানে বান্দরবানের বাইশারীতে ব্যক্তিমালিকানা ও ঘরোয়া বাগান মিলে আনুমানিক পনের হাজার একরের অধিক পরিমাণ রাবার বাগান রয়েছে। বাগানে শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। এসব শ্রমিক পরিবারবর্গ নিয়ে এতদিন ভালোই ছিল। কিন্তু গত এক বছর বিদেশি রাবার বাংলাদেশে আমদানির ফলে রাবারের দাম একেবারেই নিচে নেমে গেছে বলে জানান একাধিক বাগান মালিক। গত ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে বাজার দরপতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।
আচমকা দর পতনে রাবার মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছে বলে জানান। এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করতে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছে বলে জানালেন কতিপয় মালিক। শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকরা জানান, বর্তমান অবস্থায় বাজারে দর পতনের কারণে উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে পিএইচপি ল্যাটেক্স এন্ড রাবার প্রোডাক্ট লিমিটেডের সিনিয়র ব্যবস্থাপক আমিনুল হক আবুল ভোরের কাগজকে জানান, তার বাগানে বর্তমানে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। বর্তমানে উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না।, এই অবস্থা চলতে থাকলে বাগান মালিকরা উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে। এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে পড়েছে যা এ শিল্পকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
নাজমা খাতুন রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক আল আমিন বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত রাবার পণ্যও বিক্রি হচ্ছে না। গত মাসের উৎপাদিত রাবার এখনো গুদামে মজুত রয়েছে। দিন দিন ব্যবসায়ীরাও এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
স্থানীয়দের দাবি- রাবার সেক্টর বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি দেশীয় পণ্যের বাজারজাত করে দেশ ও শ্রমিকদের বাঁচানো সম্ভব। অন্যদিকে সচেতন মহল রাবার সেক্টরের প্রতি সরকারের নজর দিয়ে রাবারের দাম বাড়িয়ে এ শিল্পকে চলমান রাখতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশীয় পণ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে বিদেশী পণ্য আমদানি করে বাজার সয়লার করছে। অথচ রাবারের দরপতন হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর কোন ধরণের দাম কমে নাই। বাজারে বর্তমানে রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দাম এখনো চড়া। রাবারের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যবসায়ীরা ও রাবার বাগানমালিকরা দেশীয় এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়