নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

বিশ্বকাপের সেঞ্চুরিয়ানদের গল্প : জুনায়েদ হোসেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্রিকেটের জাঁকজমকপূর্ণ সংস্করণ টি-টোয়েন্টি। অন্য দুই সংস্করণ ওয়ানডে ও টেস্টে সেঞ্চুরি করা ডাল ভাত হলেও টি-টোয়েন্টিতে এটি রীতিমতো দুঃসাধ্য। এই দুঃসাধ্য কাজটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে করে দেখিয়েছেন বিশ্বের সাতজন ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে আবার ক্যারিবীয় ক্রিকেটার ক্রিস গেইল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইটি সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েছেন। আবার বাংলাদেশিদের মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই দুঃসাধ্য কাজটি করে ফেলেছেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল।
বাকি পাঁচজনের তালিকায় আছেন- নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস, পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ, ভারতের সুরেশ রায়না ও শ্রীলঙ্কার সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৬ এই তিনটি আসরে ক্রিকেট বিশ্ব দুটি করে ব্যক্তিগত শতকের সাক্ষী হয়েছেন। এছাড়া ২০০৯ সাল একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসর, যে আসরে কোনো ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির দেখা পাননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোন আসরে কে, কত বলে এই কীর্তি গড়েছেন সে তথ্যই এই প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
ক্রিস গেইল : ২০০৭ সাল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর। ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা, উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ক্যারিবীয় দানব ক্রিস গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেটার সেদিন জোহানেসবার্গে রীতিমতো ঝড় তুলে গেছেন। আফ্রিকার বোলারদের তুলোধুনো করে একের পর এক ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। স্বাগতিক বোলাররা যতক্ষণে গেইল ঝড় থামান তখন ৫৭ বলে ১১৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ক্যারিবীয় দানবের নামের পাশে। ১০টি ওভার বাউন্ডারি ও ৭টি বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটিতে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২০৫- এর বেশি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবং একই সঙ্গে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণটিতে সেদিন প্রথম কোনো শতকের রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, এদিন স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারতে হয় গেইলদের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকবার দেখা যায় গেইল ঝড়। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসর, ২০১৬ সালে। ভারতের মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে সুপার টেনের লড়াইয়ে এদিন গেইল তুলোধুনো করেন ইংলিশ বোলারদের। ১৬ মার্চের ওই ম্যাচে ৪৭ বলে ১০০ রান করেন ক্রিস গেইল। এটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুততম শতক। ২০৮ স্ট্রাইকরেটে ইনিংসটিতে গেইল ১১টি ছক্কা ছাড়াও ৫টি চারের মার মারেন। একই সঙ্গে গেইল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুইটি সেঞ্চুরির মালিক বনে যান। ম্যাচটি ক্যারিবীয়রা ৬ উইকেটের ব্যবধানে জিতে নেয়।
সুরেশ রায়না : ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এদিন বিশ্বকাপে শতকের কীর্তি গড়েন ভারতের ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না। ক্রিকেট বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে প্রথম শতকের মার দেখেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে করা গেইলের ১১৭ রানের ইনিংস। সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের আরেকবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাঁদিয়ে ছাড়েন রায়না। এটি ২০০৭ সালের পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় শতকের ইনিংস। সেবার গ্রস আইলেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬০ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ১০১ করেন সুরেশ রায়না। ম্যাচটি ১৪ রানে জিতে যায় ভারত।
মাহেলা জয়াবর্ধনে : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয় শতকের রেকর্ডটি আসে রায়নার একদিন পরেই। ক্যারিবীয় দ্বীপে ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে এদিন ঝড় তোলেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনে। ওই বছরের ৩ মে জিম্বাবুয়ের বোলারদের একাই ছন্নছাড়া করেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান। ম্যাচটিতে জয়াবর্ধনে ৬৪ বল খেলে ১০ চার ও ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে ঠিক ১০০ করেন। ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে ১৪ রানে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এরপর যেন শতক একটি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরের আসরেই ২০১২ সালে ব্যক্তিগত শতকের ইনিংস খেলেন নিউজিল্যান্ডের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরে এদিন কপাল পোড়ে বাংলাদেশের বোলারদের। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম পাল্লেকেলেতে সেদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে রীতিমতো ঝড় তুলে ৫৮ বলে ১১ চার ও ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে ১২৩ রানের রেকর্ড গড়েন। এখন পর্যন্ত টি-২০ বিশ্বকাপে এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ম্যাচটি ৫৯ রানে জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
অ্যালেক্স হেলস : ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পঞ্চম আসর আয়োজন করে বাংলাদেশ। ওই বছরের ২৭ মার্চ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত শতকের সাক্ষী হন বাংলাদেশের বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম। বিশাল রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কার বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনো করতে থাকেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলস। সেদিন ৬৪ বলে ১১ চার ও ৬ ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ১১৬ রান করেন তিনি। ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতে যায় ইংল্যান্ড।
আহমেদ শেহজাদ : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে শতক হাঁকান পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চট্টগ্রামের পর ব্যক্তিগত শতকের সাক্ষী হন বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুর। ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসের সেঞ্চুরির তিন দিন পরই মিরপুরে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি করেন পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ। ৬২ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন আহমেদ শেহজাদ। ম্যাচটি ৫০ রানে জিতে যায় পাকিস্তান।
তামিম ইকবাল : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ব্যক্তিগত শতকের রেকর্ড গড়েন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। ভারতের মাটিতে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসরে এই কীর্তি গড়েন দেশসেরা ওপেনার। ভারতের ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষে ৬৩ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। এটি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে এখ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শত রানের মালিক হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম। ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে ৫৪ রানে জিতে নেয় বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়