নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

কে হাসবেন শেষ হাসি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপ উত্তেজনায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এবার সপ্তম আসরে ব্যাটে-বলে কোন ক্রিকেটার গর্জে উঠবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় ডুবে আছেন ভক্তরা। কোন দেশ এবার বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলবে, এ বিষয় নেয়ে তুমুল আলোচনা ও বাগবিতণ্ডা চলছে। সেই সঙ্গে পছন্দের দল নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি ঘাঁটা হচ্ছে রেকর্ড বই। এক কথায় বলা যায়, বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শক্তির বিচার খাটে না, ফেভারিট তকমাও যায় না। দিনটা যার, ফল যায় তার পক্ষে। পুরোপুরি আনপ্রেডিক্টেবল, মানে পূর্বানুমান করা সবচেয়ে দুরূহ কাজ। ১৭ অক্টোবর থেকে ওমানের মাসকটের আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। ভারতের মাটিতে এবারের আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপে ভারত থেকে এ বিশ্বকাপ সরিয়ে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে আসা হয়। তবে পুরো বিশ্বকাপের আয়োজক থাকছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডই।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসর হয়েছিল ২০১৬ সালে। বছরের হিসাবে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর হতে যাচ্ছে চার-ছক্কার লড়াই। তাই তো এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনাটা একটু বেশি। এবারের আসরটি হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। এর আগে ছয়টি আসরের মধ্যে ২০০৭ সালে ভারত, ২০০৯ সালে পাকিস্তান, ২০১০ সালে ইংল্যান্ড, ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা ও সর্বশেষ ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করে ক্যারিবিয়ানরা। এবার প্রথমপর্বের দুই গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপ মিলে মোট চারটি দল মূলপর্বে খেলার সুযোগ পাবে। প্রথমপর্বে গ্রুপ ‘এ’তে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া ও শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি।
বাছাইপর্বের ৮টি দল ছাড়াও সুপার টুয়েলভে দুই গ্রুপে আছে আরো আটটি দল। মোট ১৬ দল লড়বে এক ট্রফির জন্য। সুুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১তে আছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রুপ-২-এ আছে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান।
১৭ অক্টোবর বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও এই আসরের মূলপর্ব বা সুপার টুয়েলভ শুরু হবে ২৩ অক্টোবরে। ৮ নভেম্বর শেষ হবে সুপার টুয়েলভের লড়াই। এখান থেকে দুই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের সেরা চার দল সেমিফাইনালের টিকিট পাবে। ১০ ও ১১ নভেম্বর হবে দুটি সেমিফাইনাল। প্রথম সেমি হবে আবুধাবিতে, দ্বিতীয়টি হবে দুবাইয়ে। ১৪ নভেম্বর দুবাইয়ে হবে ফাইনাল। দুই সেমিফাইনালের দুই বিজয়ী দল ফাইনাল খেলবে। ফাইনালের জন্য রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে।
সুপার টুয়েলভ শুরুর আগেই প্রশ্ন উঠছে সপ্তম আসরের শিরোপা জিতবে কে? আগেই শিরোপা জয় করা কোনো দেশই কি নেবে বিশ্বকাপ? নাকি এবার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতবে নতুন কোনো দেশ। এ আলোচনাই চলছে এখন সর্বত্র। বাংলাদেশের সমর্থকরা এবার স্বপ্ন দেখছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সেমিফাইনালে খেলবে। এবার যাদের নিয়ে বাংলাদেশ স্কোয়াড সাজিয়েছে, তাদের নিয়ে আশা করাই যায়। পরিসংখ্যান বলছে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ শিরোপার জন্য ফেভারিট। সে দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিটি দেশই শিরোপা জয়ের মতো দল গড়েছে। কিন্তু এ পাঁচটি দেশ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে।
ভারত তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড সাজিয়েছে তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশেলে। যারা তরুণ আছে, তারা আবার আইপিএলে খেলে থাকেন। ভারতের প্রত্যেকটি ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট। ভারত আইসিসির নির্দিষ্ট ওভারের সর্বশেষ দুটি ইভেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে। তারা নিজ ঘরের মাঠে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলে। এরপর ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলেছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা অনেকটাই এগিয়ে আছে। আরব আমিরাত পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই অনেকে বাবর আজমদের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে দেখছে।
এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আছে ওয়ানডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। ২০১৯ সালে শক্তিশালী এক দল নিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতে ইংল্যান্ড। তারা ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারায়। বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংল্যান্ড আরো শক্তিশালী হয়েছে। অন্য দেশগুলোকে নিয়মিত হারিয়েছে তারা।
এরপর আছে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার পর এ বছর ভারতকে হারিয়ে জয় করেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। নিউজিল্যান্ড এখন যে কোনো দেশের জন্য হুমকি। বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম হট ফেভারিট হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বছরব্যাপী ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব ভালো না খেললেও বিশ্বকাপে এলে তারা হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজই বিশ্বে এখন পর্যন্ত একমাত্র দল হিসেবে দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছে।
২০১৪ ও ২০১৬ সালের মতো এবারো বাছাইপর্ব খেলে সুপার টুয়েলভে যেতে হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। রাউন্ড অব সিক্সটিন বা বাছাই পর্বে শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকেও খেলতে হচ্ছে। যদিও বাছাই পর্বে এ দুই দলের কোনো ম্যাচ নেই দুই গ্রুপে থাকায়। বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতেই টেস্ট খেলুড়ে দেশ দুটিকে দুই গ্রুপের প্রধান করে সূচি সাজিয়েছে আইসিসি। টানা ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ। সে অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয় যদিও। ২০০৭ সালের টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসর বাদ দিলে গর্ব করার মতো তেমন কোনো পারফরম্যান্স নেই টাইগারদের। বরং ২০০৯ ও ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আইসিসির দুই সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ড (তৎকালীন) ও হংকংয়ের কাছে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে ধর্মশালায় ওমানও দারুণ প্রতিদ্ব›িদ্বতা উপহার দিয়েছিল। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে। এই বিশ্বকাপেও অভিজ্ঞতাই শক্তি টাইগারদের।
এবারের বিশ্বকাপে টাইগারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ জিতেছে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে টাইগারদের। অন্য দিকে ভারতকে দীর্ঘ সময় ধরে সব ধরনের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি। তবে এবারের বিশ্বকাপ শেষে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নেতৃত্বের ভার ছেড়ে দেবেন। ফলে কোহলির জন্য এবারের বিশ্বকাপটি শিরোপা জয়ের শেষ সুযোগ। অন্য দিকে বাবর আজমের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান। আর আফগানিস্তান এবার বিশ্বকাপে খেলবে মোহাম্মদ নবীর নেতৃত্বে। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার বিশ্বকাপের দায়িত্বটা পেয়েছেন হঠাৎ করে। শ্রীলঙ্কা এবার তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দল গঠন করেছে। আর এ দলের দায়িত্ব পেয়েছেন দাসুন শানাকা। এবার শ্রীলঙ্কাকে তেমন বড় দল হিসেবে ধরা হচ্ছে না। তবে শ্রীলঙ্কা ভালো কিছু করলেও করতে পারে দাসুনের নেতৃত্বে।
এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম হট ফেভারিট হলো নিউজিল্যান্ড। আর দেশটির নেতৃত্বে আছেন কেন উইলিয়ামসন। তার নেতৃত্বে ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ও ২০২১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলে কিউইরা। এবার ২০ ওভারের বিশ্বকাপেও ভালো কিছু করবে বলে প্রত্যাশা সবার। উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে ৪৯টি ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ড। জয় পেয়েছে ২৩টিতে। হেরেছে ২৫টি ম্যাচে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক সময় একক আধিপত্য দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে টি-টোয়েন্টিতে এখনো সেরা হয়ে ওঠা হয়নি তাদের। এবার অস্ট্রেলিয়া স্বপ্ন দেখছে ভালো কিছু করার। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের পর শিরোপার দাবিদার ধরা হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। আর ২০১৬ সালের বিশ্বকাপের মতো এবারো ইংলিশদের নেতৃত্বে থাকছেন মরগান। তার নেতৃত্বেই ২০১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। এমনকি তার নেতৃত্বে ২০১৬টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও খেলেছিল ইংল্যান্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তেম্বা ভাবুমা। অধিনায়কত্বে তিনি একদমই নতুন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবার তার নেতৃত্বে ভালো কিছু করবে এমন প্রত্যাশা সবার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে খেলতে নামবে। আর তাদের নেতৃত্বে থাকছেন কাইরন পোলার্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগের দুই বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়া ড্যারেন সামি নেই দলে। তবে পোলার্ডের নেতৃত্বেই ফের বিশ্বকাপে চমক দেখাবে ক্যারিবিয়ানরা। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়