নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

তার হাত ধরেই বলিউড চিরকিশোর

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং রেকর্ড প্রযোজক কিশোর কুমার। প্রথাগত তালিম ছাড়াই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। আইনজীবী কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী গৌরীদেবীর ছোট ছেলে আভাস কুমারের জন্ম ১৯২৯-এর ৪ অগস্ট। ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (আজকের মধ্যপ্রদেশ) খণ্ডোয়া অঞ্চলে। সেখানে এক সম্পন্ন পরিবারের ব্যক্তিগত আইনজীবী হয়ে কর্মরত ছিলেন কুঞ্জলাল। কিশোর কুমার যখন ছোট, তখনই তার দাদা অশোক কুমার হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত তারকা। অভিনয় শুরু করেছিলেন আর এক দাদা অনুপ কুমারও। অশোক কুমার চেয়েছিলেন তার মতো ভাইও অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করুন। কিন্তু অভিনয় নিয়ে আভাস আদৌ সিরিয়াস ছিলেন না। অভিনয়ের বদলে আভাস প্রথমে কেরিয়ার শুরু করলেন বম্বে টকিজের কোরাস শিল্পী হিসেবে। বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখে তিনিও দুই দাদার মতো নিজের নাম পরিবর্তন করলেন। আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হলেন কিশোর কুমার। অশোক কুমারের জন্মগত নাম ছিল কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং অনুপ কুমার ছিলেন কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। দাদা অশোক কুমারের ছবি ‘শিকারি’তে প্রথমবার ১৯৪৬ সালে অভিনয় করেন কিশোর কুমার। ১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’ ছবিতে প্রথমবার প্লেব্যাক করেন তিনি। কেরিয়ারের প্রথমলগ্নে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ অবধি মোট বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে বেশিরভাগই ফ্লপ করেছিল বক্স অফিসে। এরপর ‘নকরি’, ‘চার প্যায়সে’, ‘বাপ রে বাপ’ ছবির সাফল্য তাকে অভিনয়ের প্রতি আগের তুলনায় বেশি আগ্রহী করে তোলে। তবে তার হৃদয়জুড়ে ছিল সংগীতের প্রতি ভালবাসাই। কে এল সায়গল এবং পাকিস্তানি শিল্পী আহমেদ রুশদির প্রভাব ছিল কিশোর কুমারের ওপর। এক ঘরোয়া আড্ডায় এস ডি বর্মন তাকে পরামর্শ দেন নিজস্ব গায়কি তৈরি করতে। এর পর কিশোর তার গায়কিতে পাশ্চাত্য প্রভাব আনেন। মার্কিন শিল্পী জিমি রজার্স এবং নিউজিল্যান্ডের গায়ক টেক্স মর্টনের গান শুনে নিজের গায়কিরও সঙ্গী করে নেন ইয়োডলিংকে। ক্রমে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন কিশোর কুমার। সলিল চৌধুরীর সংগীত পরিচালনায় ‘হাফ টিকিট’ ছবিতে নারী ও পুরুষ, দ্বৈত ভূমিকার কণ্ঠে তার গান বাজিমাত করে। জীবনে কোনোদিন আপসের পথে পা রাখেননি কিশোর কুমার। জরুরি অবস্থার সময়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয় কংগ্রেসের। রাজনৈতিক দলের শর্তে রাজি হননি তিনি। তার মাসুলও তাকে দিতে হয়েছিল। ১৯৭৬ থেকে জরুরি অবস্থা শেষ হওয়া অবধি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো এবং দূরদর্শন ছিল কিশোর কুমারের কণ্ঠহীন। খামখেয়ালি আচরণ ছিল কিশোর কুমারের বর্ণময় জীবনের অঙ্গ। তার বাড়ির সামনে বোর্ড লাগানো ছিল। যেখানে ইংরেজিতে যা লেখা থাকত, তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান’। বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনেকেই আজব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। শোনা যায়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় প্রথমে ভেবেছিলেন ‘আনন্দ’ ছবিতে কিশোর কুমার এবং মেহমুদকে নেবেন। কিন্তু মনোমালিন্যের জেরে তার প্রস্তাবে রাজি হননি গায়ক-অভিনেতা। পরে হৃষিকেশ তার ছবিতে নেন অমিতাভ বচ্চন এবং রাজেশ খন্নাকে। বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, অসমিয়া, মালায়লাম, ওড়িয়া, ভোজপুরি এবং কন্নড়সহ বহু ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন কিশোর। কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতা (তখন রুমা দেবী)। ১৯৫০-৫৮, আট বছর স্থায়ী হয়েছিল তাদের দাম্পত্য। ১৯৫২ সালে জন্ম হয় তাদের একমাত্র সন্তান, অমিতের। রুমার সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই মধুবালার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কিশোর কুমার। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন নায়িকাকে। কিন্তু গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার এই বিয়ে মেনে নেয়নি। কিশোর কুমার এবং মধুবালার দাম্পত্য সুখের হয়নি। শোনা যায়, বিয়ের এক মাস পরেই গুরুতর অসুস্থ মধুবালা ফিরে যান তার নিজের বাংলোয়। ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন মধুবালা। অভিযোগ, তার সঙ্গে শেষ দিকে যোগাযোগ রাখেননি কিশোর কুমার। যোগিতা বালির সঙ্গে শিল্পীর তৃতীয় স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দুই বছর। শোনা যায়, মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েই কিশোর কুমারের কাছ থেকে দূরে সরে আসেন যোগিতা। এর ফলে চরমে ওঠে কিশোর কুমারের সঙ্গে মিঠুনের বিরোধ। মিঠুনের জন্য নাকি গানই গাইতে অস্বীকার করেছিলেন কিশোর। ফলে বাপ্পি লাহিড়ীর যাত্রাপথ অনেকটাই সুগম হয়। যদিও ত্রিকোণ প্রেমের এই ঘটনা কোনোদিন স্বীকার করেননি কিশোর কুমার। যোগিতার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পরে কিশোর কুমার বিয়ে করেন নায়িকা লীনা চন্দভরকরকে, ১৯৮০ সালে। দুই বছর পরে জন্ম হয় তাদের একমাত্র ছেলে সুমিতের। লীনার প্রথম স্বামী সিদ্ধার্থ তাদের মধুচন্দ্রিমার দিনই এক দুর্ঘটনায় নিজের বন্দুকের গুলিতে আহত হন। এক বছর চিকিৎসা চলার পরে তিনি প্রয়াত হন। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত লীনা তার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন বয়সে ২১ বছরের বড় কিশোর কুমারের মধ্যে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে চিরকালের জন্য যেন কেটে গেল সুরের ছন্দ। দিনটা ছিল ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর। সকাল থেকেই কিশোর কুমার বলছিলেন, তার দুর্বল লাগছে। মজা করে কিশোর কুমার বলেন, ‘তুমি যদি ডাক্তারকে খবর দাও, আমার কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হবে!’ এটাই ছিল তার শেষ কথা। প্রয়াণের তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে এখনো তার হাত ধরেই বলিউড চিরকিশোর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়