শাহজালাল বিমানবন্দর : পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের সময় গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বাড়ছে সহিংসতা

পরের সংবাদ

স্মৃতিকথা > কবি ও সাংবাদিক শাহিদ আনোয়ার ডেইজী মউদুদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন কবি ও সাংবাদিক শাহিদ আনোয়ার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভুগছিলেন, অবশেষে হার মানলেন। আমরা জানি মৃত্যু অবধারিত। মানুষকে এই পৃথিবীর মায়া একদিন ছেড়ে যেতেই হবে, কেবল কেউ আগে আর কেউ পরে। শাহিদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। আমি যখন আশির দশকে চট্টগ্রাম ভার্সিটির বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি, তখন তিনি ইংরেজি বিভাগে পড়ছেন। ইংরেজি বাংলা পাশাপাশি বিভাগ। তাকে দেখতাম, ভীষণ চুপচাপ! ঠাণ্ডা শীতল এক মানুষ, তবে রোমান্টিক এক কবি। আমাদের মিষ্টি বান্ধবীকে তার ভালো লেগেছিল, কিন্তু বান্ধবীর মন ছিল হয়তো বা অন্য ছকে বাঁধা, সে ধরা দিল না, আর শাহিদ ভাই কবিতা লিখলেন : কবিতার নাম ‘ক্যাম্পাসে লীনা অর্থাৎ ক্যাম্পা সেলীনা:..’ একবার ভাবুন তো কেন রোমান্টিক কবি! আমার তো কবিতার একটি চরণ খানিকটা মনে আছে, যদি ভুল না হয়, ‘সেলীনা আক্তার তুমি প্রস্তুত থাকো তোমার নীল শাড়িটার নীল আঁচল উড়িয়ে’। ফেসবুকের পাতাগুলো ভরে গেছে শাহিদ ভাইয়ের শোকগাথায়। তার সতীর্থরা লিখেছেন, কবি বন্ধুরা লিখেছেন। আমি ৮৫ সাল থেকে উনাকে চিনেছি এবং জেনেছি অন্যরূপে/ আমার বিয়ের দিন থেকেই সেই বন্ধনের সূচনা/ আমার বিয়েতে চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিকরাই ছিলেন বরযাত্রী, খালিদ ভাই, বিশু, কায়সার ভাই, প্রলয়, শ্যামল দত্ত, পিন্টু, সাহিদ উদ্দীন, মাইনুল ভাই, অনীল ব্যানার্জী, নান্নুদা, উত্তম সেনদের সাথে শাহিদ ভাইও ছিলেন। বিয়ের দিনের একটি ছবি আছে, তারা বসেছিলেন একই সারিতে। এরপর থেকে ফুলকির বিভিন্ন সাহিত্যাসর, অচিরা পাঠচক্রের প্রোগ্রাম, কখনো আলিয়স ফ্রঁসেজ, কখনো শিল্পকলা একাডেমিতে দেখা হতো শাহিদ ভাইয়ের সাথে। এরপর ১৯৮৬ এ দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশিত হলে আমরা একই টেবিলে বসে কাজ করেছি দীর্ঘদিন ধরেই।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তার কবিতা চর্চা অব্যাহত থাকে। কিন্তু তিনি তো সাম্যবাদের চেতনায় বিভোর থাকা মানব!
সমাজতন্ত্রের দীক্ষায় দীক্ষিত মানুষটি কেবল ভাবতেন, কখন সাধারণ মানুষের মুক্তি ঘটবে! কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার ঠিকই বলেছেন : শাহিদ আনোয়ার মনে করত, নতুন শতাব্দীর আগমনের সাথে সাথে পৃথিবীতে আরেকটি বিপ্লব ঘটবে। সমাজতন্ত্র কায়েম হবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে। কিন্তু এরই মাঝে সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডাধারী দেশ রাশিয়া ভেঙে টুকরো হয়ে এই চেতনার পতন ঘটে। বিশ্বের এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনায় কবি শাহিদ আনোয়ার মুষড়ে পড়েছিলেন। এই সময় কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার মধ্যহ্ন থেকে শাহিদ আনোয়ারের ৪টি কবিতার বই প্রকাশ করে কবিকে প্রাণিত করেন। প্রথম কবিতার বই ‘কুঁকড়ে আছি মনোটোনাস গর্ভে, এরপর শুড়িখানার নুড়ির মাঝে, দাঁড়াও আমার ক্ষতি এবং বৈদেহী এক ওষ্ঠ পোড়ে’ কাব্যগ্রন্থ। সব গ্রন্থই শাহিদ ভাই আমাকে সৌজন্য কপি দিয়েছিলেন। প্রত্যেকটিতে উনার হাতের লেখা এখন স্মৃতি হয়েই আছে। তার কবিতার ছত্রে ছত্রে তার মনোকষ্ট আর হতাশার ছাপ বিদ্যমান। আর কবিতার বিষয়বস্তু নির্মাণ, প্রতিটা শব্দচয়ন এমনকি উপমা ও উৎপ্রেক্ষায় তিনি কাব্যকলার জগতে নিজেকে নিয়ে গেছেন শীর্ষ স্থানে। সব সময় অন্য মনস্ক থাকতেন, নিজে নিজে কী যেন ভাবতেন, আর এই ভাবনার পরিমণ্ডল থেকেই তিনি উপহার দিতেন এক এক সেরা কবিতা। কবিতায় এমন সুন্দর অন্ত্যমিল খুব কম কবিই দিতে পারেন। যেমন- কুঁকড়ে আছি মনোটনাস গর্ভে/ধাত্রী আমার মুক্ত কখন করবে কিংবা ‘শুড়িখানার নুড়ির মধ্যে একটি গোলাপ ফোটে/একটি রেণু গর্ভে আমার একটি রেণু ঠোঁটে’, অথবা ‘তোমার দু চোখে সখী জাদুকরী গুণ/ সারাতে ময়ূর হয় নিষেধে শকুন’ মূলত শাহিদ আনোয়ারকে নিয়েই লিখতে গেলে লেখা শেষ হবে না। তিনি এতই শক্তিমান কবি ছিলেন, অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী, তুখোড় মেধাবী, যথেষ্ট পড়াশোনা জানা অতি প্রাজ্ঞ এক মানুষ ছিলেন। আমি কোনো দিন উনাকে কাউকে বড় কথা বলতে দেখিনি, আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তিনি নিরালোকের দিব্যরথে চড়ে পাড়ি দিলেন অনন্তের পথে। প্রিয় শাহিদ ভাই, আপনি যেখানে গেছেন ভালো থাকেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়