তেজগাঁওয়ে বাসায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ

আগের সংবাদ

১৫ সদস্যের দলে আট নতুন মুখ : আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা

পরের সংবাদ

অপরিকল্পিত পাওয়ারলুম ফ্যাক্টরি স্থাপনে জনজীবন অতিষ্ঠ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) থেকে : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামে মানুষ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন তাঁত ফ্যাক্টরি। এ তাঁত শিল্পের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে –তারা ধরে রেখেছেন নিজেদের ঐতিহ্য। নিজ নিজ বসতবাড়িতেই তাঁত ফ্যাক্টরি করে জীবিকা অর্জন করে চলেছে হাজার হাজার নারী-পুরুষ। নিজ কর্মদক্ষতায় বাহারি রঙের নানা নকশা সংবলিত কাপড় তৈরি করে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করছে তাঁত শিল্পে উৎপাদিত লুঙ্গি, শাড়ি ও গামছা।
পূর্ব পুরুষের হাতে শেখানো সূত্র ধরেই এ প্রজন্মের পথচলা। যদিও পূর্ব পুরুষেরা হাতে বুনানো কাঠের তাঁতে তৈরি করত লুঙ্গি, শাড়ি ও গামছা। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে কাঠের তাঁতের পরিবর্তে চালু হয়েছে বিদ্যুৎ চালিত পাওয়ারলুম। আগে শারীরিকভাবে কঠোর পরিশ্রম হতো শ্রমিকদের, বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত পাওয়ারলুমে তেমনটা হয় না। বিদ্যুতের সুইচ অন করলেই চলে মেশিন। দৃষ্টি দিতে হয় শ্রমিকদের কাপড়ের নকশা তৈরিতে আর সুতা সরবারহের জন্য। সময়ের সঙ্গে আমরা পেয়েছি এ তাঁত শিল্পের মাধ্যমে উন্নত পোশাক। গর্বিত হচ্ছি পোশাক সভ্যতার উন্নত শিখরে যাওয়ার চেষ্টায়। তবুও পাওয়ার চেয়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ শিল্পের দ্বারা এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষতির পরিমাণও নেহাত কম নয়। পাওয়ারলুমের শব্দদূষণ, সুতা রঙের কেমিক্যালের বর্জ্যরে ফলে পানিদূষণ এখন সাধারণ ঘটনা। এছাড়া যোগ হয়েছে বহিরাগত শ্রমিকদের নানান অপকর্ম। পাওয়ারলুমের শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি নষ্ট, প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নেয়াসহ এলাকার অধিকাংশ মানুষের মেজাজ খিটখিটে স্বভাব হচ্ছে।
অপরদিকে যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সুতা রঙের ডাইং হাউজ। সুতা রঙের কেমিক্যালের পানি ভূগর্ভস্থ হওয়ার কারণে এসব এলাকার টিওবওয়েলের পানি খাবারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই ডায়িংগুলোর মাধ্যমেই সুতা রঙের বর্জ্য তৈরি হয়। এই বর্জ্যগুলো নিষ্কাশনের জন্য সঠিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বৃষ্টি মৌসুমে আবদ্ধ বর্জ্যগুলো ছড়িয়ে পড়ে নানান স্থানে। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট ও জলাশয়গুলো মাছ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হওয়াসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ ।
এলাকার সচেতন মহল জানান, অপরিকল্পিত তাঁত শিল্পে প্রতিনিয়ত জীবিকা অর্জন হলেও জীবন রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। আমরা প্রতিনিয়ত শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি। বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় মানুষ যেখানে সেখানে পাওয়ারলুম ফ্যাক্টরি গড়ে তুলছে, মানছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতি। মানছে না এলাকার ভুক্তভোগীদের কোনো বাধা। নির্দিধায় বছরের পর বছর চলছে শব্দদূষণ, পানিদূষণ আর সরকারি নিয়ম-নীতি ভাঙার নানান অজুহাতের অপকৌশল ফ্যাক্টরি মালিকদের। এতে কতিপয় ডাইং হাউজ ও তাঁত শিল্প মালিকদের উন্নতি হলেও এলাকার মানুষের হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এলাকায় তাঁত ফ্যাক্টরির কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ম-নীতি মেনে পরিচালিত হোক এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি। এলাকায় তাঁত ফ্যাক্টরির কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ম-নীতি মেনে পরিচালিত হোক- এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।
এ ব্যাপারে বেলকুচির তামাই হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ারলুম ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ ফজলার রহমান তালুকদার জানান, বর্তমান তাঁত শিল্পের সুতা ও রঙের দাম বৃদ্ধি এবং এই শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে রয়েছে। পরিবেশ রক্ষার্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস ।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, পাওয়ারলুমের শব্দদূষণ ও সুতা রঙের বিষাক্ত কেমিক্যালের পানিদূষণের ফলে কানের বিভিন্ন সমস্যা, প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম, মানুষিক সমস্যা, নানাবিধ চর্ম রোগ, পেটের সমস্যা, কিডনি ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইপিজেডের ন্যায় একটি জোন তৈরি করে নিয়ম মেনে পাওয়ারলুম স্থাপন করা প্রয়োজন। বসতবাড়িতে অনিয়তান্ত্রিকভাবে পাওয়ারলুম স্থাপন করার ফলে শব্দদূষণ, পানিদূষণ হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার তন্নি জানান, তাঁত শিল্পের বর্জ্য ও পানিদূষণের ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যেহেতু দীর্ঘদিনের সমস্যা, তাই স্বল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব না। তবে পর্যায়ক্রমে তাঁত শিল্পকে উন্নত ও পরিবেশসম্মত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিসুর রহমান জানান এলাকার পাওয়ারলুমের শব্দদূষণ ও পানিদূষণের ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও পাওয়ারলুম মালিকদের যৌথ উদ্যোগে এটি সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। আশা করছি, অতিদ্রুত সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়