তথ্যমন্ত্রী : বিদেশি টিভির ক্লিন ফিড ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে

আগের সংবাদ

দখল চলছেই, উদ্ধার গতিহীন > বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল : বহুতল ভবনের বদলে ভাঙা হয়েছে ১০টি টিনের ঘর

পরের সংবাদ

জন্মদিনে আলাপচারিতায় সাবিনা ইয়াসমিন : ‘সংগীত নিয়ে গবেষণায় আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাবিনা ইয়াসমিন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশেষ এই দিনকে ঘিরে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন
এই শিল্পী। লিখেছেন শাহনাজ জাহান

জন্মদিন
করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু করার পরিকল্পনা নেই। তবে আমার খুব কাছে দু-একজন বন্ধু, আত্মীয় হয়তো বাসায় আসবে। এটুকুই। জন্মদিনকে ঘিরে কোনো অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা নাই। অন্য সব দিনের মতোই এবারের জন্মদিন কাটবে।

এ সময়ের ব্যস্ততা
সিনেমার নতুন কোনো গানে তো অনেক দিন ধরেই কাজ করিনি। আর এখন তো করোনার জন্য দীর্ঘ সময় সবাইকে বসে থাকতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি কাজ করেছি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে। এছাড়া পুলিশের জন্য একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছি। ‘কে রেখেছে নিরাপদ আমায়/ কে বিপদে পাশে দাঁড়ায়’- এমন কথায় সাজানো গানটি লিখেছেন কবির বকুল। ‘জনতার পুলিশ’ শিরোনামের গানটির সংগীতায়োজন করেছেন সুমন কল্যাণ। গত ২৪ জুন মগবাজারের একটি স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করা হয়।

এই সময়ের সংগীতচর্চা
নিয়ে মূল্যায়ন
সময়ের সঙ্গে সবকিছুই তো বদলায়, কিন্তু মৌলিক জায়গাটা আসলে একই রকম থাকে। এখন নতুন আঙ্গিকের, নতুন ধারার গান হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ গানই হৃদয়ে দাগ কাটতে পারছে না। এখন মানুষও হয়তো আগের মতো সময় দিয়ে গান শুনে না। মানুষের কাছে একাধিক অপশন তৈরি হয়েছে। দেখা ও শোনার মাধ্যম বেড়েছে। অনলাইন সবকিছুকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এজন্য মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, আবার জীবনে অস্থিরতাও বেড়েছে। কেউ এখন স্থির হয়ে মনোসংযোগ করে গানও বোধহয় শুনে না। এছাড়া এখন ভালো গীতিকারের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। গানের কথার মাঝে একটা শক্তি থাকতে হয়, সুরের মধ্যে শক্তি থাকতে হয়, সংগীতায়োজনের মধ্যে শক্তি থাকতে হয়। গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং শিল্পী মিলেই তো গান তৈরি হয়। এই সম্মিলিত শক্তিটার অভাব চোখে পড়ে। এখন গীতিকার, সুরকার, শিল্পীর মধ্যে সমন্বয় নেই। সবাই মিলে একটা ভালো গান করার চেষ্টা খুব বেশি চোখে পড়ে না। আমরা একটা গান করার জন্য যে পরিশ্রম করেছি, এখনকার শিল্পীরা সেটা করতে চায় না। আমরা একটা গান রেকর্ড করার আগে, অনেকবার মহড়া করেছি। অনেক আলোচনা করেছি। প্রচুর প্রস্তুতির পর রেকর্ড করতে দাঁড়িয়েছি। এখন অনেক শিল্পীকে দেখেছি, এই পরিশ্রমটা করতে চায় না। আমাদের সময়ে অনেক গানই এখনকার শিল্পীরা গাইছেন। আমাদের গানগুলোয় মনে হচ্ছে দিনে দিনে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত
বিভাগ প্রসঙ্গে
সংগীত নিয়ে গবেষণার কাজ তো তেমন হয় না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগ আছে। তারা নানা রকম গবেষণার কাজ করতে পারে। কিন্তু তেমনটা চোখে পড়ছে না। আমাদের অনেক কালজয়ী গান সংরক্ষণই ঠিকমতো হচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম জানবে কী করে? আমাদের আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিনসহ বরেণ্য সংগীতকারদের কথা তো জানাতে হবে নতুন প্রজন্মকে। এর জন্য তো তাদের গানগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। আমার গাওয়া অনেক গানই তো সংরক্ষণ হয়নি। সংরক্ষণের অভাবে গানগুলো হারিয়ে গেছে। গান নিয়ে আরো গবেষণার কাজ করতে হবে। সেই কাজগুলো তো তেমন হচ্ছে না। আমি মনে করি- বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে গবেষণায় আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাশাপাশি গান শেখার জন্য গুণী শিক্ষক জরুরি। শিল্পকলা একাডেমি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। বড় বড় ওস্তাদদের দিয়ে গান শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের শিল্পীদের সঙ্গে বিশ্বের বরেণ্য সংগীতজ্ঞদের পরিচয় করানোর জন্য তাদের নিয়ে কর্মশালা, সেমিনার করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকেও এরকম উদ্যোগ নিতে পারে।

মিউজিক ভিডিও প্রসঙ্গে
গান নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু গান থেকে যদি ভিডিও মুখ্য হয়ে যায়, তবে সেটা গানের আবেদন নষ্ট করে। এখন তো অনেক ভিডিও দেখি, সেখানে গানের চেয়ে অন্য বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভিডিওতে মডেলদের এমনভাবে দেখানো হয়, তখন গান শোনার চেয়ে ভিডিও দেখাটাই গুরুত্ব পায়। আমি মনে করি, গান মূলত শোনার বিষয়। গান শুনে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। গানের সঙ্গে ভিডিও জরুরি না। এরপর কেউ যদি গানের সঙ্গে ভিডিও তৈরি করেন, সেটাতে পরিমিতিবোধ থাকা দরকার।

এ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে
এখনকার তরুণ কণ্ঠশিল্পীদের মাঝে দেখেছি, নিষ্ঠার অভাব। তারা সংগীতশিল্পী হওয়ার জন্য ঠিক সাধনা করতে চায় না। আমাদের প্রজন্মে যারা গান শিখতে গিয়েছে, সেটাকে নিয়ে সাধনা করেছে। এখন অনেককেই দেখেছি তারকা হওয়ার মোহ থেকে গানের শিল্পী হতে চায়। এটা মনে হয় ঠিক পথ না। গান গাইতে হলে তো ক্লাসিক্যাল শিখতে হবে। বলছি না ক্লাসিক্যাল শিল্পী হতে হবে। কিন্তু মূল ভিত্তিটা তো তৈরি করতে হবে। সাধনা করতে না পারলে তো শিল্প সৃজন হবে না। এই প্রজন্মের অনেক শিল্পী আমাদের প্রজন্মের অনেক শিল্পীর গানই নতুন করে গাইছেন। কিন্তু তারা গানটি করার সময় অনুমতি নেয়া তো দূরে থাক, একবারও মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারের নাম বলেন না। সামান্য সৌজন্যতাবোধও দেখি না অনেকের মাঝে। এটা শিষ্টাচারের অভাব। এতে বোঝা যায় সঠিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে এ প্রজন্মের বিকাশ হচ্ছে না। কৃতজ্ঞতাবোধ, সৌজন্যতাবোধ শিখতে হয়। আমার অনেক গানই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গাইছেন। কিন্তু গানটি করার সময় মূল শিল্পী হিসেবে আমার নামটিও বলেন না। এটা তো ঠিক না। তাই বলবো, গান শেখার সঙ্গে সঙ্গে শিষ্টাচারও শিখতে হবে। গান শিখতে গেলে সাধনা করতে হবে, অনেক বেশি সাধনা করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়