প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

উদ্ভাবিত ধানে এক মৌসুম রোপণে তিনবার ফসল

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : ধান গবেষক বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত দেশীয় ধানের একবার রোপণে তিনবার ফলন তোলা যায়। এই জাতের ধান একবার রোপণ করে বছরে চারবার ফসল তোলার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি এই গবেষক। মৌলভীবাজারে কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধান-বিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ২০টি বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান আবিষ্কার করেছেন।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর কয়েক বছর ধরে নিজ গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তোলেন মাঠপর্যায়ের একটি গবেষণাগার। সেখানে দেশীয় ধান নিয়ে বিশদ গবেষণার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন প্রায়-বিলুপ্ত দেশি ধানের সংগ্রহ। ড. আবেদ চৌধুরী দেশীয় নতুন উদ্ভাবিত প্রকৃতিসহিষ্ণু হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম-এ চার জাতের ধানের উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছেন। এই ধানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বোরো মৌসুমে এ চার জাতের ধান বীজতলা তৈরি করে মাঠে রোপণ করার পর বছরে তিনবার ফসল সংগ্রহ করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের আমতলীবন মাঠে একবার রোপিত ধান থেকে তিনবার ফসল তোলছেন কৃষকরা। একবার রোপণে তিন মৌসুমে ধান তোলতে পেরে এ ধানের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কথা হয় হাজীপুর গ্রামের আজাদ উল্ল্যার সঙ্গে। তিনি বলেন, আবেদ সাহেবের ধানের বীজ দিয়ে বোরো ধান কাটার পর ক্ষেতে নাড়া (মোড়া অংশ) রেখে দেই। সেখান থেকে ৫০-৫৫ দিন পর আরেকবার ধান কাটতে পেরেছি। তবে এটা বোরো না আউশ জানি না। আশা করছি কার্তিক মাসে আবার ধান কাটতে পাবর এই জমি থেকে।
হাজীপুর গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুল খালিক বলেন, একবার রোপণে তিনবার ফসলে খরচ কম এবং ফলন পাওয়াতে আমাদের এলাকায় অনেকেই চাষ করছেন। জমিতে রেড়ি করে বোরো রোপণের পর আর জমি রেড়ি করতে হয় না। নির্দিষ্ট একটা মাপে ধান কেটে নেয়ার পর মোড়া অংশে লতা পাতা ও ঘাস বাচাই করে সার দেই। এটুকু করলেই আবার ধানের গাছ বাড়তে থাকে। যদি পোকা মাকড়ে ধরে তাহলে সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
হাজীপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, কয়েকটা ধানের জাত থেকে গবেষণা করে আবেদ সাব এই বীজ চাষ করার জন্য দিয়েছেন। এই ধান বাতাসে ফেলতে পারে না। মেঘ বৃষ্টিতে নষ্ট করতে পারে না। খুব শক্ত ধানের গাছ। বোরো মৌসুমে বিঘাতে ২৪/২৫ মণ ধান পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার কিছুটা কম হয়। তৃতীয় বারে আরো কিছু কম ফলন হলেও বিঘাপ্রতি ১৬/১৮ মণ ধান পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন ধান কম পাওয়া গেলেও কৃষকের লাভ হয়। আর ধানটা আগাম ঘরে তোলা যায়।
অস্ট্রেলিয়া থেকে মুঠো ফোনে ধান গবেষক ও জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী জানান, ধান চাষের জন্য প্রতি মৌসুমে জমি চাষ দিয়ে রোপণ করতে হয়। এতে কৃষকের অনেক টাকা খরচ হয়। এই খরচের হাত থেকে কৃষককে বাঁচানোর জন্য দশ বছর গবেষণার পর এমন ধান সৃষ্টি করতে পেরেছি। যা বোরো মৌসুমে রোপণের পর ধাপে ধাপে তিনবার পাকা ধান ঘরে তোলা যায়। তিন ধাপ থেকে বছরে চার ধাপ ফসল তোলার গবেষণা অব্যাহত আছে। এই চাষাবাদ দেশসহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়