ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

রাজা মহাশয়ের রাজকীয় ঘুম

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজা মহাশয়ের যে কী হলো- কেবল ঘুমান আর ঘুমান তিনি। উঠতে ঘুমান। বসতে ঘুমান। খাইতে ঘুমান। নাইতে ঘুমান। এত ঘুম কোথা থেকে আসে? কী এর কারণ? রাজা মহাশয় ঠিক বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারার অবশ্য কথা নয়। কারণ কখন যে তার চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভিড় করে, তিনি টেরই পান না।
ঘুমের ঘোরে সমুদ্রের গর্জনের মতো চলে তার নাক ডাকা। নাক ডাকা মানে রাজা মহাশয়ের গভীর ঘুমের সংকেত। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে নিজের নাক ডাকার শব্দেই আবার তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে জেগে তিনি হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকবেন। আর অবাক হয়ে বলবেন, ‘দেখো দেখি কাণ্ড! ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নাকি আমি?’
তখন কেউ আর হ্যাঁ-না কিছু বলবেন না। বলবেন কেমন করে? রাজা মহাশয়ের ঘুম বলে কথা। তারপর কিছুসময় আবার রাজকাজ চলতে থাকবে। কিন্তু কয়েক মিনিট পরই আবারো তার নাক ডাকা শুরু হয়ে যাবে। রাজা মহাশয়ের নাক ডাকা মানে গভীর ঘুম।
এমন অযাচিত ঘুমের জন্য রাজা মহাশয় দিন দিন বড়ো বিরক্ত হয়ে উঠলেন। মনে মনে বলেন, ‘না। আর পারছি না। ঘুমের জন্য জীবনটা প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে গেল। কী করে যে এই ঘুম থেকে আমি চিরতরে মুক্তি পাব। বুঝতে পারছি না। কিন্তু যে করে হোক এই ঘুম থেকে আমার মুক্তি চাই-ই চাই।’
তিনি একদিন উজিরকে ডেকে বললেন, ‘উজির সাহেব, কিছু একটা করুন। তিন দিনের মধ্যে আমার এই ঘুম তাড়ানোর উপায় বের করুন। যদি না-পারেন, তাহলে বলে দিচ্ছি- আমি আপনার গর্দান নেবো কিন্তু।’
রাজা মহাশয়ের রাজ আদেশ শুনে উজিরের বুক কেঁপে উঠল। মুখ কেমন যেন পাংশু বর্ণ ধারণ করল। উজির সাহেব ভাবেন- রাজা মহাশয়ের এই রাজকীয় ঘুম তাড়াতে না পারলে এবার বুঝি আর রক্ষা নেই। গর্দান যাবেই যাবে। কী করা যায় এখন? গভীর ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি। জীবন-মরণ সমস্যা!
পরে উজির করলেন কী- মন্ত্রীবর্গ ও সেনাপতিকে নিয়ে জরুরি সভায় বসলেন। মনে মনে ভাবলেন- গর্দান গেলে আমার একার যাবে কেন? আমিই শুধু রাজ কর্মচারী, নাকি ওরাও? ওরাও তো প্রতি মাসে আমার মতোই বেতন নেয়। কাজেই গর্দান গেলে সকলেরই যাক। এই ভেবে তিনি সকলের উদ্দেশে বললেন, ‘রাজা মহাশয়ের রাজকীয় ঘুম তাড়ানোর জন্য আমাদের একটা কিছু উপায় বের করতে হবে। উপায় বের করতে না পারলে সকলেরই গর্দান যাবে।’
উজিরের কথা শুনে উপস্থিত সকলেই হায় হায় করে ওঠল। তারা আর এক মুহূর্তও দেরি করল না। রাজা মহাশয়ের রাজকীয় ঘুম তাড়ানোর দাওয়াই আনার জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তারা একে জিজ্ঞেস করে। ওকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কেউ আর ঘুম তাড়ানোর উপায় বলতে পারল না। কী করা যায়? গর্দান বুঝি এবার আর রাখা গেল না। মন্ত্রীবর্গ এবং সেনাপতি একেবারে হাল ছেড়ে দিলেন। মহাভাবনায় পড়ে গেলেন তারা।
তিনদিন পর এক সকালবেলা রাজা মহাশয় সকলকে রাজ দরবারে ডাকলেন। সভাসদকে নিয়ে তিনি রাজকাজে বসলেন। কাজের ফাঁকে রাজা মহাশয় জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কি উজির! উপায় কিছু হলো?’
রাজা মহাশয়ের প্রশ্ন শুনে উজির সাহেব কেমন যেন থ হয়ে গেল। তিনি মুখে কোনো জবাব দিতে পারলেন না। শুধু নিজের গর্দানটা কর্তনের জন্য রাজা মহাশয়ের সামনে নীরবে মাথানত করলেন। উজিরের দেখাদেখি মন্ত্রীবর্গ এবং সেনাপতিও এগিয়ে এসে একই কাণ্ড করল।
রাজা মহাশয় বুঝতে পারলেন- সুখবর কিছু নেই। সকলেই ব্যর্থ হয়েছে। রাজা মহাশয় রাগে একেবারে গজরাতে লাগলেন। পরে বজ্রকণ্ঠে আদেশ দিলেন, ‘জল্লাদ! সব কটার গর্দান নামিয়ে ফেল।’
রাজার আদেশ বলে কথা। গর্দান নামানোর জন্য খড়গ হাতে নিয়ে জল্লাদ মুহূর্তেই তৈরি হয়ে গেল। কিন্তু সে সময় কোথা থেকে যেন ছোট্ট এক খুকি হুড়মুড় করে এসে রাজদরবারে প্রবেশ করল। বলা নেই কওয়া নেই, আচমকা এই ছোট্ট খুকিকে দেখে সকলেই চমকিত হলেন।
সকলকে আরো অবাক করে দিয়ে ছোট্ট খুকি সকলের পক্ষ থেকে রাজা মহাশয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। মিনতি করে বলল, ‘মহারাজ! আপনি সকলের ওপর থেকে কঠোর রাজ আদেশ তুলে নিন। কারণ লঘু পাপে গুরু দণ্ড- এটা হতে পারে না। আমি আপনার জন্য ঘুম তাড়ানো দাওয়াই নিয়ে এসেছি।’
ছোট্ট খুকির কথা শুনে রাজা মহাশয়, উজির, মন্ত্রীবর্গ এবং সেনাপতি সকলের মুখেই খুশির ঝিলিক দেখা গেল। জল্লাদ খড়গ নামিয়ে মাথা নত করে পাশে গিয়ে দাঁড়াল। রাজা মহাশয় খুশি হয়ে খুকিকে কাছে ডাকলেন। বললেন, ‘দেরি করছ কেন মা? জলদি আমাকে ঘুম তাড়ানোর দাওয়াইটা দাও।’
খুকি তখন কেতলি থেকে চিনামাটির পেয়ালায় গরম রং চা ঢেলে রাজা মহাশয়ের সামনে নিয়ে পরিবেশন করল। রাজা মহাশয় এক চুমুক রং চা পান করে খুবই পুলকিত হলেন। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তিনি বললেন, ‘বাহ্ একেবারে অমৃত! এই দাওয়াই-ই তো আমি এতদিন খুঁজছিলাম রে মা। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।’
পরে তিনি সভাসদকে তিরস্কার করে বললেন, ‘ছোট্ট একটা মেয়ে ঘুম তাড়ানোর দাওয়াই জোগাড় করে আনতে পারল। অথচ তোমরা কেউই পারলে না। ধিক তোমাদের। আনতে পারবেই বা কেমন করে। তোমাদের সবকটাই যে গর্দভ আর ছাগল।’
রং চা পানের পর মুহূর্তেই রাজা মহাশয়ের শরীর মন দুটোই চাঙ্গা হয়ে ওঠল। দু-চোখ থেকে ঘুম সরে গেল। স্বস্তিতে তিনি রাজকাজে মনোনিবেশ করলেন।
এদিকে নিজেদের গর্দান বাঁচানোর জন্য উজির, মন্ত্রীবর্গ এবং সেনাপতি ছোট্ট খুকিকে অনেক ধন্যবাদ দিলো। পরে উজির সাহেব ছোট্ট খুকিকে একশো স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিয়ে বিদায় করেছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়