মানুষের কল্যাণ করার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন : সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা

আগের সংবাদ

প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন! মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশনা : জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

পরের সংবাদ

গতি ফিরেনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : বিধিনিষেধ শেষ হলেও এখনো গতি আসেনি খুচরা ব্যবসায়। তাই মার্কেট শপিংমল খোলা থাকলেও অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। বেচাকেনা বাড়তে থাকলে লকডাউনের ক্ষতি দ্রুতই কাটিয়ে উঠবেন বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। লকডাউনে রাজধানীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় নিয়োজিত লাখ লাখ ব্যবসায়ীর একই হাল। দোকানপাট বন্ধ থাকায় একদিকে বিপাকে মালিকরা, অন্যদিকে কর্মচারীদেরও ত্রাহি অবস্থা।
টানা ১৯ দিন কঠোর বিধিনিষেধ শেষে গত ১১ আগস্ট সারাদেশের মার্কেট-শপিংমল খুলে দেয় সরকার। এরপর থেকেই পুরোদমে চলছে ব্যবসা কার্যক্রম। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্য বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নতুন-পুরনো সব উদ্যোক্তাই কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তাদের অনেকেই দেনার দায়ে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের জেরে সাধারণ ছুটি কিংবা জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি না থাকা, দোকানপাট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে নতুন-পুরনো সব উদ্যোক্তাই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিধিনিষেধ শিথিল হলেও বাজার চাহিদা আগের মতো নেই। সংকটকালীন অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন; কারো বেতন কমেছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে একান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া কেউ বাড়তি কিছু কিনছেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতা কম থাকায় এখনো গতি আসেনি বেচা-কেনায়। রাজধানীর মিরপুর নিউ সুপার মার্কেট, মিরপুর কো-অপারেটিভ মার্কেট, শ্যামলী স্কয়ার শপিংমল, গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি সুপার মার্কেট, ফরচুন সুপার মার্কেটে এখনো ফিরে আসেনি চিরচেনা সেই রূপ। অন্যান্য সময় লোক সমাগম ভালো থাকলেও লকডাউন-পরবর্তী ক্রেতাদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা আশানুরূপ হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্রেতাই কেনাকাটা না করে দোকানের সামনে দিয়ে ঘুরছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ক্রেতারা আগের তুলনায় কম কেনাকাটা করছেন। মৌচাক মার্কেটের সাদিয়া বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী আবদুল হালিম বলেন, আমাদের শোরুমে শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়। লকডাউনে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। লকডাউনের পরেও বিক্রির অবস্থা খুব বেশি ভালো না। তবে করোনাকালে যে ব্যবসা করতে পারছি, এটাই শুকরিয়া।
তিনি আরো বলেন, কঠোর লকডাউনে ব্যবসার যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে, তা কীভাবে পুষিয়ে নেব জানি না। পরিচালনা ব্যয় বহন করে তাদের মতো অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে জেন্টল পার্ক শোরুমের ম্যানেজার বলেন, বিক্রির অবস্থা এখন ভালো না। তবে আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হবে।
গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিধিনিষেধ মানুষের জীবন ও জীবিকার তাগিদেই তুলে নেয়া হয়েছে। গত ১১ আগস্ট থেকে দোকান, শপিংমল ও মার্কেট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলার রাখার অনুমতি দেয় সরকার। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি। প্রতি প্রতিষ্ঠানে গড়ে চারজন কর্মচারী ধরা হলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২ কোটি ১৪ লাখ। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ১ দিন দোকান বন্ধ থাকলেই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা।
লকডাউনের কারণে সব ব্যবসা এখন ধসের পথে। পাইকারি ব্যবসা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একেকটি দোকানে গড়ে দিনে বিক্রি ধরা হয় ২০ হাজার টাকা। আর এই বিক্রির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ধরা হয় ১০ শতাংশ। এতে দৈনিক লাভের ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৭৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহামারি করোনার ধাক্কায় ছিটকে পড়ছেন ব্যবসার মূল স্রোত থেকে। লোকসান সামাল দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসা। কিন্তু ব্যাংকের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার যোগাযোগ না থাকায় সরকারের এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা) খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এর সুফল গিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে না বা তারা সুবিধা নিতে পারছেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়