মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

বাগদা চাষে অভাবনীয় সাফল্য সমর দাশের

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া, খুলনা: বিএ পাস করে চাকরির পেছনে ঘুরে হতাশ, অন্যের ঘেরে ৪ বছর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন। তারপর ১০ বছর মাছ কোম্পানিতে চাকরি করেন কিন্তু কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিলেন না। পিপাসা ছিল নিজে কিছু করার ও স্বাবলম্বী হওয়ার। স্বপ্ন পূরণের জন্য অবশেষে যোগাযোগ করেন উপজেলা মৎস্য দপ্তরে।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে পরামর্শ নেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এটা ছিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের সমর দাশের বেকার যুবক থেকে সফল বাগদা চিংড়ি চাষি হয়ে ওঠার গল্প। তার সাফল্য গাথার গল্প শুনে এখন আশপাশের গ্রামের যুবকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ যাচ্ছেন সমর দাশের চিংড়ি প্রকল্প দেখতে, নাম অতিথি একুয়াকালচার। গ্রামের লোকজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন মৎস্য কর্মকর্তারাও যাচ্ছেন বাগদা চিংড়ির খামার দেখতে।
সমর দাশ ১১টি পুকুরে বাগদা চাষ করেন যার আয়তন ১.৫ হেক্টর পুকুরগুলো যেন কাঁচা সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে। পুকুরে বাগদা চিংড়ি চাষ করে অভাবনীয় সফলতা পাওয়া সমরকে এখন গ্রামের লোক এক নামেই চেনেন। আধুনিক পদ্ধতিতে তিনি বাগদা চাষ শুরু করেন। এ বছর তিনি ৭টি পুকুর চাষের জন্য প্রস্তুত করেন। যার মধ্যে ৬টি পুকুর ৩৫০০ বর্গমিটার করে ও ১টি পুকুর ২০০০ বর্গমিটার। প্রতি বর্গমিটারে তিনি ভাইরাস মুক্ত এসপিএফ ২৫টি রেণু মজুত করেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টন।
সম্প্রতি ইএমএস নামক মড়কে ৪৫-৫০ দিন বয়সের চিংড়ি মরে যাওয়ার ইতিহাস পাল্টিয়ে চিংড়িগুলো ২০-৩০ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। এরপরই বুকে সাহস জাগে সমরের। গত বছর একই জলাশয় হতে তিনি উৎপাদন করেন ১৮ টন বাগদা।
এ ব্যাপারে সমর দাশ বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে চিংড়ির সঙ্গে তিনি মিশ্রভাবে ভাঙ্গান, পারশিয়া ও কার্পজাতীয় মাছ চাষ করেন। এতে চিংড়ির মড়কের সম্ভবনা কম থাকে। কারণ কোনো কারণে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হলেও আক্রান্ত মাছকে কার্প মাছে খেয়ে ফেলে।
এতে অন্য চিংড়ি সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়। সরজমিন দেখা যায় চিংড়ির অক্সিজেন সাপ্লাই নিশ্চিত করতে তিনি প্রত্যেকটি ঘেরে ব্যবহার করছেন অ্যারেটর। প্রতিদিন পানির অক্সিজেন, লবণাক্ততা ও পিএইচ পরিমাপ করা হয়। রেণু মজুতকালীন লবণাক্ততা ১২ পিপিটির বেশি থাকে, পরবর্তী সময় তা ৫ পিপিটিতে নেমে আসে। পানির পিএইচ থাকে ৭.৫-৮.৫ এর মধ্যে।
সমর দাশের খামারের একটি বিশেষ দিক হলো- সেখানে বাণিজ্যিকভাবে অসময়ের তরমুজ, অবসিজন শিম, অবসিজন টমেটো, পেঁপে, করলা, বারমাসি লেবু, মরিচ, শসা, বরবটি, ঝিঙে, লাউ, পোল্লা, চিচিঙ্গা, জাত কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ঢ়েঁড়স, কচুরমুখী, ওলকচু, মেটে আলু প্রভৃতি সবজি চাষ করেন তিনি। সবজি থেকে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি জানান।
মাত্র ৬৬ দিনের নিবিড় পরিচর্যায় এখন একেকটি পিএল চিংড়ি ১৫ গ্রাম ওজন হয়েছে। চিংড়ির খাবার, বিদ্যুৎ খরচ, ওষুধ ও রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে তার ১ কোটি টাকা খরচ হবে। তবে চিংড়ি বিক্রি করলে প্রায় ১ কোটি টাকা লাভ হবে বলে জানান সমর দাশ।
তিনি আরো বলেন, তার চিংড়ি পুকুর দেখতে এখন আশপাশের গ্রাম ও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। এতে ভালোই লাগে তার। কখনো বিরক্ত হন না। সরকার এগিয়ে এলে তিনিসহ আরো অনেকের বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচবে। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে স্বপ্নের পালে বাতাস লাগবে অনেকের। সমর দাশের খামারে বর্তমান ১৩ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেন।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, সমর দাশ অত্যন্ত দক্ষ একজন চিংড়ি চাষি। ২০২০ সালে তিনি খামারটি শুরু করেন। মৎস্য দপ্তর হতে তাকে সর্বপ্রকার কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, অন্য বাগদা চাষিদের জন্য সমর দাশ অনুকরণীয়। তবে সমর যদি ব্যাংক ঋণের আবেদন করেন তাহলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়