মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

খালিদ আহসানের : অন্য পৃথিবীর গল্পসল্প

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্পার্ক জেনারেশনের ২০ এপ্রিল ১৯৭৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ‘নমিতা, বসতবাড়ি উপড়ে ফেলো’ নামাকরণকৃত একটি গল্প। গল্পটির রচনাকাল কবি-প্রচ্ছদশিল্পী খালিদ আহসান। এটি খালিদের প্রথম গল্প। সম্ভবত একমাত্র গল্প। যতটুকু জানা আছে আর কোনো সংকলন, লিটল ম্যাগাজিন অথবা পত্রপত্রিকায় খালিদের গল্প চোখে পড়েনি। অবশ্য, আমার জানাটা ভুল হলেই খুবই খুশি হবো।
মনে হবে যে, স্পার্ক জেনারেশন একজন পাঁড় কবি-প্রচ্ছদকারকে গদ্যকার হওয়ার প্রেরণা দিতে পেরেছে। আমরা শুরুতে, এস্টাব্লিশমেন্টবিরোধী প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলনের পুস্তিকা অর্থাৎ লিটল ম্যাগাজিন স্পার্ক জেনারেশনের সংখ্যায় কেবল ছয় সদস্যের লেখা ভিন্ন আর কাউকে আপাতত যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরিকল্পনাটা ছিল, বাছাই করে ক্রমান্বয়ে কাউকে কাউকে সঙ্গী করে তোলা। খালিদ আহসান সেভাবেই যুক্ত হয়, আর কয়েকজনের মতোই।
আলোচ্য সংখ্যায় সদস্যরা সবাই গল্প ও কবিতা লেখে। পূর্ব সম্পর্ক সূত্রে খালিদ আমাদের সঙ্গে আড্ডবাজিতে কিছুদিনের মধ্যেই সংযুক্ত হয়ে পড়ে। তাকে স্পার্ক জেনারেশনের ম্যাগাজিনে লিখতে উৎসাহিত করি। সময়ের প্রভাবে তারই রচিত ফসলটাই হলো খালিদ আহসানের গল্প- ‘নমিতা, বসতবাড়ি উপড়ে ফেলো।’
১৯৭৩-এর ২৩ ডিসেম্বর, স্পার্ক জেনারেশন যখন তাদের এস্টাব্লিশমেন্টবিরোধী প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা করে তখন খালিদ আহসান পনেরো পেরিয়ে দুরন্ত এক ষোলোয় সাহিত্যের ঘোড়সওয়ার। যতটুকু জানি, ওর জন্ম তারিখটা যথাসম্ভব, ৬ নভেম্বর ১৯৫৮। স্পার্ক জেনারেশনের সাহিত্য আড্ডায় নিয়মিত আসা-যাওয়ার কারণে আমাদের নানা ধরনের প্রকাশনার অলঙ্করণে ও প্রচ্ছদ অঙ্কনে খালিদ তার রঙ-তুলি-কালির ব্যবহার শুরু করে।
এমনকি, নব্বইয়ের দশকেও লিটল ম্যাগাজিন স্পার্ক জেনারেশন কর্তৃক প্রকাশিত গল্পকার হেনা ইসলামের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘বুড়ো শকুন ও নিহত কুসুম’কেও খালিদ মনোরম একটি প্রচ্ছদে শোভিত করে। সম্পাদক প্রকাশনীর নানান বুলেটিনের অঙ্গসৌষ্ঠব তো বটেই, সেই আশির দশকে এই প্রকাশনীরই তিনটি কাব্যগ্রন্থ- আসাদ চৌধুরীর ‘প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড়’, নির্মলেন্দু গুণের ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, আর আমি, স্বপন দত্তের ‘স্বপ্নের বসতবাটী ও অন্তর্লীন চাষ-আবাদ’ নয়ন সুখকর প্রচ্ছদও খালিদের শিল্প-চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আরও উল্লেখ্য, কবি শিশির দত্ত সম্পাদিত এদেশেরই ৪৮ জন কবির কবিতা ও তাদের কবিতা সম্পর্কিত ভাবনা এবং শিল্পী মুর্তজা বশীর অঙ্কিত কবি-প্রতিকৃতির রেখাভাষ্য সমন্বিত সর্বজন সমাদৃত ঢাউস কাব্যসংগ্রহ ‘স্বনির্বাচিত’র প্রচ্ছদটিও খালিদের শৈল্পিক কৃতীর নিদর্শন।
খালিদ আহসান অন্তর্গতভাবে মূলত কবিই। তার শিল্পীসত্তা হলো কবিতার সরোবরে এক রাজহংসের প্রমোদ পরিভ্রমণ। সে যে গীতিকার হয়েছে কখনো সখনো। আবার, একসময় হয়ে উঠেছে ডলস হাউস ডিজাইনার। এসব ভিন্ন জগৎ, তার কাব্যকার ও কথাশিল্পী হওয়ার পথে হোঁচট খাওয়ার মতো কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে কিনা, তা হতে পারে অনুসন্ধানের বিষয়। ওর কাব্যগ্রন্থ এ মুহূর্তে হাতের কাছে নেই। থাকলে খালিদের কবিতা নির্মাণের বিশেষ এক ধরনের মননশীল প্রকৌশলের ধরন উপস্থাপন করা সম্ভব হতো।
আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারেন, কবিরা কি সফল ব্যবসায়ী হতে পারে? স্যুডো দার্শনিকের মতো কেউ হয়তো ছদ্ম-গাম্ভীর্য ধারণ করে জীবনানন্দের গভীর সেই তাত্ত্বিক উক্তির অনুকরণ করে বলেই দিতে পারেন, কেউ কেউ পারে, সবাই পারে না। কথাটি অবশ্য সত্যিই বটে। কেউ কেউই পারেন, সবাই পারেন না। পারেন না যিনি, তিনি সৎ থাকেন বলেই পারেন না। আর যিনি পারেন, তিনি সর্বদা তো সততার অনুসারী হন না, হতে পারেনও না পরিস্থিতিগত অনেক করণে। যা-ই হোক, এখানে এই প্রসঙ্গটির অবতারণা করে যে কথাটি বলতে চেয়েছি। তা হলো, প্রকৃত কবিমনের মানুষেরা ব্যবসায় বুদ্ধিতে
অন্যদের চেয়ে ন্যূন হয়। তারা ব্যবসার লেজ-গোছ ঠিক রাখতে জানে না। ব্যবসাটাকে তারা কবিতার সততা দিয়ে ওজন করতে যায়। আর কেন ব্যবসাও একা করা যায় না। কোনো না কোনো পর্যায়ে কারো না কারো সহায়তা লাগে। সে ক্ষেত্রে যৌথতায় হাত মেলাতে হয়। বিপদ আসার ফাঁকফোকর তৈরি হয়। ডিজাইনার, প্রিন্টার, ফ্যাশন এক্সপার্ট, মডেল প্রমোটার হওয়ার মতো কত জগতেরই জাগতিক হাতছানি ছিল খালিদ আহসানের চারপাশে। সব ইশারাই তো তার কাব্যজগৎকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার মতো সক্ষমতা নিয়ে বিচরণ করে গেছে। যে দরদিরা চোখ ইশারায় নিরন্তর ডাক দিয়ে যায় তাদের সবাইকেই কি উপেক্ষায় পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায়! নজির আছে, রূঢ় বাস্তবতার ঘোরচক্রে ধাক্কা খেয়ে বহু মানুষই সর্বস্বান্ত হয়। শেষে তারা নিজের বৃত্তে ফিরে আসার অনন্ত প্রয়াসে আপ্রাণ নিমজ্জিত থাকে। নির্বিরোধী কবি-প্রচ্ছদকার-গীতিকার খালিদ আহসানের মতো প্রীতিময় আচরণের মানুষকে কেউ কোনো অমানুষী পরিস্থিতির শিকার করতে পারে বলে মনে হয় না। কে জানে, জানে কি কেউ শিকার হয়েছিল কিনা, আমি তো জানি না।
একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি বেশ অনেকদিন আগে থেকেই, কখনো কোনো একটা উপলক্ষে দেখা হলে বা কোনো কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হলে। দেখেছি, বিগত শতকের সত্তর, আশি ও নব্বুইয়ের দশকের উজ্জ্বল উচ্ছ¡সিত সেই খালিদ আহসানকে যেন তার মাঝে খুঁজে পাওয়া যেত না। কেমন যেন এক ধরনের মৃদু আত্মমগ্নতার ভেতরেই সর্বদা তার অবস্থান। খালিদ আহসান কি কোনোরূপ দূর-অপনেয় অব্যক্ত বিষণ্নতার ভেতর থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করে চলছিল। কে জানে? কত মানুষ যে আপনার ভুবনে কত বিচিত্র ধরনের বচনাতীত পরিবেশ-পরিস্থিতির মাঝে অসহায়ভাবে নিজেকে সমর্পণ করে চলে, তার কি কোনো পরিসংখ্যান মেলে? খালিদের জীবনের সৃষ্টিশীলতার জয়যাত্রাকে কি কোনো অদৃশ্য অচেনা জীবাণু কোনো কারণে কুরে কুরে খেয়ে যাচ্ছিল, তা অজানা রয়ে গেল। তবে সত্যি সত্যিই, খালিদ আহসান শারীরিকভাবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল করোনা কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে এ বছর মার্চ মাসের ২২ তারিখে।
তার জীবনটা বহু আবেগপ্রবণতার মিশ্রণের সমাহার। ১৯৭৪-এ এই তরুণের সঙ্গে ক্রমে পরিচয়ের পর থেকেই তাদের, দেওয়ানহাটস্থ ওভার ব্রিজের গোড়ায় দাতব্য চিকিৎসালয়ের ওপরের তলার বাসার তার নিজস্ব কামরায় বসেই বুঝেছিলাম, তার তৎকালীন আবেগী জীবনের পরতে পরতে বোহেমিয়ানিজম ডানা বিস্তার করে রয়েছে নানামুখী আকাক্সক্ষায়। এর সবগুলো চাওয়া-পাওয়াকে পূরণ করতে চেয়ে বাস্তববাদিতার অনুশীলনে গেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য হাতের বাইরে সোনার হরিণ হয়ে অধরা থেকে যেতে পারে। সাধারণত ১৯৭৪ ও ’৭৫-এর প্রথম দিকে মাঝে মাঝেই খালিদের বাসায় যেতাম স্পার্ক জেনারেশনের সদস্য প্রচ্ছদশিল্পী ও গল্প লেখক সৈয়দ ইকবালের বাড়িতে যাওয়ার পথে। খালিদের বাসা ফেলে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই ধনিয়ালাপাড়ায় সৈয়দ ইকবালদের নিজস্ব বাড়ি। তার দেউরী ঘরের স্থায়ীভাবে পাতা বিছানায় আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে, চা-জলখাবার খেতে খেতে দু’জনে সেকালের বিখ্যাত ‘গ্রুনডি‘ কোম্পানির গ্রামোফোনে রবীন্দ্রসংগীতের একগাদা লংপ্লে রেকর্ড চাপিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান শুনতাম আমরা। বহুকাল পরে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে সৈয়দ ইকবাল সেখানে থিতু হয়। খুব সম্ভব আঁকাআঁকি, ডিজাইন, ফ্যাশন ইত্যাদি কার্যকারণের সূত্রে খালিদ-আইভির সঙ্গে তার একটা প্রাসঙ্গিক গভীর যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
যা হোক, প্রসঙ্গান্তরে না গিয়ে খালিদের বাউল মনের তৎকালীন ছবিটাকেই ধরা যাক। কথাটা হচ্ছিল স্পার্ক জেনারেশনে খালিদ আহসানের গল্প লেখা নিয়ে। বলেছিলাম, গল্পের বিষয়টার ধরন তেমনই করতে হবে, তাতে যেন তোমার এ সময়ের জীবনভাবনার ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
বুঝি বা তাই, কবি খালিদ আহসানকে গল্পকার খালিদ আহসান হিসেবে পাওয়া হলো অন্য এক রূপে। সে তার আদি ও একমাত্র যে গল্পটি স্পার্ক জেনারেশনের জন্য লেখে, তার নাম রেখেছিল ‘নমিতা, বসতবাড়ি উপড়ে ফেলো।’ গল্পটির আস্বাদ মৃত্যুর অজানা স্বাদের অতৃপ্তির মতো। বক্তব্যটা মনে হয় সবার কাছে বোধগম্য হলো না! ঘটনার প্রধান যে পাত্র, সে একজন কবি-প্রচ্ছদকার। আর পাত্রী হয় এমন, যে তার প্রেম-ভালোবাসায় আপনার নির্বাচিত সুজনের জন্য হৃদয়ের সব নৈবেদ্য সাজাতে পছন্দ করে। কিন্তু সংসারের স্বাভাবিক নিয়মে তার সিঁথিতে সিঁদুর ওঠে পারিবারিক সাংস্কৃতিক বলয়ে নির্বাচিত অপর যুবক পুরুষের আঙুলে।
নরনারীর সম্পর্কের অতৃপ্তির গল্প কেবল নয় খালিদের এ গল্পটি। যদিও, এ গল্পটি একবিংশ শতকের এই দ্বিতীয় দশকের দম্পতিদের বিশেষ অন্তরঙ্গ সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ, গল্প লেখা হয়ছে এখন থেকে প্রায় ৪২ বছর আগে। লেখক খালিদ আহসান লিখেছে তার ২১ বছর বয়সে, ১৯৭৯ সালে। সংসার ভাঙার কাহিনী নয়। একালের মতোই দূরে কোথাও লং ড্রাইভে গিয়ে পাত্রপাত্রী বিরহ উদযাপন ও পারস্পরিক বিনোদন বিনিময়ের কথাও রয়েছে। আবার তার কারণে মৃদু অপরাধবোধও কাজ করে। প্রেমিক পাত্র কবি-প্রচ্ছদকার লং ড্রাইভ থেকে ফিরে সিডিউল মোতাবেক ছাপাখানায় প্রচ্ছদ ছাপাতে যাওয়ার আগে ডায়াগনসিস সেন্টার থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে জানতে পারে তার অসুস্থতা ‘ব্লাড ক্যান্সার’। তখন আর নিজেকে সে নিজের মাঝে খুঁজে পায় না। মেশিনে প্লেট তুলে দেখে নির্দিষ্ট ডিজাইনের জায়গায় ছাপা হচ্ছে রক্তাক্ত লাল অক্ষরে ছাপা হচ্ছে কেবল ‘ভালোবাসা’। অজ¯্র সারিবদ্ধ ভালোবাসা।
গল্পটি শেষ হচ্ছে এভাবে :

‘মাঝরাতে নয়ন বের হলো ভালোবাসার লাল টিকিট নিয়ে। হু হু স্পিডে চলছে গাড়ি। আর উড়ছে লাল, শহরের রাস্তায় রাস্তায়।
নয়নের ঘরের দরজায় লেখা ছিল ‘গেটআউট’। ভেতরে নয়ন। দু’পা মাটিতে, মাথাটা বিছানার সঙ্গে ঠেস দেয়া। একপাশে রজনীগন্ধা ফুল। নমিতা রজনীগন্ধার সৌরভে মাতাল হতো। ঘরের কোণে কালো ভাঙ্গা টেলিফোন। আর টেবিলের ওপর তিনটি চিঠি। একটি আমাদের পাঁচজনকে, একটি নমিতাকে, অন্যটি নয়ন নিজেকে। নমিতার চিঠির সঙ্গে একটি রয়েছে মেডিকেল রিপোর্ট। ব্লাড ক্যান্সার।
নয়নকে লেখা নয়নের চিঠিটা ছিল এ রকম : এখানে আমার নিঃশ্বাসগুলো বন্ধ হয়ে আসে।’
ছাপানোর জন্য গল্প হাতে আসার পর মনে হলো ব্লাড ক্যান্সার রোগীর হতাশা আক্ষেপের দিয়ে শুরু করা কাহিনী আকর্ষণীয় হচ্ছে না। শুরুটা পাল্টানো দরকার। অন্যদেরও যেভাবে কিছু পরামর্শ দিই, তেমনই খালিদকেও বললাম, এ গল্পের সূচনাটা বদলাতে হবে। শুরুতেই পুরো কাহিনীর চুম্বক ছায়াপাত ঘটানো গেলে গল্পটা বেশ চমকপ্রদ হতে থাকবে। অতএব, বিনির্মাণে পাল্টে গিয়ে হয়ে পড়ল গল্পের ভিন্নধর্মী অপর এক নবসূচনা।
চলুন, প্রারম্ভটা পাঠ করা যাক :
‘মানুষের মৃত্যুর ফিক্সড একটা ডেট থাকলে ভালো হতো। আগে ভাগে জেনে যাওয়া, একজন
মানুষ ঠিক কবে ফিনিশড্ হচ্ছে। যে কোনোদিন। নভেম্বরের ছয়, ডিসেম্বরের সাত কিংবা জানুয়ারির তেরো। এ ব্যাপারে লিউকেমিয়ার রোগীরা মোটামুটি ভাগ্যবান। আর, এ ধরনের প্লটে দারুণ গপ্পোটপ্পো লেখা যায়। শেষ সময়ের আর কত বাকি, জেনে গেলাম। যেন চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাওয়া যাবে কালোহাত মৃত্যুর, থাবা বাড়িয়ে আসছে। আসুক। শেষ সত্যটি জানা হয়ে গেছে এখন। ফ্রিডম। ফুল ফ্রিডম। সখা, স্বাধীনতা কারে কয়? এবার ছুটির ঘণ্টা বাজবে। ডং ডং। তোমার যা ইচ্ছে, তুমি তা-ই করবে এখন। এই তো ক’দিন। তারপর, নেই। মাল টানো। খাঁটি দেশি মদ। আর একপা একপা সেই আঁধারের দিকে এগোও। প্রাণখোলা হাসি দাও। মাতালের মুখে হো হো হাসি বেশ মানায়। নাচো। আর, বৌ থাকলে হাতের চেটোতে রেখে উল্টা পাল্টা চাঁদ খেল গে, যাও।’
কবি-প্রচ্ছদশিল্পী-ডিজাইনার ও বেশ মিষ্ট মনের মানুষ খালিদ আহসানকে সবাই চেনে। কিন্তু চেনে কি এ ধরনের গদ্যভাষায় গল্পবুনক খালিদ আহসানকে কেউ? তাকে স্পার্ক জেনারেশনই চিনিয়েছে ১৯৭৯ সালে, আরও অনেক কিছুর মতো।
খালিদ আহসান ছিল, খালিদ আহসান নেই। এটাই এখন সত্য। একেই বলে জীবন। জীবন কখনও হাসায়। আবার কাঁদায় কখনো কখনো। আমাদের কান্না-হাসিরই দোল-দোলানো এসব দিন। জীবনের দিনগুলো মধুরেণ সমাপয়েৎ হোক- এমনই আমরা চাই সর্বদা বটে, সে চাওয়া যথার্থ নয়। কবির মহাবাণীতে আাছে, অসম্ভব দুঃখ-যাতনার ভার বিধাতা নাকি তাকেই দেন, যার বুকে থাকে অপার আনন্দের ঐশ্বর্য। দেন, মনে হয়, সুখ আর দুঃখকে তৌল করে দেখে কার মহিমা কেমন, তা অনুভব করার জন্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়