বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

আগের সংবাদ

তালেবান আতঙ্কে বিশৃঙ্খলা > আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক : উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়ল তিনজন

পরের সংবাদ

কলঙ্কিত দিন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেই শৈশব থেকেই আমি একটু অন্যরকম। ছোটরা সবাই যখন রূপকথার গল্প শোনার বায়না করে- আলাদীন, সিন্দাবাদ, লম্বা চুলের রাজকুমারী, রাক্ষস-খোক্ষসের; আমি তখন শুনতে চাইতাম মুক্তিযুদ্ধের কথা। আমাদের দেশের ইতিহাস জানতে চাইতাম।
মা, আব্বা, দাদি, বুজি (বড় ফুফাতো বোন, পিতৃ-মাতৃহীন। আমি তার কাছে লালিত-পালিত) সবার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে বড় হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ অথবা আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কার, কতটুকু অবদান- সেটা খুব ভালো করেই জেনেছি। সেই ছোটবেলায়। ১৯৯২-১৯৯৩ সালেই পড়ে শেষ করেছিলাম ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল কে কোথায় আছে’ এবং এম. আর. আক্তার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে কোনো বই পড়তাম, পেপার কেটে রাখতাম। মনে-প্রাণে পাকিস্তানিদের ঘৃণা করতাম, করি এবং করব। রাজাকার, আলবদর, আলশামসদেরও ঘৃণা করতাম, করি এবং করব। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যারা সপরিবারে হত্যা করেছে, তাদেরকেও মনে-প্রাণে ঘৃণা করি।
বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমাদের প্রিয় এই জন্মভূমির নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি বলেন- ‘আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ’।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর যখন প্রথম সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হয় তখন দেশটির সাংবিধানিক নাম দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ’। (ইতিহাস পড়ে জেনেছি। জেনেছি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন স্যারের লেখা পড়ে।)
ঘরের শত্রæ বিভীষণ! আমাদের শৈশব, কৈশোরে বেতার, টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনিনি। তখন যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ছিল কাপুরুষ! বঙ্গবন্ধু নামে ছিল তাদের ভয়! ইতিহাসের পাতা থেকে তারা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সব অপকৌশল প্রয়োগ করেছে। কিন্তু সেই মূর্খের দল তো ইতিহাসের সংজ্ঞাই জানে না।
১৫ আগস্ট এলে কয়েকটি পত্রিকায় শুধু কিছু ছবি ও লেখা ছাপা হতো। সেই বয়সে আমার ছোট মাথায় একটা প্রশ্ন দৌড়ঝাঁপ করত। একটি স্বাধীন দেশের জন্মদাতাকে কোনো সন্তান কি মারতে পারে?
এখন বুঝি- ক্ষমতার লোভ, অর্থ লোভ, মানুষকে অমানুষ-বর্বর-পশু বানায়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। অনেকেই বলে থাকেন- বঙ্গবন্ধুকে বিদেশি চক্রান্তে হত্যা করা হয়েছে। কেন যেন এই কথা আমি মানতে পারি না।
যদি বিদেশি চক্রান্ত হতো তবে বঙ্গবন্ধুকে একা মারা হতো। ছোট্ট রাসেল, বাবু, আরিফ সেরনিয়াবাত, গর্ভবতী আরজু মনি- ওদেরকে হত্যা করা হতো না।
সত্যিকারের যারা ভালো মানুষ ও প্রকৃত বাঙালি, তাদের কাছে ১৫ আগস্ট একটি কলঙ্কিত দিন। লজ্জা, অপমানের দিন। আমরা বড় অসহায়, দুর্ভাগা, পাপি, বাঙালি জাতি। জাতিসত্তাকে ধ্বংস করেছি। যখন শুনি-
‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই,
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা
যে পুরুষ ভীরু কাপুরুষের মত
করেনি কখনো মাথা নত …’
… পোড়া দু’চোখ কোনো বাঁধা মানে না।
:: লালবাগ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়