একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

১ লাখ ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ : মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, কাগজ প্রতিবেদক : আমন ধান কৃষকের কাছে এক ধরনের আমানত। তাই তো আমনে মাঠে সবুজ ধানের সঙ্গে মিতালী কৃষকের। দিগন্ত ছোঁয়া সবুজের সমারোহ। অগ্রহায়ণে সেই সবুজ পরিপূর্ণতা রূপ নেবে সোনালি ধানে। ভরে উঠবে কৃষকের আঙিনা। তাতেই আসবে কৃষকের হাসি। মৌলভীবাজারে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচণ্ড রোদ থাকায় আউশ চাষাবাদে কাক্সিক্ষত আবাদ হয়নি। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে কৃষকরা সনাতন পদ্ধতি ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে আমন ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মৌলভীবাজার জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৭৭ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি আশার কথা হলো- মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে যেখানে বোরো ছাড়া আর কোনো ফসল হতো না সেখানে ৭২০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এটা রেকর্ড। বিষয়টিকে কৃষি সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে মৌলভীবাজার সদরে ১৮ হাজার ১৬০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৫ হাজার ৫৩১ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ৫ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৭ হাজার ২৭০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হাজার ১৫৬ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৬৪৫ হেক্টর এবং জুড়িতে ৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলের কিছু এলাকায় বোরো ধান ছাড়া অন্যকিছু চাষ হতো না। চলতি আমন মৌসুমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইকুড়া, একাটুনা ইউনিয়ন ও রাজনগর উপজেলার ফতেপুর, পাঁচগাঁও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের কাউয়াদিঘি এলাকার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে।
এছাড়া সদর উপজেলার হাইল হাওর ও বড়হাওর এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি অংশে তালিমপুর, বর্ণি ও সুজানগর এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর ও জুড়ি উপজেলার জায়ফরনগর এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের আওতায় এসেছে। চলতি মৌসুমে মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে। ১ লাখ ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত আমনে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে উফশী ২ লাখ ৭৮ হাজার ও স্থানীয় ২ হাজার ৪৯৭ টন ধান।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মীরপুর এলাকার কৃষক মিলাদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা কৃষক, পুরোপুরি ধানের ওপরই নির্ভরশীল। তাই আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়াতে এবং কাশিমপুর পাম্প হাউসের সেচের জন্য কাউয়াদিঘিতে পানি কম থাকায় বোরো চাষের জায়গাতে ৪-৫ জাতের আমন ধান করেছি। ব্রি ধান ৮৭, ৭৫, ৯৫ ও বীনা ধান ১৭ রোপণ করেছি। লকডাউনের মধ্যে স্থানীয় শ্রমিক দিয়েই রোপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সপ্তাহের মধ্যে সব জায়গা রোপণ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
শেওয়াইজুড়ী এলাকার কৃষক সমসু মিয়া বলেন, দিন বদলে গেছে। এ সময়ে কাউয়াদিঘিতে চারিদিকে থাকে শুধু পানি আর পানি। কিন্তু এ বছর পানি কম। তাই সাহস করে আমন চাষ শুরু করেছি। তিনি আরো বলেন, কাউয়াদিঘিতে মাছ চাষের জন্য যদি পাম্পের মাধ্যমে হাওর-জলাশয়ের পানি নিষ্কাশন বন্ধ রাখা হয় তাহলে আমন চাষে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হবে। কারণ রোপা আমন ধান পানিতে ডুবে গেলে সমস্যা হয়। পরিমাণমতো পানি তো লাগেই, না হলে কোনো সমস্যা হয় না।
মজলিশপুর কৃষক বাবর জায়গিদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও যথাসময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় সময়মতো ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছেন। বোরোতে ধানের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দাম বেশি পাওয়ায় লাভ বেশি হয়েছে। তাই ইতোমধ্যে চলতি আমন মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৭ বিঘা বেশি জমিতে আমন চাষ করেছি। বোরো ধানের মতো আমন ধানের দাম ঠিক থাকলে লাভবান হবেন বলে আশা তার।
রাজনগর উপজেলার সারমপুর গ্রামের কৃষক লেচু বলেন, ৪-৫ জাতের ধান লাগানোর অর্থ হলো- দু-একটায় যদি ফসল কম দেয়, তাহলে অন্যটা দিয়ে ঘাটতি মেটানো যাবে। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা কৃষকদের দেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান লাগাতে সবসময় উৎসাহিত করি। উচ্চ ফলনশীল জাতের বেশির ভাগই রোপণ হয়েছে হাওরাঞ্চলে। যেখানে এর আগে কোনোদিন আমন হতো না। সেখানে শুধু বোরো ধানই হতো। এবার পাম্পের মাধ্যমে হাওর-জলাশয়ের পানি নিষ্কাশন করায় এখানে আমন ধানের আবাদ বেড়েছে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী সদর উপজেলায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে আমন চারা রোপণ পরিদর্শন করে ভোরের কাগজকে বলেন, এতে চারাগুলো সতেজ থাকছে এবং নষ্ট বা অপচয় হচ্ছে না। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম হবে এবং অধিক লাভ করবেন কৃষকরা। একই সঙ্গে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকের আবাদে আগ্রহ বাড়বে। কারণ জনসংখ্যার অনুপাতে দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। তাই অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়