একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

জয়পুরহাটে পুলিশ-জঙ্গি সংঘর্ষ, বিচার শুরু হয়নি ১৮ বছরেও : আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে নিঃস্ব অনেকে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জয়পুরহাট থেকে : জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর-মহেষপুর গ্রামে ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে দুর্ধর্ষ জঙ্গি (অন্য মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডে দণ্ডিত) মন্তেজারের বাড়িতে জঙ্গি-পুলিশ সংঘর্ষ এলকায় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। থানায় মামলা হলেও আইনি জটিলতায় দীর্ঘ ১৮ বছরেও আলোচিত এ মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ৫৯ আসামির মধ্যে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে ৮ জঙ্গি আটক থাকলেও শীর্ষ ১৩ জঙ্গি জামিন নিয়ে পালিয়েছে। ফলে ওই মামলায় জামিনে থাকা স্থানীয় ৩৮ জন আসামি ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকেই। ওই ঘটনায় দায়ের করা তিন মামলায় ২০০৮ ও ২০১০ সালে ৬১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে একজনকে অব্যাহতি ও অন্য এক আসামি মারা যাওয়ায় এখন ওই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৯ জন।
জয়পুরহাট আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর থেকে হাজির না হওয়া জঙ্গিরা হলো- ঠাকুরগাঁও জেলার আনোয়ার হোসেন ওরফে খোকা, তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে শহীদ ওরফে ভাগ্নে শহীদ, রংপুরের জয়নাল আবেদীন, গাইবান্ধার মামুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছরোয়ার জাহান, শহিদুল ইসলাম ওরফে রানা ও তুফান ওরফে আবুল কাশেম, রাজশাহীর শহীদুল্লাহ ফারুক ওরফে সেলিন ও আদনান ছামি ওরফে আম্বর ওরফে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মোখলেছার, নওগাঁর সাইফুল ইসলাম ওরফে খোকন ও আব্দুল কুদ্দুস, বগুড়ার আরিফুর রহমান ওরফে আসাদুল্লাহ এবং নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে ছালেহীন।
জয়পুরহাট কারাগারে গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গিরা হলো- জয়পুরহাটের মন্তেজার রহমান, সালাউদ্দিন, আজিজুল বারী ও গোলাম মোস্তফা, দিনাজপুরের আনোয়ার সাদাত, বগুড়ার মাইনুল ইসলাম ওরফে রাঙ্গা ওরফে মারুফ ও আব্দুর রাজ্জাক এবং টাঙ্গাইলের ইউনুস আলী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে জেএমবির (জঙ্গি) আঞ্চলিক নেতা ক্ষেতলালের উত্তর মহেশপুরে মন্তেজার রহমানের বাড়িতে গোপন বৈঠক বসে। সেখানে উপস্থিত হয় দেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতারা। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেতলাল থানার পুলিশ উত্তর মহেশপুর গ্রামের জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমানের (জয়পুরহাট কারাগারে আটক ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি) বাড়ি ঘেরাও করে। টের পেয়ে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে তারা পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে জয়পুরহাট সদর থানার তৎকালীন ওসি ইকবাল শফিসহ ৬ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। জঙ্গিরা পুলিশের তিনটি শর্টগান, একটি ম্যাগজিন ও ওয়াকিটকি লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সদর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৫ আগস্ট ক্ষেতলাল থানায় ৩৩ জনসহ অজ্ঞাত ৭০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার রাতেই পুলিশ ২০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার দুদিন পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করলেও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর জোনের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দীন তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৬১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে একজনকে অব্যাহতি দেয়ায় এবং অন্য এক আসামি মারা যাওয়ায় মামলাটির আসামি এখন ৫৯ জন।
অপরদিকে একই ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আরো দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দিনাজপুর জোনের সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আহসান উল কবীর মামলা দুটি তদন্ত করে গত ২০১০ সালের ২৫ মে ওই ৬১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আইনি বিধান হলো মামলার তারিখে আটক ও জামিনে থাকা সব আসামিকে হাজির করা না গেলে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন অর্থাৎ বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন না। আইনি এই বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তারিখের পর তারিখ পড়লেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক ডাকাতি, হত্যা, নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে আটক থাকায় জয়পুরহাটের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা সম্ভব না হওয়ায় আইনের দৃষ্টিকোণ ও জটিলতায় আসামিদের বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। অন্য যে কোনো কারাগারে আটক আসামিদের বাদ রেখে বিচারকাজ শুরু করতে গেলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়