একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

চালের বাজারে অস্থিরতা : ডুমুরিয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : খুলনার ডুমুরিয়ায় চালের চড়া বাজার দরে নি¤œ আয়ের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছেন। করোনাকালে কর্মহীন ও উপার্জন কমে যাওয়া মানুষের জন্য এ দুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরের নিচে কোনো চাল নেই।
নগরীতে যে চাল কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মফস্বলের মুদি দোকানগুলোতে তা ৫২ এবং প্রত্যন্ত গ্রামের বাজারে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিপ্রতি গড়ে তিন থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। এই দাম বেড়েছে গত ১ মাসের ব্যবধানে। আবার কোনো চালের দাম গত ২ মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় ৫২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুলনায় চালের বাজারে কেন এ অস্থিরতা? এ প্রশ্নের উত্তরে চাল কল মালিক, পাইকারি আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
পাইকারি আড়তদারদের সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখ মাস থেকে বোরো ধানের চাল বাজারে উঠতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠ মাসে ভারত হতে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। রাইস মিল মালিকরা তখন থেকেই বস্তাপ্রতি ২৫-৫০ টাকা করে দাম বাড়ানো শুরু করে। এভাবে বাড়াতে বাড়াতে তারা চালের দর বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তারা সিন্ডিকেট করে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাজারে তখনো চালের কোনো সংকট ছিল না, এখনো নেই।
খুলনার চালকল মালিকদের মধ্যকার একটি সূত্র জানায়, বৃহৎ পুঁজির অধিকারী কয়েকজন অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক বোরো মৌসুমের শুরুতেই সাড়ে ৮০০-৯০০ টাকা মণ দরে পর্যাপ্ত ধান কিনে মজুত করেছেন। এখন সেই ধান ১০৫০ টাকা মণ। যশোর ও কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক চালের বাজার দর ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা সুযোগমতো চালের দাম বাড়িয়ে থাকেন।
অন্যদিকে, নগরীর বড় বাজারে পাঁচ-সাত জন আড়তদার আছেন, যাদের গুদামেও পর্যাপ্ত চাল মজুত করার সক্ষমতা আছে। রাইস মিল মালিকরা যখন দাম বাড়িয়ে দেন, তখন তারাও আগের কম দামে কেনা চাল বেশি দামে বিক্রি শুরু করেন।
ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধের সময় ধান-চালের কোনো সংকট না থাকার পরও দাম বাড়তে থাকার যৌক্তিকতা কী? এ প্রশ্নের জবাবে চালকল মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, চাল আমদানি বন্ধের খবরে ফড়িয়ারাও ধানের দাম বাড়য়ে দিয়েছিলেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার নয় উপজেলাসহ মেট্রো অঞ্চলে ২০৫টি লাইসেন্সধারী চালকল রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক রাইস মিল ১৮টি, বাকিগুলো চাতালের চালকল। যদিও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, খুলনার চালের বাজারের চাহিদার বৃহৎ অংশের জোগান আসে যশোর ,সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নাটোরের গুরুদাশপুর, শেরপুর, দিনাজপুর, নওগা, পাবনার ঈশ্বরদীসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার রাইস মিল থেকে।
নগরীর বড় বাজারের পাইকারি বাজারে গত ২ মাস আগে ইরি আতপ ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ১২৫০ টাকা ছিল। এখন দাম বেড়ে ১৭৫০ টাকা হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই ওজনের সেদ্ধ মোটা চাল প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বালাম-২৮ কেজি প্রতি ২ টাকা বেড়ে ২৫ কেজির প্রতি বস্তা ১২৫০ টাকা হয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল কেজিতে ১ টাকা বেড়ে ১৪৮০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের আতপ গত ১৫ দিনে কেজিতে চার টাকা দাম বেড়ে ২৫ কেজি ওজনের বস্তা ১৬০০ টাকা হয়েছে।
বড় বাজারের একজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, চলের দাম প্রতি কেজিতে গড়ে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেদ্ধ মোটা ৪৬-৫০, বালাম ৫০-৫৫, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোহা. মুস্তফা কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, যে চালের কেজিপ্রতি মিল রেট ৪১ টাকা অথবা ৪১ টাকা ৫০ পয়সা, সেই চাল যদি খুচরা পর্যায়ে ৪৮/৫০ টাকায় বিক্রি হয়, তার জন্য তো চালকল মালিকরা দায়ী নন। খুলনার মিল মালিকদের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, যে যেমন দামে পারেন ধান কেনেন, যে যেমন দামে পারে চাল বিক্রি করেন। মিলগুলো সচল রাখার জন্য যে পরিমাণ ধান স্টকে রাখা প্রয়োজন ততটুকুুই আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়