নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

ছোট উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : বিশ্বের বড় রপ্তানি গন্তব্যগুলোয় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। তবে এর মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এ খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। করোনার কারণে ক্রমাগত আয় কমে যাওয়া এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। ফলে বন্ধ হয়েছে অনেক কারখানা।
এদিকে কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নতুন কারখানা স্থাপন না হওয়ায় চাকরি যাচ্ছে অনেকের। নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদ ও শিল্পমালিকরা বলছেন, বাংলাদেশে গত বছরের মার্চে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। মাঝখানে পরিস্থিতির উন্নতি হলে অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে থাকে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে তারা মনে করছেন।
দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। বাংলাদেশের পণ্য বেশি যায়, এমন দেশগুলোর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। লকডাউন, জরুরি অবস্থার মতো কঠোর বিধিনিষেধ নেই। এতে করে তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের হাতে নতুন-পুরনো রপ্তানি আদেশ রয়েছে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। এর মধ্যেও কিছু কারখানায় উৎপাদন চলছে না। সরকার ঘোষিত লকডাউন ও ঈদের ছুটিতে টানা ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১ আগস্ট খুলে দেয়া হয় পোশাক কারখানা। তবে এর মধ্যেও ১৪২ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এদের প্রায় সব কারখানাই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য।
জানা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো। এসব কারখানার বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষা করা না গেলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। করোনাকালীন বাস্তবতায় শিল্প খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষায় সরকারের লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য তেমন কাজে আসেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও বেসরকারি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সব কারখানার সামর্থ্য এক রকম নয়। বর্তমানে রপ্তানি আদেশ ভালো আছে। তবে এর মধ্যেও অনেক কারখানার হাতে কাজ নেই। বন্ধ কারখানার মধ্যে সাবকন্ট্রাক্ট বা ঠিকা কাজ করে এ ধরনের কারখানাই বেশি। তিনি বলেন, লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে বড় কারখানার উৎপাদন এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। সে কারণে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করে এমন কারখানায় কাজ কম। এ কারণে কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে।
করোনা মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়লেও পোশাকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা বলছেন, ক্রমাগত উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দাম তো বাড়ছেই না, বরং ক্রেতা কম দর অফার করার পরও অর্ডার নিতে হচ্ছে কেবল লোকসানের পরিমাণ কমানোর জন্য। কম দরের এসব অর্ডার না নিলে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হবে, তাতে লোকসানের পরিমাণ অনেক বেশি।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে রপ্তানি হওয়া পোশাক পণ্যে প্রধান ২০টি পণ্যের দাম কমেছে সম্মিলিতভাবে ৫ শতাংশের উপরে। আর গত পাঁচ বছরে দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। বিজিএমইএর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে ২০টি পোশাক আইটেমের মধ্যে ১৬টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে বাদবাকি চারটির। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে ক্রমাগত উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া, এই সময়ে এ খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো এবং বছর বছর ইনক্রিমেন্ট, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ ইউটিলিটির দাম বাড়ায় সার্বিকভাবে তা পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিজিএমইএর তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে পোশাকের গড় উৎপাদন খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে মজুরি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এর বাইরে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ ইউটিলিটি ব্যয় এবং পরিবহন, ব্যাংক চার্জ, ল্যাব টেস্ট ইত্যাদি খাতে বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কয়েক বছর ধরে উৎপাদন খরচ বাড়লেও পোশাকের দর কমতির দিকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়