শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

হাওয়ায় আসে ভেসে

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নেপালের পোখারায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাড়ির ছাদে ধোঁয়া ওঠা গনগনে গরম চা নিয়ে অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে কৃতি ঘিমির। টকটকে লাল সূর্য অস্ত যেতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো চারপাশে। দূরের বাড়িগুলোতে একে একে জ্বলে উঠতে লাগল লালচে-সাদা রঙের বাতি। দূর থেকে বাতিগুলো জোনাকির মতো মিট মিট করে আলো ছড়াতে লাগল। পাহাড়ি ঠাণ্ডা বাতাসে সেই বাতিগুলোর দিকে তাকিয়ে কখন যে গভীর এক কল্পনার রাজ্যে ডুবে যায় কৃতি তা সে নিজেও জানে না। হঠাৎ সে তার হাতে এক পরিচিত কোমল মায়াভরা স্পর্শ অনুভব করতে লাগল। দেখতে পেল তার সামনে হাসিমুখে হাত ধরে বসে আছে জারিফ। চোখ কচলাতে কচলাতে নেপালি ভাষায় কৃতি বলতে থাকে, জারিফ তুমি ঢাকা থেকে কখন, কীভাবে এলে? সত্যিই কি তুমি এসেছ? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না! জারিফের নিঃশব্দ হাসি।
কৃতি এক নিশ্বাসে বলে যেতে থাকে, আমি তোমার জন্য বাঙালি মেয়েদের মতো শাড়ি পরা শিখেছি, অনেক খেটেখুটে কিছু বাংলা শব্দও শিখেছি, আরো শিখেছি তোমার প্রিয় শর্ষে ইলিশ রান্না। জানো- নেপালে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না, আমি অনেক খুঁজে কলকাতার এক বন্ধুর মাধ্যমে ইলিশ মাছ ও রেসিপি সংগ্রহ করে ইউটিউব দেখে রান্না শিখেছি। তোমাকে এবার রান্না করে খাওয়াব।
রাতের প্রহর বাড়ছে, এদিকে কৃতিরও যেন গল্পের নেশায় পেয়ে বসেছে। সে কত প্রতীক্ষার পরে আজ জারিফকে দেখছে। আসব আসব করেও সেই ২০২০ সাল থেকে জারিফ নেপালে আসতে পারছে না। করোনা মহামারি যেন দুজনের মাঝে এক বিশাল অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিয়েছে।
কৃতি বলেই চলেছে। জারিফ, এবার তোমার সাথে বাংলাদেশে গিয়ে জামদানি শাড়ি পরে রিকশায় চড়ে বৃষ্টিতে ভিজব, রসগোল্লা খাব, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি খাব, আর ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি, কাবাব, মোগলাই পরোটাই বা বাদ থাকবে কেন। তোমাদের গ্রামেও কিন্তু আমাকে নিয়ে যাবে, হাওর-বাঁওড়ে গিয়ে নৌকায় ঘুরব। শুনেছি বাংলাদেশের গ্রাম, হাওর-বাঁওড় নাকি ভীষণ সুন্দর- কি ব্যাপার জারিফ? আমি শুধু বক বক করে যাচ্ছি! তুমি কিছু বলবে না? অভিমান করেছ আমার ওপর?
হঠাৎ কৃতির ফোনটা বেরসিকের মতো রাতের অন্ধকারের নিস্তব্ধতাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে বেজে ওঠে। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে জারিফের মায়ের গলা। কান্না জড়ানো কণ্ঠে উনি বলতে থাকেন, জারিফ কোভিডে অনেকদিন ভুগে আজ সন্ধ্যায় তীব্র কষ্ট নিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে, আর কখনো ফিরে আসবে না। যাবার আগে তোমার জন্য অনেক কষ্টে একটা ভয়েস মেসেজ রেকর্ড করে গেছে, তুমি কান পেতে রাখ; তীব্র শ্বাসকষ্ট ভরা জারিফের কণ্ঠে ভেসে আসতে থাকে- ‘ম তিমিলেই মায়া গোরছু (আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি) কৃতি’।
কৃতির চোখের জলে দূরের উঁচু উঁচু পাহাড় আর সেখানে জ্বেলে থাকা আলো ঝাপসা হয়ে আসে। দমকা হাওয়ায় শোঁ শোঁ করে ভেসে আসতে থাকে জারিফের শ্বাসকষ্টের তীব্র হাহাকার!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়