জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী : কেউ গৃহহীন থাকবে না

পরের সংবাদ

জীবন কাটে হুইল চেয়ারে : প্রতিবন্ধী কিশোর চাকমার ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম’

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ছাদ থেকে পড়ে দুই পা হারানো কিশোর চাকমার জীবন কাটে হুইল চেয়ারেই। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা স্বপ্নবাজ কিশোরকে দমাতে পারেনি। পঙ্গুত্ববরণ করে বুঝেছে এইভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই তিনি ভাবলেন দৃষ্টিহীন, মানসিক, বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার তাগিদ। চার বছর আগে নিজ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলার বেতছড়ি এলাকায় নিজের পৈত্রিক জায়গায় কিশোর গড়ে তুলছেন তার স্ব^প্নের ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম’।
খাগড়াছিড়তে এসএসসি-এইচএসসি পাসের পর ২০০৯ সালে কিশোর চাকমা ঢাকায় পাড়ি জমান উচ্চ শিক্ষার জন্য। ঢাকায় বাসার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে দুই পা হারান তিনি। হয়ে পড়েন শারীরিক প্রতিবন্ধী। অদম্য কিশোর চাকমার গল্প এখান থেকেই শুরু। ভোরের কাগজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় কিশোর চাকমার। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আনা, তাদের সচেতন করা, শিক্ষিতকরণ, কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম’ পরিচালিত হচ্ছে। আমরা চাই- শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা না হয়ে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমার বিশ্বাস একদিন আমাদের এই আশ্রমটিতে বহু প্রতিবন্ধীর স্থায়ী ঠিকানা হবে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে এই আশ্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমি শুধুমাত্র উদ্যোগ নিয়েছি- কিন্তু মানুষের মানবিক সহযোগিতায় চলছে আশ্রমটি। বর্তমানে আশ্রমটিতে মোট ১৩/১৪ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এই আশ্রমে মাসিক দাতা রয়েছেন ৬৫ জন। মাসিক সাহায্য পরিমাণ ২৭ হাজার টাকা। তবুও নিজের বা আশ্রমের আয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি চালাতে হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ ৪ বছরে আমার ক্ষুদ্র এই প্রতিবন্ধীবিষয়ক কার্যক্রমকে এ পর্যন্ত আনতে পেরেছি তার কারণ হলো- নানাভাবে বহু সামর্থবান পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে। সেসব মানবতাবাদীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। মানবতাবাদী মানুষের সহযোগিতা ও সরকারের সুদৃষ্টি পেলে সামনে এগুনোর পথ সুগম হবে। কিশোর চাকমা আরো বলেন, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এই আশ্রম তৈরিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এছাড়া শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ির সংগঠক ও উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা, খগেন্দ্র ত্রিপুরা, শর্মীলা লারমা, জেলা প্রশাসকসহ সমাজের অসংখ্য মানবিক গুণ সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতা করেছেন।
বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপনা চাকমা বলেন, পাহাড়ের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে, কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে কিশোর চাকমা এক মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, যার নাম স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম। তিনি আরো বলেন, কিশোর চাকমা এমন একজন স্বপ্নবাজ যে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে পাহাড়ের প্রতিটি প্রতিবন্ধীরা একদিন শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে যাবে, কর্মসংস্থান পাবে, সর্বোপরি পরিবারের বোঝা না হয়ে সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
স্থানীয়রা বলেন, পাহাড়ের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। মানুষের সহযোগিতা আর ভালোবাসায় এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবন্ধীদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে। এক সন্তানের জনক কিশোর চাকমার স্ত্রীও তার পাশে থেকে প্রতিনিয়ত সাহস এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কিশোর বলেন, কেউ আমাদের প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন বেতছড়ি মুখ, কমলছড়ি ইউনিয়ন, খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, সহযোগিতার জন্য মোবাইল নং- ০১৮৪৮২১৬৭৭২।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়