জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী : কেউ গৃহহীন থাকবে না

পরের সংবাদ

আমার বাড়ি, আমার খামার সমিতি : সার্ভিস চার্জ মওকুফের নোটিস গোপন করে ঋণ আদায়

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : মিরসরাইয়ে আমার বাড়ি আমার খামার (আগের নাম একটি বাড়ি, একটি খামার) প্রকল্পের সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে বোর্ডের আদেশ না মেনে সার্ভিস চার্জসহ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ঋণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সমিতির সদস্যদের কাছে ঋণের সার্ভিস চার্জ মওকুফের নির্দেশনা গোপন রেখে অবৈধ উপায়ে আদায় করা সার্ভিস চার্জ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনটি সমিতির সদস্যরা।
এরই মধ্যে দুয়ারু, উত্তর তালবাড়িয়া ও আবুনগরের একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির পক্ষে অবৈধভাবে ঋণের সার্ভিস চার্জ আদায় ও আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সমিতির দরিদ্র সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা সার্ভিস চার্জ ফেরত দেয়ারও দাবি করেছে। এছাড়া সার্ভিস চার্জ মওকুফের সুবিধার কথা সমিতির সদস্যদের না জানানোর কারণে অনেকেই এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে ঋণের আসল টাকাও ব্যাংকের কোষাগারে জমা দিতে পারেননি সমিতির সদস্যরা।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তিন শতাধিক সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে সর্বোচ্চ ৬০ জন সদস্য রয়েছেন। সমিতির সদস্যেদের প্রকল্পের আওতায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়। অনেকে ঋণ নিয়ে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। সারাদেশে প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকা উত্তোলন না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেয়া ঋণের সার্ভিস চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১৪ মার্চ বোর্ডের ৬০তম সভায় যেসব ঋণগ্রহীতা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং উত্তরাধিকারীরা আর্থিক অনটনের কারণে তা পরিশোধ করতে পারছেন না, যাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং যারা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না তাদের ঋণের আসল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ সাপেক্ষে সার্ভিস চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত গোপন রেখে মিরসরাইয়ে সমিতির সদস্যদের মামলার ভয় দেখিয়ে গত জুন মাসের মধ্যে সদস্যদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জসহ ঋণ আদায় করেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মিরসরাই শাখা।
২০১৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট প্রদানকৃত ঋণ ও বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মিরসরাই শাখার ব্যবস্থাপক পিপলু দে জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত আলাদা করে কোনো হিসাব তাদের শাখায় করা নেই। কারণ এ ধরনের হিসাব কখনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে চায়নি। এছাড়া সার্ভিস চার্জসহ ঋণ আদায় করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কয়েকজন অভিযোগ দিয়েছেন।
আবুনগর একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির পক্ষে অভিযোগকারী সৈয়দ মো. মামুন জানান, একটি বাড়ি একটি খামার সমিতি প্রকল্পের সদস্যদের অধিকাংশ আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ফলে ঋণ নিয়েও অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। গত ১৪ মার্চ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ঋণগ্রহীতাদের সার্ভিস চার্জ মওকুফ করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়। কিন্তু এ সুযোগ মিরসরাইয়ে সমিতির সদস্যদের না দিয়ে গত ২৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সদস্যদের ৩ মে ২০২১ তারিখের মধ্যে ঋণের সার্ভিস চার্জসহ পরিশোধের নোটিস দেয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মিরসরাই শাখা। সদস্যদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পর তাদের পাস বই ও টাকা জমার রসিদ কিছুই দেয়া হয়নি। সেগুলো অফিস জমা রেখে দেয়।
আরেক অভিযোগকারী ছৈয়দুল হক জানান, তিনি সার্ভিস চার্জসহ ঋণ পরিশোধ করলেও তাকে কোনো পাস বই ও জমা দেয়ার রসিদ দেয়া হয়নি। কাজল দেবনাথ নামে এক সদস্য জানান, তাদের বাড়ির পাঁচজন সদস্য আলাদাভাবে প্রত্যেকে ১৫ হাজার টাকা করে ২০১৩ সালে ঋণ নেন। দুজনের ঋণ আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। অন্য তিনজনের ৪৫ হাজার টাকা ঋণের সার্ভিস চার্জসহ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করতে আবার সমিতি থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এরপর ১২ হাজার ৩০০ টাকা বাহির থেকে ধার করে পরিশোধ করেছেন।
রেহানা আক্তার নামে এক সদস্যের পাস বইয়ে দেখা যায় তিনি গত ২৭ জুন ১০ হাজার টাকা ঋণের সার্ভিস চার্জসহ ১৫ হাজার ৯৩৩ টাকা পরিশোধ করেছেন। মধ্যম তালবাড়িয়া সমিতির সদস্য শারীরিক প্রতিবন্ধী মন্দ্র ফিলিপ রায় অভিযোগ করেন, ঋণের আসল ১০ হাজার টাকা ২০২০ সালে পরিশোধ করেন। এরপরও গত মে মাসে সার্ভিস চার্জের ৪ হাজার ৮ টাকা তার সঞ্চয় থেকে কেটে নিয়ে অফিস তাকে সমিতি থেকে নামিয়ে দেয়। প্রতিবন্ধী হিসেবেও সরকারিভাবে সার্ভিস চার্জ মওকুফের সুযোগ দেয়া হয়নি তাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, আমার বাড়ি আমার খামার সমিতির তিনজন সদস্যের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। আগামী ৮ আগস্ট অভিযোগের বিষয়ে শুনানির জন্য দুই পক্ষকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনলে অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়