শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

কদম ও কবি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ

এই যে রেললাইন চলেছে সোজা উত্তরের দিকে। এ পথে গেলে প্রথমে পড়বে ভানুগাছ, মাঝখানে লাউয়াছড়া। তারপর শমসেরনগর, কুলাউড়া এভাবে সিলেট। পথের এক ধারে একটি কদম্ব গাছ। নিরিবিলি একাকী ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে হাতের ডানে রেললাইন তারপর পূর্বাশা আ/এ, বামে শ্যামলী আ/এ, দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল কলেজ। রিকশা চলে, প্রাইভেট কার চলে। টুংটাং শব্দ হয়, পিপপিপ হর্ন বাজে। সকাল ফুটতেই নিত্যদিনের কোলাহল বাড়ে। কত লোক গাছটির পাশ দিয়ে চলে যায়। কেউ একবার ফিরেও তাকায় না। তাকাবার প্রয়োজনও বোধহয় মনে করে না। কদম ফুটলে তবেই এখানে ব্যস্ততা বাড়ে। লোকজন জড়ো হয়। সেলফি তোলার ধুম পড়ে। কতজনের প্রয়োজন হয় সে, কিন্তু কারুর আপনজন হতে পারে না। অনেকেই শখ করে নিয়ে যায়, ভাসি হতেই ছুড়ে মারে। মারে মারুক, তবে এত অবজ্ঞার সঙ্গে মারে! কল্পনা করা যায় না। কত প্রেমিকার খোঁপায় গুঁজে যায় সে কত অনায়াসে! বিধাতা তাকে জোড়া লাগানোর কাজে পাঠিয়েছে। অন্যের হাসিতে সে হাসে। অন্যকে প্রেম বিলিয়ে দিয়ে সে সর্বস্বান্ত হয়। পরে উচ্ছিষ্ট হয়ে জমা পড়ে ডাস্টবিনে।
এর মাঝেই কাটে তার দিন-রাত। কিছু ছোট ছেলেপেলেও আসে, আউটসিগন্যাল থেকে। কদমের মগডালে উঠে যায়। কদম ছিঁড়ে, ঠাসটাস করে ডাল ভাঙে- নিচে ফেলে- আর অনায়াসে তা দু’চারটে ছোকড়া কুড়িয়ে নেয়। তাদেরও সে খুশি রাখে। এদের প্রেমিকা নেই। তাও কি! এরা কদমের ভেতরের গোলগাল বলগুলো বের করে খেলা করে। একে ওকে দেয়। বাড়ি নিয়ে গিয়ে নারকেলের ভেতরের শুকনো খুলির ভেতর দিয়ে রান্নাবান্না খেলে। একেক করে সবাইকে বিলাতে বিলাতে একসময় কদম ফুরিয়ে যায়। সবাই আবার ব্যস্ত হয়। কারুর অহেতুক দাঁড়াবার সময় নেই এই গাছের আশপাশে। তখন সে শূন্যতা বোধ করে। পথে ছোটে কত শিশু-কিশোর, কত কপোত-কপোতি, কত যুবক তার নতুন স্ত্রী নিয়ে সকালে জগিং করতে বেরোয়। কদম চেয়ে চেয়ে দেখে, আর মুচকি মুচকি হাসে। অপেক্ষা করে আগামী বছর আবার সে তাদের উপকার করবে বলে। আরো কারো নতুন করে ঘর বেঁধে দেবে বলে।
আফরোজা সুলতানা, কবি। এই পথের ডানে রেললাইনের ওপাশে থাকে। সে রোজ সকালে একবার রেললাইনের পথ ধরে হাঁটে। আবার ফিরে আসে। ক্লান্ত হলে জিরোয় কদমের নিচে। কদম তাকেও ফেরায় না। কবি শ্রান্ত হলে ওপরের দিকে তাকায়। ভাবে এত প্রশান্তি কে দিলে অমন সময় তাকে! কদম! কদমের ডাল। কবির মন বোঝে, কদমের দুঃখ। কবির ভালোবাসার স্পর্শ ছুয়ে দেয় আলতো করে কদমের গায়ে। কদমের ভেতরটা যেন হু হু করে কেঁদে ওঠে। কবি একটা চিরকুট টাঙ্গিয়ে দেয় কদমের গায়ে, ফুল-পাতা ছিঁড়বেন না। আপনার চুল আপনি ছিঁড়–ন। দেখুন কেমন লাগে!
কবি বাড়ি ফিরে যায়। পরদিন কে বা কারা সেই লেখা ছুড়ে ফেলে দেয়। হদিস থাকে না। কদম এভাবেই উপকার করে কত প্রেমিকের, কত নতুনের। বাড়ি ফিরে স্বামীর ঘরের রান্নাবান্না, বাচ্চার স্কুলের টিফিন, শ্বশুরের ইনসুলিন। শাশুড়ির মুখস্থ বকাবকি শোনে। তাও সে ভাসুরের প্রয়োজনে লাগে, দেবর যখন যত অর্থ চায় তা সংগ্রহ করে। শখের গয়নাগুলো বের করে একেক করে ননদের হাতে দেয়। তাও সে ঘর ছেড়ে বেরোলেই শাশুড়ি বলে বেড়ায়, সে সারাক্ষণ ডেং ডেং করে ঘুরে বেড়ায়, ঘরের কোনো কাজ করে না। কদমের তলে এসে সে আবার ক্লান্ত হলে জিরোয়। বুক ভরে শ্বাস নেয়। আগামীকাল আর কারুর উপকার করার কথা ভাবে। এভাবে সে আর কদম অন্যের উপকার করে বেড়ায় রোজ রোজ।
:: চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়