হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

করোনাকালে বিমা খাতে মাথাপিছু প্রিমিয়াম আয় কমেছে

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : করোনা থাবায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। করোনার প্রভাবে কমেছে দেশের বিমা খাতের আয়ও। বিমা নিয়ে দেশীয় তেমন গবেষণা না থাকলেও বিদেশি গবেষণায় দেশের বিমা খাতের কিছুটা চিত্র উঠে এসেছে সমাপ্ত বছরে। ২০২০ সালে দেশে মাথাপিছু বিমার প্রিমিয়াম আয় কমেছে ১ ডলার। ২০১৯ সালে দেশে মাথাপিছু প্রিমিয়াম আয় ছিল ৯ ডলার, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ ডলারে।
‘ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স : দি রিকভারি গেইনস পেস’ নামের সর্বশেষ সিগমা রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পুনর্বিমা প্রতিষ্ঠান সুইস রির প্রতিবেদন এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অঞ্চল ও দেশভিত্তিক প্রিমিয়াম আয়, জিডিপিতে বিমার অবদান, বিমার ঘনত্ব, বিমা বাজারের প্রবণতা, সামষ্টিক অর্থনীতি সূচক ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাপী বিমা বাজারের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স : দি রিকভারি গেইনস পেস’ নামের প্রতিবেদনে।
বিশ্বের ১৪৭টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করা হলেও প্রতিবেদনটিতে স্থান পেয়েছে ৮৮টি দেশ। যেখানে প্রিমিয়াম আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৯তম। মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৪ শতাংশ কমলেও ২০২০ সালে র‌্যাংকিংয়ে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশে।
এ বছর দেশের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১ হাজার ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের ০.০২ শতাংশ। আগের বছরে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১ হাজার ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বিমার পেনিট্রেশন বা জিডিপিতে বিমার অবদানে এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এই র‌্যাংকিংয়ে দেশের অবস্থান এখন ৮৬তম, যা আগের বছরে ছিল ৮৫তম। দেশের জিডিপিতে বিমা খাতের বর্তমান অবদান ০.৪০ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ছিল ০.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপিতে বিমার অবদান ০.০৯ শতাংশ কমেছে।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমান বিমার ডেনসিটি তথা মাথাপিছু বিমার ঘনত্বের পরিমাণ ৮ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৯ ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু বিমার প্রিমিয়াম কমেছে ১ ডলার। ২০২০ সালে বিমা ব্যবসা কমলেও বিশ্ববাজারে বিমার ডেনসিটি তথা মাথাপিছু বিমার ঘনত্বের র‌্যাংকিংয়ে আগের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ৮৭তম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত তিনটি কারণে গত বছর দেশের নন-লাইফ বিমা খাতে ব্যবসা কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফায়ার ও মেরিন ইন্স্যুরেন্সের ট্যারিফ রেট হ্রাস পাওয়া, থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বন্ধ করা এবং আমদানি-রপ্তানি কম হওয়া।
অন্যদিকে লাইফ বিমা ব্যবসা কমে যাওয়ার মূল কারণ বিমাকর্মীদের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ। বাংলাদেশে এখনো গ্রুপ এবং অনলাইন বিমা ব্যবসা ব্যাপকভাবে চালু হয়নি। ফলে করোনাকালে কনভেনশনাল পদ্ধতির বিমা ব্যবসা বেশ খানিকটা হোঁচট খেয়েছে। তা ছাড়া বিমা কোম্পানিগুলোকে এখন একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে।
ফলে প্রিমিয়াম সংগ্রহ প্রাথমিকভাবে কিছুটা কমেছে। তবে চূড়ান্তভাবে এগিয়ে যাবে দেশের বিমা খাত বলেও প্রত্যাশা তাদের।
এ ব্যাপারে সাধারণ বিমা করপোরেশনের পরিচালক এ কে এম এহসানুল হক বলেন, থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বন্ধ করায় এর ব্যাপক একটা প্রভাব পড়েছে দেশের নন-লাইফ বিমা ব্যবসায়। সব দেশেরই একটা বড় অংশ প্রিমিয়াম আসে এখান থেকে।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে মেরিন ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম রেটও নি¤œমুখী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নন-লাইফের বিজনেস ভলিউম কমতে পারে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে। এর কারণটা আমাদের অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।
বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, সুইস রি যে তথ্য দিয়েছে সেটাকে আমি সঠিক মনে করি। কারণ, থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বন্ধ করে দেয়ায় দেশের প্রিমিয়াম আয় অনেক কমে গেছে। অথচ সারাবিশ্বেই থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলকভাবে চলে। আবার করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানিও কমেছে অনেক। যার প্রভাব পড়েছে দেশের নন-লাইফ বিমার প্রিমিয়াম আয়ে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি ৮১টি বিমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে লাইফ বিমা কোম্পানির সংখ্যা ৩৫টি, যার মধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। অন্যদিকে দেশের নন-লাইফ বিমা কেম্পানির সংখ্যা সর্বমোট ৪৬টি, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে একটি।
মন্ত্রীসভার বৈঠকে গত ১৭ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত বছরের তথ্য অনুসারে আগের বছর দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে এ বছর মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬৩ মার্কিন ডলার বা ৯ শতাংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়