ডিআরআরএ আয়োজিত ওয়েবিনার : প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি

আগের সংবাদ

মহামারিতেও আনন্দময় হোক ঈদ

পরের সংবাদ

জীবনের যত গল্প

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরুজ মিয়া বারবার প্যাকেট খুলে দেখে আর ভাবে, কলা গাছের কচিপাতার মতো কাপড়ে বৌকে তার টিয়া পাখির মতো লাগবে। বিয়ের পর এটা বৌয়ের প্রথম ঈদ। নতুন বৌকে ঈদে কিছু না দিলে কী আর ভালো দেখায়? প্রতিবেশীরা জানতে চাইবে যে, বৌরে কী দিলাম? শ্বশুরবাড়ির লোকজন বৌরে জিগাবে, সুরুজ মিয়া ঈদে কী দিছে?
যদি বৌ কয়, কিছু দেয় নাই।
তখন কি সুরুজ মিয়ার মানসম্মান কিছু থাকবে? থাকবে না। তাই তো, রোজ বাড়তি একটা খ্যাপ মারত। গাও-গোসল দেবার আগে রিকশাটা নিয়া একটা খ্যাপ দিয়া আইতো। বৌয়ের রাঁন্ধা হইতে হইতে সুরুজ মিয়ার কাজ শেষ।
সুরুজ মিয়ার অনেক দিনের খায়েশ, তার বৌরে টিয়া রঙের একখান জামদানি শাড়ি দিবে। বৌ তার টিয়া রঙের শাড়ি পইরা ঘুইরা বেড়াবে। মনে হইবে টিয়া পাখি তার সামনে দিয়া উইড়া বেড়াইতাছে…।
সুরুজ মিয়া যখন স্কুলে পড়ত তখন ম্যাডাম জামদানি শাড়ির কথা কইতেন। এই জামদানি শাড়ি ছিল জগৎ বিখ্যাত।
সুরুজ মিয়া তখন মনে মনে ভাবত, বড় হয়ে চাকরি করে মাকে জামদানি শাড়ি কিনে দেবো। লাল রঙের। মা লাল জামদানি শাড়ি পরে ভ্যানে করে মামা বাড়ি যাবে। মামি, খালাম্মারা বলবেন, সুরুজের মারে দেহি রাঙা পরীর মতো লাগতাছে…।
সুরুজ মিয়ার ভাবনা ভাবনাতেই থেকে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আইলায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মা-বাবাকে হারিয়ে সুরুজ মিয়া হয়ে যায় রিকশাচালক।
মাকে লাল জামদানি পরাতে পারেনি, কিন্তু নতুন বৌকে তো একটা জামদানি শাড়ি পরাতেই পারে। কাল ঈদ। এই শাড়িটা পরলে সত্যি তার বৌরে টিয়া পাখির মতো লাগবে। এসব ভাবতে ভাবতে সুরুজ মিয়া ঘরের কাছে চলে আসে আর ডাক দেয়- বৌ, দরোজা খোলো।

দুই.
তানিশা এবার ঈদে মাত্র উনিশটি থ্রি-পিস নিয়েছে! আর সাতটি শাড়ি! সবচেয়ে কম দামি শাড়ির দাম মাত্র সাঁইত্রিশ হাজার আটশ ঊনাশি টাকা! আরো কিছু কেনাকাটা করতে হবে। বাড়ির কাজের লোকদের জন্য কিছু কেনা হয়নি। এজন্য একদিন নিউমার্কেট যেতে হবে। নিউমার্কেট ওভারব্রিজের নিচে ভালো ভালো জামাকাপড় পাওয়া যায়। মারুফের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওদের সবার জন্য মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করা হবে। বাকি টাকা তানিশা রেখে দেবে। সবসময় ও এমনটাই করে।
তানিশার খুব রাগ হয় এই করোনার ওপর। করোনার জন্য দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে মার্কেট করতে যেতে পারে না। নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করে। মারুফকে বোকা বানানো খুব সহজ। ও কোনো ব্যাপারে তেমন ঘাঁটাঘাঁটি করে না। তানিশা যা বলবে সেটাই মারুফ বিশ্বাস করে। মারুফের মা-বাবা, বোনদের জন্য তানিশা সবসময় ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কেনাকাটা করে।
একবার তুরস্ক থেকে হোটেলের টি-প্যাক, কফি-প্যাক, হ্যান্ড লোশন, শ্যাম্পু নিয়ে এসেছিল। আর মার্কেটে গিয়ে বড় বড় শ্যাম্পু, লোশনের বোতল কিনে মারুফকে বলেছিল, তোমার বোনদের জন্য নিচ্ছি। মারুফ বৌকে কৃতজ্ঞতায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকায় ফিরে হোটেলের সেই ছোট ছোট প্যাকেট দিয়েছিল। মারুফের সংসারে অশান্তির ভয়ে ওর পরিবারের কেউ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না বা করেনি।
কোনো ঈদে মারুফের বাড়ির কেউ ওর বাসায় আসতে পারে না। একবার ঈদের দুদিন পর শাশুড়ি আর ননদরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এসেছিল। বাসি কিছু বিরিয়ানি আর হাঁসের মাংস ছিল। তাই খেতে দিয়েছিল।
তানিশার অভিনয়ের কাছে সিনেমার ভিলেনরাও ফেল মারে।

তিন.
হাটের বড় গরুটা কিনতে হবে। মামুন সাহেবের স্ত্রীর কড়া নির্দেশ। বড় গরুটা না কিনলে প্রতিবেশী ভাবিদের কাছে কি প্রেস্টিজ থাকবে? বড় গরু যদি না কেনা যায় তবে যেন তিনটা কেনা হয়।
মামুন সাহেব বৌয়ের কথামতো হাটের বড় গরুটা-ই কিনেছে। ১৫ লাখ টাকার গরু! মিসেস মামুন ফোন দিয়ে সবাইকে কুরবানির গরুর চেহারা আর দামের বর্ণনা করছে।
বাসায় বড় সাইজের দুটো ডিপ ফ্রিজ আছে তারপরও আরেকটা ডিপ ফ্রিজ আনা হয়েছে। করোনার সময় ঠিকঠাক বাজার করা যাবে না। ঈদের পর দিন ড্রাইভার, কাজের মেয়ে বাড়িতে যাবে। এই কুরবানির গোশত দিয়ে চলে যাবে কয়েক মাস।
ঈদের দিন সব গোশতের বেশিরভাগই ঠাঁই পায় নিজেদের ঘরের ফ্রিজে। যাদের প্রাপ্য সেই গরিব মানুষের ভাগ না রেখে সব…। ওইদিন মামুন সাহেবের শ্বশুরবাড়ি, শ্যালিকার বাড়ি, শালার শ্বশুর বাড়িতে গোশত দিয়ে ড্রাইভার মুহিত মিয়া ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই মামুন সাহেবের ভাই-বোনের বাসায় আর গোশত পাঠানো সম্ভব নয়! মামুন সাহেবের স্ত্রী কাচুমাচু মুখে স্বামীর কাছে বলেন। অথচ মামুন সাহেবের ভাইয়ের চাকরি নেই অনেকদিন।
এই করোনা অনেকের জীবনকেই করুণ করে দিয়ে গেছে। তারপরও অনেকেই লোক দেখানো কুরবানি করতে ব্যস্ত! অথচ নিজের ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেয় না। ভাই-বোনের বাড়িতে কুরবানির গোশতও পাঠাতে পারে না!
এসব নিয়ে মামুন সাহেবের কোনো মাথাব্যথা নেই। ডাইনিং টেবিলে বসে কষা গোশত খেতে খেতে মধুময় কণ্ঠে তিনি স্ত্রীকে বলেন, তোমার রান্নাটা সেই রকম স্বাদের হইছে।
:: লালবাগ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়