কাগজ ডেস্ক : পরকীয়ার জের নয়, চুমু খেয়ে ‘কোভিড বিধি ভাঙার’ অপরাধে ইস্তফা দিলেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে লেখা পদত্যাগপত্রে এ কথাই উল্লেখ করেন তিনি। কোভিড অতিমারির এ কঠিন সময়ে হ্যানকক ব্রিটেনের বাসিন্দাদের বারবার বলেছেন, মাস্ক পরুন, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজের বাড়ির লোক ছাড়া কাউকে আলিঙ্গন করবেন না। এ সময়ে অতি প্রচলিত ‘হাগ এন্ড কিস’ তিনি ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করেন, সংক্রমণের আশঙ্কায়। পরিস্থিতির একটু উন্নতি হওয়ায় গত মাসের ১৭ তারিখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুমতি দেন, এক বাড়িতে না থাকলেও আত্মীয়-বন্ধুকে আলিঙ্গন করা যাবে। তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অনেকেই।
কিন্তু সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে হঠাৎ দেখা গেল, তিনি তার সহকর্মী জিনা কোলাড্যাঞ্জেলোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছেন! গত শুক্রবার একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে হ্যানককের কয়েকটি ছবি প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমে উঁকি মেরে দেখছেন বাইরে কেউ আছেন কিনা। তার পরে টুক করে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। পরের ছবিগুলো হ্যানকক আর জিনার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের। নিজেদের ওয়েবসাইটে পুরো ভিডিওটি আপলোডও করে দিয়েছে ট্যাবলয়েডটি।
সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, ছবিগুলো ৬ মে তারিখের। আর পারস্পরিক দূরত্ববিধিতে কিছুটা হলেও ছাড় ঘোষণা করা হয় ১৭ মে।
অর্থাৎ, হ্যানকক যে করোনা-বিধি ভেঙেছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে বারবার পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছিলেন, তার এ আচরণে তাজ্জব ও ক্ষুব্ধ দেশের মানুষ।
কারণ তিনিই তো বলেছিলেন, কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যদি আলাদা বাড়িতে থাকেন, তা হলে দেখা হলেও নাতি-নাতনিকে তারা জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারবেন না। অথবা কারও প্রেমিক-প্রেমিকা যদি লিভ-ইন পার্টনার না হয়ে থাকেন, তাহলে শারীরিক সম্পর্কে আপাতত না জড়ানোই ভালো। এ রকম হাজারো বিধিনিষেধ আরোপ করে শেষে নিজেই কিনা এই কাণ্ড ঘটালেন! তা হলে কী বিধি মন্ত্রীদের জন্য এক রকম, আর সাধারণ মানুষের জন্য আর এক রকম? গত দুদিন ধরে এসব অভিযোগই ঘুরেছে ব্রিটেনবাসীর মুখে মুখে।
ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরপরই ‘কোভিড বিধি ভাঙার জন্য’ দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিলেন হ্যানকক। প্রধানমন্ত্রী জনসন তার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এখানেই এ আলোচনার ইতি টানা হোক। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন খোদ সরকারি এমপিরাই। প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিয়ে বললেন, এমন কাণ্ডের পরও যদি ম্যাট পদেই থেকে যান, তা হলে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হবে।
চাপের মুখে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে হ্যানকক বলেন, মহামারি মোকাবিলায় এনএইচএস কর্মীরা যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, সাধারণ মানুষ যেভাবে নানা কৃচ্ছসাধন করছেন, তার জন্য তাদের অভিনন্দন। আমার কোনো আচরণে যাতে ভুল বার্তা না যায়, তাই আমি পদত্যাগ করছি।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরামর্শদাতার পদ থেকে ইস্তফা দেন জিনাও। তিন সন্তানের বাবা ম্যাট এবং তিন সন্তানের মা জিনা। অক্সফোর্ডে পড়াকালীন তাদের আলাপ শুরু হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।