স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মাদক ঠেকাতে চুক্তি হয়েছে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে

আগের সংবাদ

আতঙ্কে মগবাজারের বাসিন্দারা

পরের সংবাদ

এক হাতে নয়জনের আহার জোগান প্রতিবন্ধী অরুণ : সরকারের সহযোগিতা কামনা

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আবুল কালাম আজাদ, পাবনা থেকে : মাত্র একটি হাত দিয়ে বাঁশ শিল্পের কাজ করে ৯ জনের সংসার চালাচ্ছেন পাবনা চাটমোহরের প্রতিবন্ধী অরুণ দাশ (৪৯)। অভাবে থাকলেও কখনো কারো কাছে মাথানত করেননি। পুঁজির অভাবে অনেক সময় কাজ বন্ধ থাকে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার অমৃতকুণ্ডা গ্রামের প্রয়াত নরেণ দাশের ছেলে অরুণ দাশ। ১৭ বছর বয়সেই এলাকার একটি রাইস মিলে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনায় তার ডান হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পর প্রায় ৩ বছর নির্বাক হয়ে বসে থাকতেন তিনি। এরপর বাবা-মায়ের পরামর্শে স্বল্প পুঁজি নিয়ে এক হাত দিয়েই বাঁশ শিল্পের কাজ শুরু করেন। মুলাডুলির ললিতা রানীর সঙ্গে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি, টুপড়ি তৈরি করে সংসার চালাতেন। একসময় সংসার বড় হয়ে যায়। ছয় মেয়ে ও অসুস্থ মাসহ ৯ জন সদস্য তার সংসারে। সীমিত উপার্জন দিয়েই বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অরুণ।
সংসার চালাতে গিয়ে অভাব-অনটনের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তাদের। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এই ঋণের কিস্তির টাকা তাকেই পরিশোধ করতে হয়। অর্থের অভাবে ছোট মেয়েদের ঠিকমতো লেখাপড়ার খরচ ও জামা-কাপড় দিতে পারেন না। \
তারপরও কারো কাছে কখনো হাত পাতেননি অরুণ দাশ। ব্যবসার পুঁজি না থাকায় ধার করে দুটি বাঁশ কিনে দিনে ১০টি ঝুপড়ি-টুপড়ি তৈরি করেন। পাইকারদের কাছে সেই ১০টি ঝুপড়ি বিক্রি করেন ৭০০ টাকায়। এতে বাঁশের দাম ৩০০ টাকা বাদ দিলে তার আয় থাকে ৪০০ টাকা, কখনো তারও কম। ২৭ বছর ধরে এ কাজ করেই দৈন্যদশার মধ্য দিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন অরুণ দাশ। সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যবসার পুঁজি ও একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু শান্তি থাকতে পারতেন বলে মনে করেন অরুণ।
তার মেয়ে পূজা দাশ বলে, বাবার এক হাত নাই। তিনি ভালোভাবে কাজ করতে পারেন না। তাই তাদের সংসার চলে কষ্টের মধ্য দিয়ে। জীবনে কখনো তারা শখ করে একটা জামা কাপড় বা অন্য কিছু কিনতে পারেননি।
অরুণ দাশের স্ত্রী ললিতা রানী জানান, স্বামীর এক হাত নেই। এজন্য সে সব সময় তার সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করেন। সরকার সহযোগিতা করলে তারা বেঁচে যেতেন বলে জানান ললিতা।
অরুণ দাশ বলেন, ‘ঠিকমতো বাচ্চাদের দুডে ভাতও দিবের পারিনে। যে জাগায় বসে কাম হরি সে জাগা তার লয়, অন্য মানষির। তারা নানা কতা কয়। খুবই কষ্টে তাকে চলতে হয়।’
প্রতিবেশী মিতুন দাশ বলেন, অরুণের এক হাত না থাকায় সে খুবই কষ্টে সংসার চালায়। সরকার তাকে একটু অনুদান দিলে বেচারা বাঁচত।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম জানান, তিনি অরুণের বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অরুণ দাশকে কিছুটা সহযোগিতা করেছেন। তারপরও ওই এলাকায় খাস জমি পেলে তার জন্য একটি থাকার ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। তার জন্য কিছু ব্যবসার পুঁজির চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়