শেখ হাসিনার পতনের নেপথ্যে যে চারজন, জানা গেল
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মূলে চারজন রয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বার্তায় জানিয়েছে আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি গত এক সপ্তাহে দলটির আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতার কথা বলতে সক্ষম হয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ‘হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’ তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আপা (হাসিনা) আমাদের ছেড়ে গেছেন।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের একজন দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের কথা শোনেননি।’ এই গোষ্ঠীকে ‘গ্যাং অব ফোর’ বলে আখ্যায়িত করেন নেতাদের একজন। তিনি বলেন, গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।
এই চার নেতা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘চারজনের এই দল হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার অন্ধবিশ্বাস ছিল। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়েছেন।’
আরো পড়ুন : আয়নাঘর, সাত খুন, শাপলা চত্বরে হত্যা: রিমান্ডে যেসব তথ্য দিলেন জিয়াউল
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। বিএনপি নির্বাচনে গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানো যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।
তারা জানান, ৫ আগস্টের ঘটনাবলি তারা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে এটা জানতে পারি।’
এভাবে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলেছে। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। অগ্নিসংযোগ, লুট ও ভাঙচুর করা হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
আরো পড়ুন : রিমান্ডে প্রশ্নবাণে জর্জরিত আনিসুল দিলেন বিস্ফোরক তথ্য
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আমরা একটা সেনাপ্রধান যখন বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সে সময় শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই। আরেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।’
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের নেতাদের নিশানা করে, কারাগারে পাঠায়, মারধর করে, ভয়ভীতি দেখায় ও হয়রানি করে। কিন্তু পরে হঠাৎই পরিস্থিতি উল্টে যায়।
সাম্প্রতিকতম ঘটনার খানিকটা পেছনে তাকালে দেখা যাবে, ঘটনাপ্রবাহে কেউ কেউ হাসিনা সরকারের বিশেষ করে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে ৩–৪ আগস্ট ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভাঙেন। সেদিনই সরকারের পতন ঘটে।