×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারি মাজেদের আসল পরিচয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫১ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় খুনিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ। অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে তিনিও বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। এছাড়া জেলহত্যার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। পাঁচত্তরের পরে বিভিন্ন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলে তিনি আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপন করেন। দেড় যুগের বেশি সময় ছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যার পর অন্যসব খুনির মতোই ‘পুরস্কৃত‘ হন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন চাকরিতে বহাল তবিয়তেই ছিলেন। কিন্তু ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালে এই চাঞ্চল্যকর মামলার রায় হওয়ার পর থেকেই ফেরার হন খুনি মাজেদ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এই পলাতক আসামিকে গত সোমবার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ মধ্যরাতে তার ফাঁসি কার‌্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর কিছুসময় পরেই কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে খুনি মাজেদের ফাঁসি কার‌্যকর করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। কে এই খুনি মাজেদ? কী তার পরিচয়? জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা গ্রামের মরহুম আলী মিয়া চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মাজেদ। তিনি চার কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের জনক।তার স্ত্রী সালেহা বেগম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা। সেদিন ঘাতকদের নির্মম বুলেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সহধর্মিনী ফজিলাতুন নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাব-ইন্সপেক্টর ছিদ্দিকুর রহমান, পেট্রোল ডিউটির সৈনিক সামছুল হক ও রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলের প্রাণ কেড়ে নেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্য খুনিদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন মাজেদ বঙ্গভবনে অবস্থান নেন। কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে মাজেদ তখন রেডিও স্টেশন নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তিনি জেলখানায় জাতীয় চারনেতা হত্যাকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। জাতীয় চারনেতাকে হত্যার দায়েও মাজেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে দেশ ত্যাগের আগ পর্যন্ত অন্য খুনিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে ‘বিভিন্ন দায়িত্ব’ পালন করে মাজেদ। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় চলে যান। তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই তারা সেসময় নিরাপদে দেশ ছেড়ে যান বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। মাজেদ সেসময় লিবিয়ায় তিন মাস ছিলেন। এরপর ‘পুরস্কার হিসেবে’ তাকেসহ অন্য অনেককে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। মাজেদকে চাকরি দিয়ে পাঠানো হয় সেনেগালের বাংলাদেশ দূতাবাসে। ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ আবদুল মাজেদকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) চাকরি দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে উপসচিব মর্যাদায় তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। পরে তাকে তখনকার যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ‘ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ শাখার পরিচালক করা হয়। এরপর দেওয়া হয় তখনকার জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব। ইতিহাসের নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’ জারি করে এর বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেন। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’ বাতিল করে হত্যাকাণ্ডটির বিচারের পথ সুগম করে। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রিসিপশনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ১০ (১০) ৯৬)। সেসময় আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে যান আবদুল মাজেদ। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মাজেদ এ সময় থাইল্যান্ড, সেনেগাল, ভারত, পাকিস্তান, লিবিয়া ছাড়া জিম্বাবুয়েও কিছুদিন অবস্থান করেন। তবে দীর্ঘ সময় তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করেন বলে আইনশৃঙ্খলা জানিয়েছে। আবদুল মাজেদ হলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় পলাতক ছয় খুনির মধ্যে একজন। পলাতক বাকি পাঁচ খুনি হলেন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App