×

আন্তর্জাতিক

নিউইয়র্কে করোনার বিস্তার এতো কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০, ০৩:৩০ পিএম

নিউইয়র্কে করোনার বিস্তার এতো কেন?

ছবি: ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর

বিশ্বজুড়ে আমেরিকার নিউইয়র্কই এখন করোনা মহামারির কেন্দ্র। শনিবার (১১ এপ্রিল) সকালের তথ্য অনুযায়ী, এক লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'। মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ৮৪৪ জন ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকাংশের বাস।

নিউইয়র্ক নগরীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আতঙ্ক আর নীরবতা এখন নগরের সর্বত্র।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালের তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৬২৬ জন। স্পেনে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ২২২ জন। সেই হিসাবে স্পেনের চেয়েও নিউইয়র্কে ৬ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এই ভাইরাসে। আর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৫। কেবল আক্রান্তের সংখ্যায় নয়, মৃতের সংখ্যাতেও নিউইয়র্ক এগিয়ে। ১০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মোট ১৬ হাজার ৬৯৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সাত হাজার ৬৭ জনই নিউইয়র্কের। নিউইয়র্কের তুলনায় দেশ হিসেবে কেবল ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স আর যুক্তরাজ্যই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যায় এগিয়ে। কিন্তু নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস এতো বেশি বিস্তার করলো কীভাবে?

জনসংখ্যার ঘনত্ব:

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহর হলো নিউইয়র্ক। ২০১০ সালর জরিপ অনুযায়ী, শহরটিতে প্রতি বর্গমাইলে ২৭ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। জনসংখ্যার এই ঘনত্ব চিকাগো ও ফিলাডেলফিকার দ্বিগুণ ও লস অ্যাঞ্জেলসের চেয়ে তিনগুণ বেশি। নিউইয়র্কের অধিবাসীরা একটি অ্যাপার্টমেন্টে অনেকজন মিলে থাকে। লিফট-সিঁড়িতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের ঘনঘন দেখা হয়। অনেকেই আবার ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে না, পাবলিক বাসে চলাচল করে।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, আমরা গাদাগাদি করে থাকতে অভ্যস্ত। লাইন ধরা, একে অন্যের সংস্পর্শে আমাদের আসতেই হয়। আমাদেরকে আলাদা করা কঠিন।

নগরটির ধারণক্ষমতার বাইরে এখন ৮০ লাখের বেশি মানুষ নিউইয়র্কে বাস করছে। এর ফলে সংক্রমণ বাড়ছে, মৃত্যু বাড়ছে।

বেশি পরীক্ষার হার:

নিউইয়র্কে রয়েছে অত্যাধুনিক হাসপাতাল-ল্যাব রয়েছে। গত মার্চ থেকে নগরটির সরকারি-বেসরকারি ২৮টি হাসপাতাল মিলে করোনা পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। এরইমধ্যে এক লাখেরও বেশি জন করোনা পরীক্ষা করেছে। দেশটির প্রায় ২৫ শতাংশ করোনা রোগী কেবল নিউইয়র্ক থেকেই ধরা পড়ে। দেশটির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আপনি যতো বেশি করোনা পরীক্ষা করবেন, ততো বেশি আপনি আক্রান্তদের আলাদা করতে পারবেন। এতে সংক্রমণের মাত্রা কমবে।

দ্রুত সাড়াদানে ধীরগতি:

নিউইয়র্কে করোনার প্রাদুর্ভাবের সূচনাকালে সংবাদ সম্মেলনগুলোকে পাত্তা দেয়া হয়নি। স্কুল-কলেজ ও সামাজিক গণজমায়েত দেরিতে বন্ধ করা হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব দেশটিতে এখনও ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। ফলে এলাকাগুলোতে আক্রান্ত বাড়ছে। গত ২ মার্চে নগরটিতে প্রথম করোনা শনাক্ত করা হয়। কিন্তু এর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হয়নি। এর নয় দিন পর (১১ মার্চ) দেশটিতে ২১৬ আর ১২ ‍দিন পর (১৪ মার্চ) ৬১৩ জনকে করোনায় শনাক্ত করা হয়।

করোনার এতো দ্রুত বিস্তারের পরেও নগরটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় ১৮ মার্চ। ততোক্ষণে সেখানে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল দুই হাজার ৩০০ জনে। এরপর নগরটিতে ‘স্টে হোম’ (বাসায় থাকুন) নির্দেশনা দেয়া হয় ২২ মার্চে; যখন আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছিল।

অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় একইরকম কাণ্ড করেছিলেন নগরটির সরকার। গত ১৬ মার্চ নগরবাসীদের ঘরে থাকার আহবান জানানো হয়। সেসময় নগরটিজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০০ জন। আর ১৯ মার্চ নগর সরকার বাসায় থাকার আইন জারি করে। তখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯০০ জন।

নগর কর্তৃপক্ষরা বলেন, করোনা তার আপনগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকী এটা অল্পদিনে ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে। এটা থেকে শারীরিক দূরত্ব ও অবরুদ্ধ থাকা খুবই প্রয়োজন। আক্রান্ত বেড়ে গেলে হাসপাতাল, আইসিইউ সঙ্কট দেখা দেয়। আর রোগী সীমিত থাকলে হাসপাতাল সুবিধা ভালো দেয়া যায়।

ভ্রমণচারিতা:

নিউইয়র্ক বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি দশর্নার্থী যান নিউইয়র্কে। নিউইয়র্ক সরকার কুমো বলেন, সক্রমিত দেশ থেকে অনেকেই এখানে বেড়াতে আসায় এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

কুমো বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা চীনে, ইতালিতে এবং কোরিয়া থেকে এখানে এসেছিলেন। আমার মনে হয়, এখানে ভাইরাস অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি, চীন ভ্রমণে কড়াকড়ি নিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ১১ মার্চ ইতালি ও ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে।

করেনা সংকটের এই সময়ে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, ছয় মাস আগেও এই রোগের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। অথচ এত অল্প সময়ে এতো বাজেভাবে এই রোগটি এসে হামলে পড়েছে, যার কোনো নজির আগে ছিল না। তবে আমাদের হেরে গেলে চলবে না। আমাদের এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সেই সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App