×

পুরনো খবর

করোনার যেসব গুজব কখনই বিশ্বাস করবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০, ০৪:১৬ পিএম

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের ডালপালা মেলছে প্রতিদিন। নানারকম ভুল তথ্যও আসছে বিভিন্ন উৎস থেকে। যা রোগ প্রতিরোধের অন্তরায় হয়ে উঠছে। ভোরের কাগজ লাইভের পাঠকের জন্য তাই কিছু অতিপরিচিত ভুল ধারণা ও গুজবের বিষয় তুলে ধরা হলো। যা বিশ্বাস করার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।
কেবল বৃদ্ধ ও কম বয়সীরাই করোনা ঝুঁকিতে
না, এই কথাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত নয়। করোনা যেকোনো বয়সী মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে যেকোনো ব্যক্তি, তিনি বয়স্ক কিংবা স্বল্পবয়সী যে-ই হোন না কেন, তার আগে থেকেই যদি কোনো রোগ থাকে, যেমন- ডায়াবেটিস কিংবা অ্যাজমা, তাহলে তার করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হবার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাছাড়া চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স্ক মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তরুণদের চেয়ে কম। এ কারণেই এমন ভুল তথ্যের ওপর বিশ্বাস বাড়তে পারে।
শিশুরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয় না
আগেই বলা হয়েছে যেকোনো বয়সের মানুষই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারেন। তাই শিশুরা আক্রান্ত হয় না- এমন তথ্য সঠিক নয়। যদিও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তদের অধিকাংশই বয়স্ক। তবে কোনোভাবেই এটা সত্য নয় যে বাচ্চারা করোনায় আক্রান্ত হয় না। তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু
এই কথার ওপর বিশ্বাসের মহামারি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অথচ এটা একেবারেই মিথ্যা। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়াল্ডোমিটারের ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান দেখেও যে কেউ বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পরও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ত্বকে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করলে করোনা মরে যাবে
এটা পুরোপুরিই ভুয়া কথা। বরং ত্বকে অ্যালকোহল কিংবা ক্লোরিনের প্রয়োগ ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি তা চোখে কিংবা মুখে যায়। অ্যালকোহল বা ক্লোরিন শরীরের ভেতরে থাকা ভাইরাসের কিছুই করতে পারে না।
কুকুর-বিড়ালের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা
এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ আছে সামান্যই। কিছুদিন আগে অবশ্য হংকংয়ের এক লোক কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তার কুকুরটিও এতে আক্রান্ত হয়। তবে সেই কুকুরটির মাঝে ভাইরাসের কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। বিজ্ঞানীরাও এই ভাইরাসটি ব্যাপকাকারে বিস্তার লাভের জন্য মানুষকেই দায়ী করছেন।
ফেস মাস্ক ব্যবহারে নিশ্চিত সুরক্ষা
স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার করা মাস্ক ভালো মানের হয়ে থাকে। যা তাদের মুখের চারদিকে বেশ শক্তভাবেই আটকে থাকে। ফলে রোগজীবাণু থেকে সেটা তাদের চমৎকার সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে ডিসপোজেবল ফেসমাস্ক এই সুরক্ষা দিতে অক্ষম। এগুলো মুখের চারদিকে শক্তভাবে আটকে না থাকায় নাকে-মুখে সহজেই তরলের ক্ষুদ্র কণা প্রবেশ করতে পারে। ক্ষুদ্রাকৃতির ভাইরাল পার্টিকেলও চলে যেতে পারে। তাই ফেসমাস্ক সুরক্ষা পুরোপুরি দিতে পারে না। তবে হ্যাঁ, শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত অসুস্থ রোগীদের জন্য মাস্ক ব্যবহারই সুফল দেয়।
থার্মাল স্ক্যানারে করোনা শনাক্ত সম্ভব
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কারো জ্বর হয়েছে কি না সেটা বোঝা যায়। সিজনাল ফ্লুর কারণেও একজন ব্যক্তির জ্বর হতে পারে। এখানে লক্ষ্যণীয়, একজন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হবার ২-১০ দিন পরে তার দেহে উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। এর মানে দাঁড়ায়, জ্বর হবার আগে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক শারীরিক তাপমাত্রাতেই থাকবেন, যদিও তিনি ততক্ষণে করোনা আক্রান্ত। আর এই সময় থার্মাল স্ক্যানার সেটা কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারবে না।
পার্সেলের মাধ্যমে করোনা ছড়ায়
বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা বলে, এই ভাইরাস কোনো চিঠি বা অন্য কোনো মালপত্রের ওপর বেঁচে থাকতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের মতে, কোনো পণ্য যদি বেশ কিছুদিন কিংবা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে যাত্রাপথে থেকে অবশেষে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়, তবে সেটা কোনো করোনা আক্রান্ত অঞ্চল থেকে এলেও এর মাধ্যমে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা খুবই কম।
টোটকার মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকার
কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর এমন কোনো ঘরোয়া বা টোটকা ব্যবস্থার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিটামিন সি গ্রহণ, এসেনশিয়াল ওয়েল, সিলভার কলয়েড, তিলের তেল, রসুন, প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর পানি পান করার মতো বিষয়গুলো করোনার বিরুদ্ধে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। এর চেয়ে বরং নিয়মিত হাত পরিষ্কার করুন এবং কভিড-১৯ এ আক্রান্ত মানুষ থাকতে পারে এমন স্থান এড়িয়ে চলুন।
তাপমাত্রা বাড়লে ভাইরাসটি মরে যাবে
এই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। কোল্ড ও ফ্লু ভাইরাসের মতো কিছু ভাইরাস শীতকালে বেশি সহজে ছড়াতে পারে। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেগুলোর কার্যক্ষমতা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন যে তাপমাত্রার পরিবর্তন করোনার পরিবর্তন আনতে চলেছে। তাই এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিকতা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App