×

মুক্তচিন্তা

করোনায় তামাক কোম্পানির কার্যক্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩৯ পিএম

ধূমপান করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ধূমপায়ী বা তামাক সেবনকারীরা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যাসহ জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে বিধায় ঈঙঠওউ-১৯ বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির ঝুঁকিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। কারণ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিগারেট সেবনের হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে (বা সিগারেটের ফিল্টারে) লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি যা কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তদুপরি ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পায় বিধায়, সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। সম্প্রতি চীনে এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত প্রতি ১০০ জন পুরুষদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২ দশমিক ৮ জনের। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এই হার অনেকটাই কম। প্রতি ১০০ জন ঈঙঠওউ-১৯ আক্রান্তের মধ্যে মারা যায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ। সামঞ্জস্যপূর্ণ চিত্র দেখা যায় ইতালিতেও। চীনের স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি বলছে, ঈঙঠওউ-১৯-এ মৃতদের ৭০ শতাংশই পুরুষ। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে ধূমপানকেই অন্যতম বড় কারণ মনে করছেন। উল্লেখ্য, চীন ও ইতালিতে পুরুষদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার বেশি। ইতোমধ্যে চীন, ইতালি, ফ্রান্সে কোবিট-১৯ সংক্রমণে মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ধূমপায়ী ছিল বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, যা সারা বিশ্বের জন্য বড় সতর্কবার্তা। সরকারি তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি, তবে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি তামাক সেবনকারীদেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭-এ দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩ শতাংশ) মানুষ কোনো না কোনো তামাক ব্যবহার করে। ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ বা ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী ধূমপান করে। এতে দেখা যায়, চলমান করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশের কয়েক কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। সরাসরি ধূমপায়ী বা তামাকসেবীর চেয়েও বেশি মানুষ বাসা, কর্মস্থল, গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। তামাক নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসনীয়। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক কোম্পানির পক্ষে দেয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত চলমান করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াবে ও জনস্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক হবে। তামাক কোম্পানি ও তাদের দোসরদের এ ধরনের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রত্যয় বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। দেশের সচেতন মহল শিল্প মন্ত্রণালয়ের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানালেও তামাক কোম্পানির চলমান কার্যক্রমে তার কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জনস্বার্থকে তুচ্ছ করে খোদ সরকারেরই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ যখন মৃত্যুবিপণনকারী কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে চলে, তখন মনে হয় ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।’ এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। করোনা প্রতিরোধ করার জন্য ইমিউন সিস্টেম বা শরীরে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ধূমপান ও সব ধরনের তামাক শরীরের গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা নষ্ট করে বিধায় এসব পণ্য সেবন হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশা করি, শিল্প মন্ত্রণালয় জারিকৃত পত্র বাতিল করে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের সর্বাত্মক কর্মসূচি জোরদার করবে। মো. আবু রায়হান : উন্নয়ন কর্মী, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App