×

জাতীয়

সমন্বয়ে ঘাটতি এখনো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৮ এএম

ঢাকা শহরসহ দেশের ২৩ জেলায় এবং ঢাকার ৪৬ এলাকায় ইতোমধ্যে বিস্তার ঘটিয়েছে কোভিড-১৯। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। শতকরা হিসাবে এ হার ৯ শতাংশেরও বেশি। যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত বিশে^র অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ দৃশ্যমান হলেও সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। বাড়ছে কোভিড-১৯ বিস্তারের ঝুঁকি। ৬ এপ্রিল এক বৈঠকে এই সমন্বয়হীনতার কথাই স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ওই বৈঠকে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান হিসেবে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, কখন কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে তা আমার জানা নেই। কখন গার্মেন্টস কারখানা খোলা হবে, কখন মসজিদে নামাজ হবে, কীভাবে হবে, কখন রাস্তা খুলে দেয়া হবে কিংবা বন্ধ করে দেয়া হবে এ বিষয়ে আমরা জানি না। স্বাস্থ্য বিষয় বাদে কোনো বিষয়েই আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয় না। কমিটির প্রধান হিসেবে আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কিন্তু তাদের প্রশ্নের সদ্যুত্তর দিতে পারি না। অভিযোগ আছে, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল এক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। তিনটি উপযুক্ত ল্যাব ও জনবল থাকা সত্তে¡ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশসহ (আইসিডিডিআরবি) পরীক্ষা করতে সক্ষম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হয়নি। আত্মরক্ষার সরঞ্জাম (পিপিই) এবং বার্তা পৌঁছায়নি

চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে। ফলে চিকিৎসকরা সেবা দিতে আগ্রহী হননি। এর ফল স্বরূপ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে সাধারণ রোগীদের। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার চিকিৎসকদের প্রতি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে চিকিৎসক মহল মর্মাহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা অভিযোগ করছেন, সংকট শুধু আত্মরক্ষার সরঞ্জামের (পিপিই) ছিল না। করোনাযুদ্ধের কৌশল নির্ধারণে চিকিৎসকদের কোনো ভ‚মিকা রাখারই সুযোগ দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, চিকিৎসকদের বড় দুটি সংগঠনের নেতারা কেউই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সত্য তথ্য উপস্থাপন করেননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। দেশে এই পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ পিপিই মজুদ আছে, কতটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) আছে সে তথ্যও মন্ত্রীর কাছে ছিল না। তিনি নিজের মতো করে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক দুটো ভালো পিপিইর সঙ্গে বাকি আটটা দিয়েছেন নি¤œ মানের পিপিই। এন-৯৫ মাস্কের বদলে দিয়েছেন সার্জিক্যাল মাস্ক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আদিষ্ট হয়ে শুধু সব অঙ্কের যোগফল ঘোষণা করেছেন। কোনো ধরনের পিপিই কয়টা বিতরণ করা হয়েছে, মজুদ আছে সে তথ্যও ঠিক মতো বলা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপকদের অনেকেই প্রশাসকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলে আসছিলেন- সব ঠিক। সব ঠিক। চিকিৎসক নেতারও এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অবশ্যই আমাদের ভাবিয়ে তোলে। তবে সামনের দিনগুলোকে আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ছুটির পর যখন মানুষজন ঢাকায় আসা শুরু করবে সেক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করে তিনি বলেন, এমন একটি কমিটি গঠন করা দরকার যারা ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয় শুধু পর্যালোচনাই করবে না, যখন যে ধরনের উদ্যোগ দরকার সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সবাই মিলে যদি আমরা কাজ না করি তবে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, আমাদের যে মৃত্যুহার, তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ। এখন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সুষম, শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। যেসব জেলা ও এলাকায় করোনার বিস্তার : ঢাকা শহরসহ দেশের ২৩ জেলায় ছড়িয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১২৩ জন, ঢাকা জেলায় ৫ জন। নারায়ণগঞ্জে ৪৬ জন। মাদারীপুরে ১১ জন। গাইবান্ধায় ৫ জন। তিনজন করে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম ও মানিকগঞ্জে। দুজন করে ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে জামালপুর, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীতে। একজন করে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নীলফামারী, রাজবাড়ী, রংপুর, শরীয়তপুর, সিলেট ও শেরপুর জেলায়। ঢাকার ৪৬ এলাকা : ধানমন্ডি, ওয়ারি, বাসাবোতে ৯ জন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। ৬ জন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে মোহাম্মদপুর, উত্তরটোলারবাগ ও গুলশানে। ৫ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে লালবাগ, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায়। টোলার বাগে ৪ জন, ৩ জন করে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে, বসুন্ধরা, ঝিগাতলা ও সোয়ারিঘাটে। দুজন করে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে, ইসলামপুর, পুরানা পল্টন, তেজগাঁও, গ্রিনরোড, চকবাজার, বাবুবাজার, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১ ও শাহআলী এলাকায়। আর একজন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে আদাবর, সেন্ট্রাল রোড, বুয়েট এলাকা, বসিলা, উর্দুরোড, নারিন্দা, ল²ীবাজার, মগবাজার, বেইলিরোড, ইস্কাটন, বংশাল, কোতোয়ালি, হাজারিবাগ, রামপুরা, শাহজাহানপুর, বাড্ডা, নিকুঞ্জ, আশকোনা, মহাখালী, মিরপুর-১৩ ও কাজীপাড়ায়। মৃত্যু বেড়ে ২০, আক্রান্ত ২১৮ : গতকাল বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ভাইরাসবিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে ৫৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে আরো ৩ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছরের ৫ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৭ জন এবং ষাটোর্ধ্ব আছেন ১০ জন। মোট আক্রান্ত ৫৪ জনের মধ্যে ঢাকা শহরের ৩৯ জন, ঢাকার অদূরবর্তী এলাকায় একজন এবং বাকিরা ঢাকা শহরের বাইরে শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের ৩৩ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৮১ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৬৩টি নমুনা ঢাকায় এবং ৪২৫টি নমুনা ঢাকার বাইরের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App