×

স্বাস্থ্য

চিকিৎসা সেবা মিলছে না হাসপাতালে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ০৯:২৪ এএম

দেশে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি যত দৃশ্যমান হচ্ছে ততই বাড়ছে আতঙ্ক। সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশিতেও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন মানুষ। এসব অসুখে অন্য সময় হেলাফেলা করলেও এখন সবাই বেশ সচেতন। তাই ছুটছেন হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও মিলছে না চিকিৎসা। শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগে যারা ভুগছেন তাদের দুশ্চিন্তা আরো বেশি। তবে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, সরকারি প্রতিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে আলাদা করে খোলা হয়েছে ‘ফ্লু কর্নার’। সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই সেবা দেয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে নাসির উদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোর্শেদ রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কিছু হাসপাতালে জরুরি বিভাগেও এই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুসারে করোনা ভাইরাসের এখন পর্যন্ত যে গতিপ্রকৃতি আছে তাতে দেখা যাচ্ছে মোট আক্রান্তের ৮০ শতাংশের হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। কেবল ২০ শতাংশের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। আর মোট আক্রান্তের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হচ্ছে। তারা এও বলছেন, দেশে হাসপাতালগুলোতে যে প্রস্তুতি আছে তা আনুপাতিক হারে ঠিক আছে। কিন্তু সামনে পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে যত শঙ্কা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ইতোমধ্যে ১২টি হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, শেখ রাসেল

গ্যাস্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠি মাতৃসদন হাসপাতাল, মহানগর হাসপাতাল এবং বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব হাসপাতাল করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য সরকারকে হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে রিজেন্ট গ্রুপের দুটি (উত্তরা ও মিরপুর-১২), সাজেদা ফাউন্ডেশনের একটি। ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে একটি করে চারটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, চারদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে। কিন্তু তাদের আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সচেতন হওয়াটা জরুরি। জনগণের সুবিধার জন্য রাজধানীসহ সারাদেশের কয়েকটি হাসপাতাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে এখন মানুষ বেশ আতঙ্কিত। বিশেষায়িত করে প্রস্তুত রাখা ওই সব হাসপাতালে আক্রান্তরা গেলে তাদের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হবে। সেখানে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার আরো হাসপাতাল প্রস্তুত করছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, সাধারণ জ্বর-সর্দি নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত এ কথা সত্য। তবে সবাই যে নতুন এই ভাইরাসে সংক্রমিত তা তো নয়। কিন্তু মানুষ এতটাই আতঙ্কিত যে এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ওই ব্যক্তি এবং তার আশপাশের মানুষ ধরে নিচ্ছেন তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত। ফলে মানুষ হাসপাতালে ছুটছেন। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হট লাইন নম্বরে যোগাযোগ করে হাসপাতালে এলে আক্রান্ত এবং চিকিৎসক উভয়েরই সুবিধা হয়।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা হয়তো ঘটছে। তবে তা সব ক্ষেত্রে নয়। আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। স্বাস্থ্যসেবা যারা দেন তারাও মানুষ। কিছু বোঝার ভুল থাকতে পারে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই কোনো তথ্যই তারা সহজভাবে নিতে পারছেন না। অতি বয়স্ক ব্যক্তি ও যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে তাদের খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ আমরা দিচ্ছি।

গুরুতর অসুস্থদের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ বিএসএমএমইউর : করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে যাদের আউটডোরভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব তাদের সেভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আবাসিক সার্জন ও আবাসিক চিকিৎসকদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এই নির্দেশ দেয়া হয়। অফিস আদেশে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের জন্য কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্তসংখ্যক পারসোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছে।

নতুন আক্রান্ত ৩, বাড়ি ফিরেছেন দুজন : রবিবার (২২ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে নতুন করে আরো তিনজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। যাদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং একজন পুরনো এক রোগীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৭। এর মধ্যে মোট পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। গতকাল দুজন বাড়ি ফিরেছেন। এর আগে প্রথম আক্রান্ত তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃতের সংখ্যা দুই। বিকালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৬৫ জনসহ এ পর্যন্ত ৫৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর হটলাইনে কল এসেছে তিন হাজার ৮১২টি। এর মধ্যে তিন হাজার ৭২৫টি কল কোভিড-১৯ সম্পর্কিত। এদিকে মিরপুরের ৭৩ বছর বয়সী এক বাসিন্দা একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সিলেটে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাজ্যফেরত এক নারী মারা যান। ওই নারীর মুখের লালাসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানানো হয়।

চিকিৎসক-রোগীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের নির্দেশ হাইকোর্টের : করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ ও সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে করোনায় প্রতিরোধে কী কী উপকরণের প্রয়োজন রয়েছে তা নির্ধারণ করতে কমিটি গঠন এবং ওই কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করারও নির্দেশ দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App